তুষার কান্তি বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ রকিব হোসেনকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সমর্থন দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। 

এ ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় গোপালগঞ্জ জেলা যুবলীগের সভাপতি ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জিএম সাহাব উদ্দিন আজম এবং জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিউটন মোল্লার নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে মিছিলটি বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এরপর মিছিলটি চৌরঙ্গীতে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে অংশগ্রহনকারী যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতা কর্মীরা গোপালগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র পদে কাউকে দলীয় মনোনয়ন না দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রেসডিয়াম সদস্য ও গোপালগঞ্জ সদর আসনের সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমকে শুভেচ্ছা জানান। গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের হঠকারী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দেয়।

চৌরঙ্গীর প্রতিবাদ সমাবেশে জেলা যুবলীগ সভাপতি জিএম সাহাব উদ্দিন আজম বলেন, গত ১৩ মে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার সংক্রান্ত মনোনয়ন বোর্ডের সভায় গোপালগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনকে উন্মুক্ত ঘোষনা করা হয়। যা পরবর্তীতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়। আমরা ১০ জন প্রার্থী আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য আবেদন করি। কিন্তু দলীয়ভাবে নির্বাচন উম্মুক্ত ঘোষনা হওয়ার পর ওই ১০ জনই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেই। অথচ আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, গত ২৬ মে রাতে দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জেলা আওয়ামীলীগ আয়োজিত একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলী খান স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী শেখ রকিব হোসেনের প্রতি দলীয় সমর্থনের কথা জানান। এছাড়া আওয়ামীলীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তিনি (মাহবুব আলী খান) এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেও প্রেস ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করেন।

জিএম সাহাব উদ্দিন আজম আরও বলেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যে মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্তে নির্বাবাচন উন্মুক্ত করা হয়েছে, যদি ওই সিদ্ধান্তের কোন পরিবর্তন হয় তাহলে সেই বোর্ডকেই এটি ঘোষনা দিতে হবে। পরবর্তীতে যা আওয়ামীলীগের মুখপাত্রের বরাতে প্রকাশ হওয়ার কথা। কাউকে কোন নোটিশ না দিয়ে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক কিভাবে একটি জরুরী সভা আহবান করে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে আওয়ামী লীগের সমর্থন দেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, মাহবুব আলী খান দলীয় প্রধানের নাম ভাঙ্গিয়ে সকলকে বিভ্রন্ত করছেন। এটি তার ব্যক্তিগত হটকারি সিদ্ধান্ত । আমরা এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

অপরদিকে জেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক ইলিয়াস হক বলেন, আমি জেলা আওয়ামী লীগের একটি দায়িত্বশীল পদে রয়েছি দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমিও জেলা আওয়ামী লীগের জরুরী সভার কথা জানিনা। আমি মনে করি গঠনতন্ত্র মোতাবেক ওই সভা আহবান করা হয়নি। ৭১ সদস্য বিশিষ্ট জেলা কমিটিতে সভার কোরাম পূরণের জন্য এক তৃতীয়াংশ সদস্যের উপস্থিত থাকতে হবে। অথচ ওই সভায় মাত্র ১৩-১৪ জন উপস্থিত ছিলেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলী খানের বক্তব্যের জবাবে বলেন, জেলা আওয়ামী লীগে সর্বোচ্চ ফোরাম বলে গঠনতন্ত্রে কোন কথা নেই। ৭১ সদস্যের সকলেই সমান।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২৬ মে) সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান প্রেস বিফিং করে মেয়র প্রার্থী শেখ রকিব হোসেনকে আওয়ামী লীগের সমর্থন দেয়। সেখানে মাহাবুব আলী খান বলেন, গোপালগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদের নির্বাচন উন্মুক্ত করা হয়েছে। এখানে আমাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। সরকার প্রধান, পার্টি প্রধান ও দলের মনোনয়ন বোর্ড প্রধান শেখ হাসিনার ম্যাসেজ সব প্রার্থীর কাছে আমরা পৌছে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তার পছন্দের প্রার্থী শেখ রকিব হোসেনকে আমরা দলীয় সমর্থণ জানাচ্ছি। সবাই তার পক্ষে কাজ করবেন। মেয়র প্রার্থী বদরুল আলম বদর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনো নির্বাচনের অনেক দিন বাকি আছে। এরমধ্যে অন্য প্রার্থীরা তাদের সিদ্ধান্ত নেবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

আগামী ১৫ জুন গোপালগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে । নির্বাচনে মেয়র পদে মোট ১১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এরমধ্যে একজন ইসলমী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী । অপর ১০ জন সকলেই আওয়ামী লীগের সক্রিয় রাজনীতির সাথে জড়িত ।

বৃহস্পতিবার (২৬ মে) জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এম বদরুল আলম বদর তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন। এর আগের দিন সন্ধ্যায় তিনি প্রেসক্লাব গোপালগঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলন করে শেখ রকিব হোসেনের প্রতি তার সমর্থনের কথা জানান।

(টিকেবি/এসপি/মে ২৭, ২০২২)