ওয়াজেদুর রহমান কনক


‘শহর নীলফামারী’র প্রথম পর্বে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের  ‘শহর সিলেট’ কলামের বিষয়টি উল্লেখ করেছিলাম। দ্বিতীয় পর্বে এর প্রাসঙ্গিকতা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবো। দ্বিতীয় পর্বের এই লেখাটিও হুমায়ূন আহমেদের অনশন কর্মসূচির প্রতি অনুপ্রাণিত হয়েই লেখা। ৭ জুন ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবসকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘শহর নীলফামারী’র দ্বিতীয় পর্ব লেখার কাজ শুরু করেছি।

নীলফামারী থেকে সিলেটের দূরত্ব যতটুকুই হোক না কেন, যে সিলেটের আলো-বাতাসে হুমায়ূন আহমেদ বেড়ে উঠেছেন, সেই হুমায়ূন আহমেদই নীলফামারীসহ সারা দেশের মানুষকে একজন আসাদুজ্জামান নূরকে উপহার দিয়েছেন। এই বরেণ্য মানুষ গুলোর প্রতি কৃত্জ্ঞতা, আনুগত্য প্রকাশ করা খুব জরুরী। কেননা, তাদের অবস্থানের নড়বড়ে হওয়ার অর্থ অনেক কিছুর অবস্থানও নড়বড়ে হয়ে যাওয়া। তাদের অবস্থান সম্পর্কে যেমন আমাদের নিজেদেরও জানতে হবে, তেমনি জানানোর কাজটাও আমাদেরকেই করতে হবে।

এই জানার জন্য আর জানানোর জন্যই আজকের আমাদের এই আয়োজন। সাম্প্রতিককালে বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান নূর সভা-সমাবেশে যে কথা গুলো বলছেন তা যদি আমরা একটু চিন্তা করি তাহলে আমরা আমাদের অনেক প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবো । '

'আমরা সংগঠন করি, মিটিং করি, মিছিল করি । শ্লোগান দেই-জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলি । কিন্তু আমরা রাজনীতিটা সঠিকভাবে বুঝি কি না, বঙ্গবন্ধুর দর্শনটা বুঝি কি না-এটা নিয়ে অনেকেই আমরা সন্দীহান । এটা সব সংগঠনের ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য।

‘আমরা একটা আদর্শে বিশ্বাস করি। সে আদর্শের বহিঃপ্রকাশটা কিভাবে হবে । একটা আদর্শে বিশ্বাস করে আমি ঘরে বসে থাকলাম ! কোন কাজে লাগবে সমাজে ? সে আদর্শটাকে কিভাবে আমি আমার বাস্তব জীবনে, সমাজ জীবনে প্রতিফলিত করতে পারি, কিভাবে আমি সমাজের কাজে লাগবো-সেটা কিন্তু আমাদের ভাবতে হবে ।

আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাস করি, আমি শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাস করি-কিন্তু এরজন্য আমি কিছু করি না, তাহলে দল করার কোন দরকার নাই। বঙ্গবন্ধুর আদর্শটাকে জানতে হবে, বুঝতে হবে । এটা বোঝার জন্য খুব পন্ডিত হওয়ারও দরকার নাই ।’

’শহর নীলফামারী’র প্রথম পর্বটি ছিল থিওরিক্যাল আর দ্বিতীয় পর্বটি অনেকটা প্রাকটিক্যালের মতো । প্রথম পর্বে উল্লেখ করেছিলাম তিনজন মানুষের কাছে নীলফামারীর মানুষকে চিরকৃতজ্ঞ থাকতে হবে। এই তিনজন মানুষের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতাস্বরুপ আজকের এই দ্বিতীয় পর্বটি।

