আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : ভান্ডারিয়াগামী যমুনা লাইন যাত্রীবাহী নৈশ পরিবহন ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের উজিরপুর উপজেলার সানুহার এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রবিবার ভোরে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে পরিবহনের আরোহী শিশু ও নারীসহ অন্তত ১০জন যাত্রী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত আরও ২০ জন। আহতদের বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্টেট রকিবুর রহমান খানকে আহ্বায়ক, বরিশাল বিআরটিএ এর উপ-পরিচালক ও উজিরপুর থানা অফিসার ইন চার্জকে সদস্য সচিব করে রবিবার তিন সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন করেছন বরিশাল জেলা প্রশাসক মো. জসীম উদ্দিন হায়দার।

উজিরপুর থানা অফিসার ইন চার্জ মো. আলী আর্শাদ জানান, ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে শনিবার রাতে ভান্ডারিয়া যাবার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে যমুনা লাইন পরিবহনের একটি বাস। রবিবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে যাত্রীবাহী পরিবহনটি উজিরপুর থানা এলাকার সানুহার এলাকা অতিক্রমকালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশের গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে সামনের অংশ দুমড়ে মুচড়ে বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনায় শিশু ও নারীসহ ১০ জন যাত্রী নিহত হয়েছেন।

আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২০ জন। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় উদ্ধার তৎপরতা চালায়। আহতদের উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

আহত যাত্রীরা জানান, ঢাকার গাবতলী থেকে যাত্রী নিয়ে শনিবার রাতে ভান্ডারিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে যমুনা লাইন পরিবহন (ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-৯০৪৬)। সকাল সাড়ে ৫টার দিকে উজিরপুরের বামরাইল ও সানুহারের মধ্যবর্তী এলাকা অতিক্রমকালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে থাকা গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে বসটির সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে একজন শিশু ও দুইজন নারীসহ দশ যাত্রী নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৯ জন উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও একজন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে। ১০ জনের মধ্যে ৭ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে গেছে।

নিহতরা হলো, আরাফাদ হোসেন, নজরুল ইসলাম আকন, তাজনেয়ারা বেগম, হালিম মিয়া, সেন্টু মোল্লা, রমজান হাওলাদার, মাধব শীল।

আহত ২০ জনের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশংক জনক অবস্থা বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। আহতদের মধ্যে ১৭ জন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও ৩ জন উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক বেল্লাল আহম্মেদ জানান, ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট, গৌরনদী হাইওয়ে থানা ও উজিরপুর থানা পুলিশ আহত ও লাশ উদ্ধার করে উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করে। ৬ঘন্টা পর সকাল ১১ টার দিকে রেকার দিয়ে দূর্ঘটনা কবলিত বাসটি অপসারণ করার পরে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। এসময় মহাসড়কের দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকা পরে।

গৌরনদী হাইওয়ে থানার ওসি শেখ মোঃ বেলাল হোসেন জানান, দূর্ঘটনাকবলিত বাস থেকে আটজন, পাশের ডোবা থেকে একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয় এবং শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজন নিহত হয়েছেন। এছাড়াও ১৭ জনকে গুরুত্বর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে প্রেরন করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, যান্ত্রিক ত্রুটি কিংবা চালকের অসাবধানতায় এ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বাসটি আটক করে থানায় নেয়া হয়েছে। তবে চালক ও হেলপার কেউ বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন সেটা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ ঘটনায় গৌরনদী হাইওয়ে থানার সাজের্ন্ট মাহাবুব আলম বাদি হয়ে উজিরপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

বরিশাল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল স্টেশনের সহকারী পরিচালক বেলাল উদ্দিন জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি বাসের চালক ঘুমিয়ে পড়েছিল। এরপরই বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সজোরে গাছের সাথে ধাক্কা লাগে। এতে পুরো বাসটি দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে।

অপরদিকে দুর্ঘটনায় নিহত ১০ জনের প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসান। দুর্ঘটনায় আহতদের শেবাচিম হাসপাতালে দেখতে গিয়ে আহতদের চিকিৎসার সার্বিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা করেন। এসময় জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দীন হায়দার, শেবাচিমের পরিচালক ডাঃ সাইফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

এক শোক বার্তায় সড়ক দূর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ ও শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সিনিয়র সদস্য, পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির আহবায়ক(মন্ত্রী), আওয়ামী লীগ সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের্র সদস্য, বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি, আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি। পাশাপাশি আহতদের দ্রুত সুস্থতাও কামনা করেছেন তিনি।

(টিবি/এএস/মে ২৯, ২০২২)