জে.জাহেদ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম কর্ণফুলীর চরপাথরঘাটা ইউপি নির্বাচনে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে। একজন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া মোঃ সেলিম হক, অন্যজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হাজী ছাবের আহমদ। দুই প্রার্থীর ভোট লড়াই চলছে। একজন সাংবাদিকতা পেশা থেকে ব্যবসায়ি। আরেকজন শুরুতেই নিজেকেই ব্যবসায়ি হিসেবে নামে বিশেষণ যোগ করেন। এর মধ্যে আলোচনা চলছে কে কত সম্পদের মালিক। 

নির্বাচন অফিসে দেয়া দুই প্রার্থীর সম্পদ বিবরণীতে দেখা যায়, মোঃ সেলিম হকের নিজের ও স্ত্রীর কোন গাড়ি নেই। ব্যবসায় মুলধন রয়েছে ২৫ লক্ষ টাকার। শেয়ার হোল্ডার বা লিমিটেড কোন কোম্পানীতে তাঁর শেয়ার নেই। ব্যবসায়ি মুলধনের বাহিরে ব্যাংকে বা হাতে ক্যাশ রয়েছে ৪ লাখ ২৭ হাজার ৭০০ টাকা। নিজের নামে কোন ব্যাংক লোন নেই। স্বর্ণ রয়েছে ৫০ হাজার টাকার। তবে কি পরিমাণ তা উল্লেখ করেননি।

অকৃষি সম্পত্তি বলতে, পৈত্রিক সম্পদ হিসেবে ১২’শ স্কয়ার ফিটের একটা বাসা। যার মূল্যে দাম দেখানো হয়েছে ২ লাখ টাকা। চরপাথরঘাটায় রয়েছে নিজের কেনা ৪ গন্ডা জমি। সেখানে রয়েছে ১০ রুমের সেমিপাকা ঘর। তা ছাড়া কোন কৃষি জমি নেই। নেই ঋণপত্র, সার্টিফিকেট বন্ড, প্রাইজ বন্ড, সেভিংস স্কিম। তবে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকার একটি ডিপিএস রয়েছে। ফার্নিচার রয়েছে ২০ হাজার টাকা। ইলেকট্রনিক্স ইকুইপমেন্ট ১০ হাজার টাকা। এসব আগের বছরেও স্থিত ছিল। কেননা ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্ট ফরমে এসব বিএফ হিসেবে দেখানো হয়েছে। কারো কাছে দেনা নাই বলে তিনি সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ করেছেন।

সব মিলিয়ে উনার মোট সম্পত্তি রয়েছে ৫২ লাখ ৯৭ হাজার ৭০০ টাকা। গত বছরে উনার মোট সম্পত্তি ছিল ৫২ লাখ ৫২ হাজার ৭০০ টাকা। এক বছরে তাঁর সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্র ৪৫ হাজার টাকা। পারিবারিক ব্যয় দেখানো হয়েছে ২ লক্ষ ৪০ হাজার। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের জনক।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হাজী ছাবের আহমদ উল্লেখ করেন, তিনি একজন ব্যবসায়ি। নিজের দুটি গাড়ি রয়েছে। যার নং-চট্টমেট্টো গ-১২-৬৬০৫ ও চট্টমেট্টো গ-১১-২৩২০। একটির দাম ১০ লাখ, অপরটির দাম ৩০ লাখ টাকা। রয়েছে ৩০ ভরি স্বর্ণ। দাম মাত্র ৭৫ হাজার টাকা। যা অতীতে কেনা বলে উল্লেখ করেছেন।

গত বছরে তাঁর ব্যবসার মুলধন ছিলো ৪ কোটি ৯৬ লাখ ৩১ হাজার ৭৮৬ টাকা। এ বছর ব্যবসার মুলধন দাঁড়িয়েছে ১৮ কোটি ৪০ লাখ ৬১ হাজার ৩৪৯ টাকা। এক বছরে বেড়েছে ১৩ কোটি ৪৪ লাখ ২৯ হাজার ৫৬৩ টাকা। রুমানা ফিশ এন্ড কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেড এ শেয়ার রয়েছে ৫ লাখ টাকার। অকৃষি সম্পদ রয়েছে মোট ৩ কোটি ৩৩ লাখ ৩ হাজার। এটা জমি না, বাড়ি তা নির্দিষ্ট করে সম্পদ বিবরণীতে ব্যাখ্যা করেননি। ফরমের ২ ও ৩ নং কলামে এর কোন তথ্য নেই। ধোঁয়াশা করে রেখেছেন সব।

ব্যবসার ইনভেস্টমেন্ট বা বিনিয়োগে দেখা গেছে, মেশিনারি যন্ত্রপাতি ক্রয় করেছেন ৪ কোটি ১৯ লাখ ২১ হাজার ৩২৩ টাকা। জাহাজ ক্রয় করেছেন ১৩ কোটি ৬৭ লাখ ১৭ হাজার ২৭৪ টাকা ও ট্রলার/ বোট ক্রয় করেছেন ৫৮ লাখ টাকার। ব্যবসার বাহিরে ব্যাংকে বা হাতে ক্যাশ টাকা রয়েছে ২৩ লাখ ২ হাজার ৬৮৩ টাকা। মোট সম্পদ দেখানো হয়েছে ৪ কোটি ৫৫ লাখ ৭ হাজার ৯৩১ টাকা। ব্যাংক লোন দেখানো হয়েছে ৭ কোটি ১২ লাখ ৬৯ হাজার ১০৪ টাকা।

যদিও বছরে সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে ৩ কোটি ৭১ লাখ ১ হাজার ১৭৩ টাকা। আগের বছরের চেয়ে আয় বেড়েছে ২ কোটি ৩৩ লাখ ৬৫ হাজার ১৯৫ টাকা। দুই আয়ে তারতম্য বেড়েছে ৭৩ লাখ ৪৫ হাজার ৯৭৮ টাকা। ১৬ নং কলামে টোটাল এসি একশন অফ ওয়েলথ দেখানো হয়েছে ৬৮ লাখ ৪৫ হাজার ৯৭৮ টাকা। পারিবারিক ব্যয় দেখানো হয়েছে ৫ লাখ টাকা। রয়েছে তাঁর তিন ছেলে এক মেয়ে।

সব মিলিয়ে হাজী ছাবের আহমদের সম্পদ বিবরণীর ১১ ও ১২ নং কলামের তথ্য বলছে, উনার কোন নিজস্ব সম্পত্তি নেই। সব কিছুই ব্যাংক লোনের উপর। কেননা, তথ্য বলছে হাজী ছাবের আহমদের মোট সম্পদ দেখানো হয়েছে ৩ কোটি টাকার মতো। আর ব্যাংক লোন রয়েছে ৭ কোটি টাকা। তাহলে ঋণ রয়েছে ৪ কোটি টাকার উপরে। তাহলে হিসাবেও নানা গড়মিল। কেননা ব্যবসায় মুলধন দেখানো হয়েছে ১৮ কোটি ৪০ লাখ ৬১ হাজার ৩৪৯ টাকা। তাহলে বাকি টাকার উৎস!

উল্লেখ্য, আগামী ১৫ জুন ইভিএমের মাধ্যমে চরপাথরঘাটায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ২৬ মে। ২৭ মে প্রতীক বরাদ্দ। সব প্রার্থীকে আচরণবিধি মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে।

(জেজে/এসপি/মে ২৪, ২০২২)