৭ জুন ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস স্মরণে কয়েকটি বিষয়ের প্রতিবাদ জানাতে অনশন ধর্মঘট করতে চাই। ওই দিন সকাল থেকেও শহরের বঙ্গবন্ধু চত্ত্বরে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের পাদদেশে বসে প্রতিবাদ জানাত চাই। শতভাগ শান্তিপূর্ণ পন্থায় এটি করতে চাই। এর মধ্যে দিয়ে এই বার্তাটি দিতে চাই। নীলফামারীতে প্রেসক্লাবের নামে যা কিছু হচ্ছে তা কোন অবস্থাতেই সাংবাদিকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ঠ নয়। এদের এই তৎপরতা কোন অবস্থাতে চলতে দেওয়ার আর কোনই সুযোগ নাই। কাল বিলম্ব না করে প্রেসক্লাবের সকল কর্মকান্ড প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বন্ধ করে দিতে হবে। সমাজবিরোধী দুর্বৃত্তদের স্বার্থরক্ষার প্রেসক্লাব বন্ধ করে দিতে হবে।

গত বছর প্রেসক্লাবের কমিটি গঠন হওয়ার পর থেকে এর বিরোধীতা করে আসছি। এর বিপরীতে তারা কালিবাড়ি মোড়ে প্রেসক্লাব কার্যালয় এনে দাঁড় করানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রশাসনের কাছে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকের পরিবারকে ’অবৈধ’ দখলদার হিসেবে জাহির করে এক শ্রেণির সাংবাদিক নামধারী স্বঘোষিত মাফিয়া চক্র রাজনৈতিক এজেন্ডা নিয়ে মাঠে নেমেছ।

এখন যিনি নীলফামারীর জেলা প্রশাসকের দ্বায়িত্বে আছেন, তিনি দ্বায়িত্বভার নেওয়ার আগে আর একজন ভদ্রমহিলার জেলা প্রশাসক হয়ে আসার কথা ছিল। পত্র-পত্রিকায় তাঁর বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সংশ্লিষ্ঠতার খবর প্রকাশের পর তিনি আর দ্বায়িত্বভার নিতে পারেন নি, তাঁর পরিবর্তে এখনকার বর্তমান জেলা প্রশাসক এসেছেন।

ঠিক এই সমসাময়িক কালে ডোমারের তোফায়েল আহমেদকে নিয়ে তোলপার চলছে, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে অসৗজন্যমূলক আচরণ করেছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি রাজাকারের সন্তান।

সরকার ও প্রশাসন হলো একটি রাষ্ট্রের পিলার। রাষ্ট্রের এই পিলার গুলোতে এখন মেরামত কাজ চলছে। যদি সরকার ও প্রশাসনে এই শুদ্ধি অভিযান চলতে পারে, তবে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ গণমাধ্যমে নয় কেন ?

বর্তমান গণমাধ্যমও তো সরকার ও প্রশাসনের মতো বিএনপি-জামায়াত দিয়ে ভরে গেছে, বর্তমানেও তো, সম সমাময়িক কালেও শহরের কালিবাড়ি মোড়ে গণমাধ্যমের নামে দুর্বৃত্তরা একট্টা হয়ে প্রতিহিংসামূলকভাবে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকের বাড়ি দখলের চেষ্টা করে বিফল হয়ে তাদের বাড়ির উঠানেই ক্লাব বানাতে উদ্যত হয়েছে।
এই গণমাধ্যম শিশু বলৎকারী আর চিহ্নিত জামাতীদের নিয়ে নিজেদের দল ভারী করে মূলত তাদের স্বার্থ রক্ষার একটি হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।

আশা করি, সরকার ও প্রশাসনের ধারাবাহিকতায় এই তথাকথিত গণমাধ্যমের বিরুদ্ধেও শুদ্ধি অভিযান পরিচালিত হবে । ৭ জুনের অনশনের পর প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের সিলেটের অনশন কর্মসূচি নিয়ে লেখালেখির কাজ শুরু করব। সিলেটের যে স্থানে তিনি অনশন করেছিলেন, সেই স্থানের বর্ণনা, কেন তিনি অনশন করেছিলেন সেই বিষয় গুলো অনুসন্ধ্যান কাজ শুরু করব। সিলেটে হুমায়ূন আহমেদের অনশনের বিষয়টি একটু বিশ্লেষণ করে দেখার চেষ্টা করব। হুমায়ূন আহমেদের জীবনের এই দিকটি তুলে ধরার চেষ্টা করব।

লেখক : গণমাধ্যম কর্মী।