জে.জাহেদ, চট্টগ্রাম : এই তিন জনের হাতেই জিম্মি হয়ে পড়েছে কর্ণফুলীর ভূমি অফিস। এরা হলেন-শাকিল আহমেদ, মোহাম্মদ ইউসুফ ও মোহাম্মদ আইয়ুব। অভিযোগ রয়েছে, এরা চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলা ভূমি অফিসে কর্মকর্তাদের কক্ষে চেয়ার-টেবিল পেতে গ্রাহকদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। উপজেলার অনেকেই বলেন, ‘এদের কেউ নাকি লাখপতি আবার কেউ কোটিপতি। তবে তিনজনেই তা অস্বীকার করেন।

আরো অভিযোগ তাদের কারণেই নাকি কাগজপত্রে স্বাক্ষরের জন্য সেবাপ্রার্থীদের গুনতে হয় নগদ টাকা। যদিও এরা এক সময় আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে ভূমি অফিসে নিয়োগ পেয়েছিলেন। পরে মেয়াদ শেষ হলে তা বাতিল হয়ে যায়। জেলা প্রশাসনের রাজস্ব শাখা তাদের ছেড়ে দিয়েছেন বহু আগেই। কিন্তু তারা অফিস ছাড়েননি। কারণ ভূমি অফিস তাদের কাছে মধুর হাঁড়ি।

আবার সবাই বলে থাকেন কর্ণফুলী উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) অফিসে ওরাই রাজা। ওরাই নিয়ন্ত্রক। অফিসের কোন কর্মকর্তা কর্মচারী নয়, সব সেবা নিয়ন্ত্রণ করছেন এই তিন ব্যক্তি। অনুসন্ধানে এমনই তথ্য জানা গেছে, বিগত সময়ে সকল এসিল্যান্ডরাই তাদের আশ্রয় প্রশ্রয়দাতা ছিলেন।

কর্ণফুলী উপজেলা ভূমি অফিসে গ্রাহকদের সেবায় কানুনগো, সার্ভেয়ার, অফিস সহকারি ও চেইনম্যান এবং ইউনিয়ন ভূমি অফিস গুলোতে সহকারী কর্মকর্তা, ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হলেও তাদের হাতে নেই কোন অফিসের নিয়ন্ত্রণ। আর সব ধরনের সেবাই সম্পন্ন করছেন ওরা তিনজন কিংবা গুটিকয়েক দালালচক্র। অফিসের গুরুত্বপূর্ণ নথি, ফাইলপত্র সবই থাকছে দালালদের নিয়ন্ত্রণে। এমনকি রেকর্ড রুমের সব গুরুত্বপূর্ণ নথিই তাদের দখলে। ওরা দিনেও কাজ করেন আবার রাতেও। ভূমি অফিসে বসানো সিসিটিভি ফুটেজ দেখলে সব প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে বলে নানা জনের অভিযোগ।

ভূমি অফিসে টাঙানো তথ্য বলছে, নামজারি করতে সরকারি খরচ লাগে মাত্র ১ হাজার ১৫০ টাকা। সময় লাগে ৪৫ দিন। কিন্তু দালালরা প্রতি নামজারিতে দাবি করেন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। ১২০ টাকার খাজনা-খারিজের জন্য গুনতে হয় হাজার হাজার টাকা। কর্ণফুলীর পাঁচ ইউনিয়নের তহশিলদার অফিসেও চলছে নানা অনিয়ম আর ঘুষ বাণিজ্য।

ওদিকে, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাজমুল আহসান স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছেন, আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে নিয়োগ পাওয়া সাতজন এখন ভূমি অফিসের কেউ নন।’ যদিও এসিল্যান্ডরা নিজেদের স্বার্থে তাদের ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। যে সুযোগ কাজে লাগিয়ে এরা কাজ করেছেন অফিসে। ফলে, কোনঠাসা হয়ে পড়েন অফিসের সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা। তাঁদের মাঝে বিরাজ করছে চাপাক্ষোভ।

এদিকে, সেবা গ্রহীতারা বলছেন, কোন প্রকার সরকারি নিয়োগ ছাড়া সরকারের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অফিসে কী করে কাজ করছে এসব দালালরা? গত তিন বছর কে তাদের এ সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন। জেলা প্রশাসনকে তা তদন্ত করে কারণ অনুসন্ধানের দাবি জানিয়েছেন শত শত সেবাপ্রার্থী ।

এদিকে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়েও ঘুষের হাত থেকে রক্ষা পাননি আনোয়ারার বাহার উদ্দিন নামে এক গণমাধ্যমকর্মী। তিনি আরো বলেন, বহিরাগত দালালরা অফিসের ভেতরে এমনভাবে চেয়ার টেবিলে বসে কাজ করছে যে, কারোরই বুঝে উঠার উপায় নেই- কে কর্মকর্তা আর কে বহিরাগত দালাল।’

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কর্ণফুলী উপজেলা ভূমি অফিসের বেশির ভাগ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বলেন, ‘আমরা কি বলব, আমাদের হাত পা বাধাঁ। ডিসি অফিসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যদি আমাদের কাছে জানতে চায়, তখন আমরা সব বলব। এখন সাংবাদিকদের বলার পারমিশন নাই।’ তাঁরা আরো বলেন, মাত্র কয়েকদিন আগে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) শিরিন আক্তার বদলি হয়েছেন। নতুন এসিল্যান্ড পদায়ন হয়েছে। তবে এখনো জয়েন করেননি।’

সমস্ত অভিযোগের বিষয়গুলো মুঠোফোনে উপস্থাপন করে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শাকিল আহমেদ, মোহাম্মদ ইউসুফ ও মোহাম্মদ আইয়ুব বলেন, ‘আমাদের নিয়োগ বাতিল হয়েছে বলে আমরা কোন লিখিত কাগজ পাইনি। আমাদের মৌখিক ভাবে অফিসে না যেতে নিষেধ করেছিলেন তা সত্য। এরপরেও আমরা মুন্সীর মতো কাজ করতে অফিসে যাই। আমাদের মতো কাজ করে স্যারদের বলে চলে আসি। আমরা দুটি উচ্চ আদালতে রিটও করেছি। যার আদেশ রয়েছে। আপনাদের দেখাতে পারব।’

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন অফিসের আরডিসি সুজন চন্দ্র রায় বলেন,‘আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে নিয়োগ দেওয়া হয় পার্টিকুলার একটা সময়ের জন্য। এক বছরের জন্য বা সর্বোচ্চ দুবছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। ফার্মের সাথে যখন চুক্তি শেষ হয়ে যায়। তখন তাদের চাকরিও শেষ হয়ে যায়।’

(চলবে.....)

(জেজে/এসপি/মে ২৪, ২০২২)