রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ঝাঁপা ব্রজবিহারী ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ব্রজেন্দ্রনাথ রপ্তানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দূণীতির অভিযোগ উঠেছে। সহকারি প্রধান শিক্ষকসহ ছয়টি পদে ৪০ লক্ষাধিক টাকা নিয়োগ বাণিজ্যকে সামনে রেখে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি গঠণে নেওয়া হচ্ছে দূর্ণীতির আশ্রয়।

শ্যামনগরের পদ্মপুকুর ইউনিয়নের ঝাঁপা ব্রজবিহারী ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি তরুণ কান্তি মণ্ডল জানান, সহকারি প্রধান শিক্ষক ও পরিচ্ছনাতা কর্মী নিয়োগের লক্ষ্যে ২০২০ সালের ২৭ জানুয়ারি নিয়োগ বোর্ডে চুড়ান্ত প্রার্থী বাছাই করার কথা থাকলেও ২৫ জানুয়ারি শ্যামনগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ তেজারত তাকে তার অফিসে ডেকে পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে নিবেদিতা বালা মণ্ডলকে নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে জোরপূর্বক তার কাছ থেকে একটি সমঝোতা পত্রে সই করিয়ে নেন।

পরবর্তীতে ওই নিয়োগ বন্ধ হয়ে যায়। সভাপতি হিসেবে তার মেয়াদ শেষ হয়ে য্ওায়ার পর নবগঠিত আহবায়ক কমিটি আবারো পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠণের লক্ষ্যে গত বছরের ৭ অক্টোবর নির্বাচন তপশীল ঘোষণা করে। নির্বাচনে অনিয়ম ও দূর্ণীতির আশ্রয় নেওয়া হলে অবিভাবক হিসেবে দেবব্রত মণ্ডল বাদি হয়ে শ্যামনগর সহকারি জজ আদালতে দেঃ ৪৩৪/২১ নং মামলা করেন। আদালত ১১ জন বিবাদীর মধ্যে প্রধান শিক্ষকসহ আটজনের বিরুদ্ধে কারণ দর্শাণোর নির্দেশ দেন। প্রধান শিক্ষক কারণ দর্শাণোর জবাব দেওয়াসহ তিনি নির্বাচন না করানোর পক্ষে বিদ্যালয়ের প্যাডে লিখিত দেন। আগামি ২৭ আগষ্ট মামলার ধার্য দিন।

তরুণ কান্তি মণ্ডল বলেন, নবগঠিত আহবায়ক কমিটির সভাপতি হন সমীর কুমার মৃধা। প্রধাণ শিক্ষক ও সভাপতি আলোচনা সাপেক্ষে আগামি ৮ জুন বিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার লক্ষ্যে গত ১৯ মে সাতক্ষীরার একটি দৈনিকে নির্বাচন তপশীল ঘোষণা সম্পর্কিত বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।

তরুণ কান্তি মণ্ডল অভিযোগ করে বলেন নতুন নির্বাচিত কমিটি সহকারি প্রধান শিক্ষক, একজন আয়া, একজন পরিচ্ছনতা কর্মী, নৈশ প্রহরী, ল্যাব সহকারি, অফিস সহকারির সহায়কসহ ছয়টি পদে নিয়োগকে কেন্দ্র করে প্রধান শিক্ষক একটি পদের বিপরীতে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়েছেন। জ্যোর্তিময় মণ্ডলকে সহকারি প্রধান শিক্ষক করার শর্তে মোটা অংকের টাকা নেওয়া ছাড়াও পরিচ্ছন্ন কর্মী হিসেবে নিয়োগের লক্ষে দেবব্রত মণ্ডলের স্ত্রী প্রমিলা মণ্ডলের কাছ থেকে দু’ দফায় দেড় লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

ছয় মাসের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিজের মত করতে এলাকায় মাইকিং, শিক্ষার্থীদের সাথে ভোটার তালিকা উপস্থাপনসহ নির্বাচন সংক্রান্ত সরকারি বিধিমালা উপক্ষো করে গোপনে প্রধান শিক্ষকের কাছের লোক বলে পরিচিত নিরঞ্জন কুমার রপ্তানকে দাতা সদস্য নির্বাচিত করার লক্ষ্যে তার কাছ থেকে ও দীলিপ কুমার মণ্ডলের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া প্রধান শিক্ষক স্কুলের নামে খোলা রুপালী ব্যাংকের নবেকী শাখার চলতি হিসাব ১৯৫কে নিজের মত করে ব্যবহার করেছেন। রেজুলেশন ব্যতীত বিদ্যালয়ের টাকা ব্যাংক থেকে তুলে তছরুপের অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

ঝাঁপা ব্রজবিহারী ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির আহবায়ক সমীর কুমার মৃধার সঙ্গে বুধবার সকাল ১০টা সাত মিনিটে তার মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার স্ত্রী পরিচয়ে এক নারী বলেন, তিনি বাইরে আছেন।

ঝাঁপা ব্রজবিহারী ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ব্রজেন্দ্রনাথ রপ্তান বুধবার সকাল ১০টায় তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেই এ প্রতিবেদককে বলেন, আট মাস আগে নিরঞ্জন কুমার রপ্তান ও দীলিপ মণ্ডল দাতা সদস্য হিসেবে ২০ হাজার টাকা করে জমা দিয়েছেন। নির্বাচন ও নিয়োগ প্রক্রিয়া হবে স্বচ্ছতার ভিত্তিতেই।

এ ব্যাপোরে শ্যামনগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ তেজারতের কাছে বুধবার সকালে তার ০১৯১০-৮৮৩২৩২ নং মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি রিসিভ করেননি।

(আরকে/এসপি/মে ২৫, ২০২২)