রাজন্য রুহানি, জামালপুর : 'জায়গা আছে, ঘর নেই' এমন অসহায় ও দুস্থদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েছিলেন শারীরিক প্রতিবন্ধী দুলা মিয়া। ঘর পেয়েও ঘরহারা তিনি। ১১ মাস পেরিয়ে গেলেও প্রাপ্ত সেই ঘরে ওঠা হয়নি এখনও। ঘরটি যখন তাকে হস্তান্তর করে উপজেলা প্রশাসন তখনই সেটা বসবাসের অনুপযোগী ছিল। চালে এখনও টিনের ছাউনি দেওয়া বাকি। কমোড না বসানোয় টয়লেটও অকেজো। ঘরের বাকি কাজও করা হয়েছে নিম্নমানের।

মঙ্গলবার (২৪ মে) জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার গাইবান্ধা ইউনিয়নের নাপিতেরচর এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে সুবিধাভোগী দুলা মিয়ার সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে এমনই চিত্র। দুলা মিয়া ওই ইউনিয়নের মরাকান্দী হাজিবাড়ি এলাকার মৃত আসরাফ আলীর ছেলে।

দীর্ঘ ১১ মাসেও ঘরে নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দুলা মিয়ার স্বজনরা। আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় এই ঘর পেতে উৎকোচ নেওয়ার অভিযোগও করা হয়। হয়েছে দুর্নীতিও। এছাড়া ঘরের অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করতে নেই কোনো প্রশাসনিক উদ্যোগ। উপজেলা প্রশাসন এই ঘরের দায়ও নিতে নারাজ। তাই ঘরে উঠতে না পেরে হতাশায় ভুগছেন প্রতিবন্ধী দুলা মিয়া।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মু. তানভীর হাসান রুমান বলেন, 'এ উপজেলায় আমি সদ্য যোগদান করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া দুলা মিয়াকে যে ঘর দেয়া হয়েছে সেই ঘরটি নির্মাণের কাজ অসমাপ্তের বিষয়টি আমার জানা নেই। তাছাড়া ঘরটি আগের ইউএনও করেছে।'

আগের ইউএনও বর্তমানে নেত্রকোণার বারহাট্টা উপজেলায় কর্মরত মাজহারুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, 'ঘরটি তাঁরও আগের ইউএনও মিজানুর রহমানের দায়িত্বকালীনে নির্মাণ কাজ করা হয়।'

ইউএনও মিজানুর রহমান ইতিমধ্যে বিদেশ থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বর্তমানে সচিবালয়ে কর্মরত থাকায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

ইউএনওর কার্যালয়ের নেজারত শাখা সূত্রে জানা গেছে, টিনের ছাউনি দিয়ে দুই কক্ষ বিশিষ্ট সেমিপাকা ঘর ও বাথরুমসহ প্রতিটি ঘরের জন্য বরাদ্দ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। শারীরিক প্রতিবন্ধী পঞ্চাউর্ধ্বো চিরকুমার দুলা মিয়া গৃহহীন থাকায় প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্প থেকে একটি ঘর প্রাপ্ত হন। ঘর নির্মাণের ঠিকাদারির দায়িত্ব দেওয়া হয় তৎকালীন ইউএনওর প্রছন্দের স্থানীয় এক ব্যক্তিকে।

নেজারত শাখার অফিস সহকারী মো. জুলহাস আলী বলেন, 'ইউএনও মিজানুর রহমান স্যার দায়িত্বকালীন দুলা মিয়াকে ঘরটি বরাদ্দ দেওয়া হয়।'

ঘর মালিক দুলা মিয়ার চাচাতো ভাই ফনি মিয়া অভিযোগ করে বলেন, 'আমাদের অর্থে ঘরের ভিটার মাটি কেটেছে। এছাড়াও ঠিকাদারকে ইট, বালু, সিমেন্ট ও কাঠ আনতে গাড়ি ভাড়ার টাকা দিয়েছি। কিন্তু দুঃখ একটাই প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর তৈরিতে অনিয়মের কারণে প্রায় ১১ মাসেও ঘরে উঠতে পারিনি। এখন পর্যন্ত ঘরের ছাউনিতে টিন লাগানো শেষ করেনি। এছাড়া ফ্লোর প্লাস্টার, বারান্দা ও বাথরুমের কাজ সমাপ্ত করেনি।'

দুলা মিয়ার ছোটো ভাই আওরঙ্গজেব গোল্লা বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরটি বরাদ্দ দিতে আমাদের কাছে ১০ হাজার টাকা নিয়েছে ঘর বরাদ্দের সমন্বয়কারীরা।'

(আরআর/এসপি/মে ২৪, ২০২২)