আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইসরায়েলের দখলকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে সংবাদ সংগ্রহ করার সময় দেশটির সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হন সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ। সেই ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ। এতে বলা হয়েছে, ইচ্ছাকৃতভাবে সাংবাদিক শিরিনকে গুলি করেন ইসরায়েলি সেনারা এবং এতেই তার মৃত্যু হয়।

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৬ মে) পশ্চিম তীরের রামাল্লায় ফিলিস্তিনের অ্যাটর্নি জেনারেল আকরাম আল-খতিব এই তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেন। তিনি বলেন, এটি স্পষ্ট যে ইসরায়েলি বাহিনীর একজনের গুলি সরাসরি সাংবাদিক শিরিনের মাথায় আঘাত করে। এতে মারা যান তিনি। দায়িত্ব পালনের সময় তিনি হেলমেট ও প্রেস লেখা সম্বলিত জ্যাকেট পরিহিত ছিলেন।

তিনি আরও বলেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন, প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ ও একটি ফরেনসিক রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই এই তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এর আগে ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করে ফিলিস্তিনিদের গুলিতেই নিহত হন শিরিন। আল-খতিব আরও বলেন যে তদন্তে দেখা গেছে গুলি করার সময় ঘটনাস্থলের কাছাকাছি কোনও ফিলিস্তিনি যোদ্ধা ছিলেন না। ইসরায়েলি বাহিনী আবু আকলেহ এবং অন্যান্য সাংবাদিকদের স্পষ্টভাবে প্রেসের সদস্য হিসাবে চিহ্নিত করার পরও গুলি চালায় বলে জানান তিনি।

ইসরায়েলের দখলকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে গত ১১ মে অভিযান চালায় দেশটির সেনারা। সংবাদ সংগ্রহের জন্য সেখানে ছিলেন ৫১ বছর বয়সী শিরিন আবু আকলেহ। প্রত্যক্ষদর্শী ও তার সহকর্মীদের অভিযোগ, ইসরায়েলের এক সেনা মাথায় গুলি করলে শিরিন আবু আকলেহ প্রাণ হারান।

হামলার সময় সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরার আরেক সাংবাদিক আলী আল-সামুদির পিঠে গুলি লাগে। তার অবস্থা এখনো স্থিতিশীল রয়েছে বলেও জানান শিরিন আবু আকলেহ।

এ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর ইসরায়েলের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। ইসরায়েলের সামরিক প্রসিকিউটর সেনাবাহিনীকে ঘটনার তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু গত সপ্তাহে, ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, সাংবাদিক শিরিন হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করবে না ইসরায়েল।

সাংবাদিক শিরিনের হত্যাকাণ্ড গোটা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এমনকি তার কফিন বহন করা ফিলিস্তিনিদের ওপরেই হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ বিশ্ববাসী। ইসরায়েলের এমন হিংস্র আচরণের কড়া প্রতিক্রিয়া জানায় বিভিন্ন দেশের প্রধানরা। দ্রুত ঘটনার তদন্ত করে বিচারের দাবি জানান তারা।

১৯৭১ সালে জেরুজালেমে জন্মগ্রহণ করেন এই খ্যাতিমান সাংবাদিক। তিনি ছিলেন একজন খ্রিষ্টান ও মার্কিন নাগরিক। জর্ডানের ইয়ারমুক ইউনিভার্সিটিতে সাংবাদিকতায় যাওয়ার আগে প্রাথমিকভাবে আর্কিটেকচারে পড়াশোনা করেন। স্নাতক শেষ করে তিনি ফিলিস্তিনে ফিরে আসেন ও কিছু গণমাধ্যমে কাজ করেন। আল-জাজিরার যাত্রা শুরুর এক বছর পর তিনি এর সঙ্গে যুক্ত হন।

তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা

(ওএস/এএস/মে ২৭, ২০২২)