দিলীপ চন্দ, ফরিদপুর : ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার গাজিরটেক ইউনিয়নের চরঅযোধ্যা মৌজার ছিটাডাঙ্গি গ্রামের দুই কৃষকের ১১টি পরিবারের ব্যক্তিমালিকানার প্রায় ৯২ শতাংশ জমি দখল করে আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। তাদের ভিটার ঘর ভেঙে ও ছোটবড় ২৭টি গাছপালা কেটে বাড়ির সামনের চলাচলের পথটিও কাঁটাতার দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় ফরিদপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিকার দাবি করেছেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে ছিটাডাঙ্গি গ্রামের মৃত শেখ ছৈজদ্দিনের মেয়ে রাসেদা বেগম লিখিত বক্তব্যে বলেন, তার পিতা মৃত শেখ ছৈজদ্দিন ও চাচা মৃত শেখ মোতালেব এসএ এবং আরএস রেকর্ড অনুযায়ী উত্তরাধিকারসূত্রে ছিটাডাঙ্গির ২ একর ১৮ শতাংশ জমির মালিক ছিলেন। তাদের অবর্তমানে গোষ্ঠীর ১১ পরিবার ওই জমির মালিক। কিন্তু খাজনা বাকির কারণে ওই জমি খাস হলে যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলায় তাদের পক্ষে রায় হয়। এরপর আপিলেও হেরে যায় সরকার পক্ষ। এরই মধ্যে ওই জমি বিএস রেকর্ডে খাস খতিয়ানভুক্ত হলে অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতে স্বত্ব পুনরুদ্ধারের জন্য রেকর্ড সংশোধনের মামলা করেন। কিন্তু ওই মামলা চলমান অবস্থাতে একটি মহলের ইন্ধনে সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর তুলে প্রধানমন্ত্রীর এই মহতী উদ্যোগকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

‘একটি একান্তবর্তী পরিবারের কয়েকটি পরিবারকে ভিটাহারা করে এ কেমন আশ্রয়ণ প্রকল্প!’ জমি হারানো ওই কৃষক পরিবারের সদস্যরা এই প্রশ্নই ছুঁড়ে দেন।

রাসেদা বেগম বলেন, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতর বসতভিটা বেদখলের হাত থেকে রক্ষার আবেদন জানিয়েছেন তারা। ২০২১ সালের ৯ আগস্ট সিনিয়র সহকারী কমিশনার মোছা. জাকিয়া সুলতানা সরেজমিন তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য জেলা প্রশাসকের নিকট নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানান। জেলা প্রশাসক অতুল সরকার পরবর্তী মাসের ৪ অক্টোবর চরভদ্রাসনের সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানান। তবে এর মাঝে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও ওই প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি। তাদের অভিযোগ, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের কুনজর ছিলো ওই জমির প্রতি। তাদের কারণেই হয়রানির শিকার তারা।

এদিকে গত মাসের প্রথম সপ্তাহে লোকাল ইন্সপেকশনের জন্য আদালতের নির্দেশে উকিল কমিশনার নিযুক্ত হয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন অ্যাডভোকেট স্বপন কুমার মজুমদার নামে একজন আইনজীবী।

ওই প্রতিবেদনে তিনি আদালতকে জানান, ওই জমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২৭টি দেওয়াল দেওয়া দোচালা টিনের ঘর রয়েছে, যেগুলি আনুমানিক ৩ মাস পূর্ব হতে তোলা হয়।

অন্যদিকে, শেখ ছৈজদ্দিনের পরিবারের ৪ চালা ২টি টিনের ঘর, ২ চালা ২টি টিনের ঘর, ৩টি টিনের ছাপড়া, ২টি টয়লেট ও ২টি টিউবয়েল রয়েছে। ৫০ বছর যাবত তারা এই বাড়িতে বসবাস করছেন।

এদিকে, ৩ এপ্রিল উকিল কমিশনারের পরিদর্শনের পর গত ২১ এপ্রিল নতুন করে রাসেদা বেগমের ভিটার ছাপড়া ঘর ভেঙে ও গাছপালা কেটে বাড়ির সামনের চলাচলের পথটিও কাঁটাতার দিয়ে আটকে দেওয়া হয়। এখন তারা বাপচাচার ১১টি পরিবার যেন ভিটাচ্যুত না হন সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

রাসেদা বেগম বলেন, এই জমির মামলা লড়তে যেয়ে তিন ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে গত বছর মারাই গেছেন তার পিতা শেখ ছৈজদ্দিন। আর তার চাচা শেখ মোতালেব চার মেয়ে ও এক ছেলে রেখে আগেই মারা গেছেন।

জানা গেছে, চরভদ্রাসন উপজেলায় বর্তমানে সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদটি শূন্য। চলতি দায়িত্বে রয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানজিলা কবির ত্রপা।

এ সকল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক ২০২১ সালের ৪ অক্টোবর চরভদ্রাসনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে বিষয়টি সরেজমিন তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলেছিলেন কিনা তা আমার জানা নাই। তখন আমি দায়িত্বে ছিলাম না। আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ওই অংশে ঘর নির্মাণে ‘আইনের কোনো ব্যত্যয় হয়নি’ দাবি করে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ওই জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান আছে বলে আমার জানা নেই।’ তিনি পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘ওই মহিলা (রাসেদা বেগম) খুবই আক্রমণাত্মক। আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের সে নিয়মিত ডিস্টার্ব করে, আমার সামনেই সে লোকজনকে ঢিল মেরেছে।’ প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প আশ্রয়ণকে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে বলে জানান তিনি।

(ডিসি/এএস/মে ২৮, ২০২২)