স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা : সম্প্রতি জার্মানির ‘এথিক্স কাউন্সিল’ এক অভিনব বিষয়কে সামনে নিয়ে এসেছে, যা কিনা বর্তমানে প্রচলিত মূল্যবোধের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। বিষয়টি হলো সহোদর ভাইবোনের মধ্যে যৌন সম্পর্ক।

জার্মানিতে এই সমাজ অস্বীকৃত যৌন সম্পর্কের বিষয়টি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অন্তর্ভুক্ত। ইউরোপের বেশ কিছু দেশ- ফ্রান্স, স্পেইন, পর্তুগাল, নেদারল্যান্ড লুক্সেমবার্গ কিন্তু এটিকে বৈধতা দিয়েছে। যে কারণে জার্মানিতে ব্যাপারটি নিয়ে চলছে আলোচনা।

এথিক্স কাউন্সিলের ভাষ্য, দুজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করবে কী না তা তাদের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় হওয়া উচিৎ। সমাজ এটিকে নিষেধাজ্ঞার জায়গায় নিয়ে যেতে পারে না। এর জন্যে রীতিমতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের আওতায় শাস্তিবিধান করতে পারে না।

জার্মান প্রশাসন যদি এথিক্স কাউন্সিলের যুক্তিতে গুরুত্ব দেয়, তাহলে ফ্রান্স, স্পেন, পর্তুগালের মতো জার্মানিও অচিরেই ভাইবোনের যৌন সম্পর্ক বৈধ করতে পারে। স্মরণ করা যায় প্রাচীন মিশরের রাজপরিবাগুলোর কথা, যেখানে কথিত রক্তের বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্যে সহোদর ভাইবোনের মধ্যে জাঁকজমকের সঙ্গে বিয়ে দেয়া হতো। এথিক্স কাউন্সিল ‘রক্তের বিশুদ্ধতা রক্ষার’ বিষয়টিকে উড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু সমর্থন করেছে মানুষের সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বাধীনতাকে।

নতুন এ বিষয়টি সামনে চলে আসে এক অজাচারী জুটিকে ঘিরে। প্যাট্রিক ও সুসান, গণমাধ্যমের কল্যাণে জার্মানীতে সুপরিচিত। তারা দুজন সহোদর ভাইবোন এবং শারীরিক আকর্ষণের বশবর্তী হয়ে মিলিত হন। বিষয়টি যতদিনে জানাজানি হয়, ততদিনে তারা চার সন্তানের বাবা মা।

জার্মান সরকার দুজনকে পৃথক করে দেয় এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের আওতায় প্যাট্রিকের চার বছরের জেল হয়। ঔরসজাত চার সন্তানের মধ্যে দুজনই প্রতিবন্ধী। তাদেরকে নিরাময়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। সুস্থ দুজন সুসানের সঙ্গে আছে।

দুজন প্রতিবন্ধী সন্তানই দেখিয়ে দিচ্ছে, কেন অজাচার অবৈধ। এমনটা মনে করছে এথিক্স কাউন্সিল। তাদের মতে, ঠিক এ কারণেই বিষয়টি ধীরে ধীরে সামাজিকভাবে অপরাধ হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে, যা একটি ভুল সিদ্ধান্ত। দুজন জিনেটিক ত্রুটিযুক্ত নরনারীর বিয়েকে যখন অবৈধ করা হচ্ছে না, তাদের মিলনে জন্ম নেয়া প্রতিবন্ধী সন্তানকে যখন অবাঞ্ছিত করা হচ্ছে না, তখন ভাইবোনের যৌন সম্পর্ক অবৈধ, বেআইনী, তাদের সন্তান অবাঞ্চিত হওয়াটা অমানবিক।

এথিক্স কাউন্সিল সামাজিক বিবর্তনের বিষয়টি মাথায় রেখে মতামত প্রদান করে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে থাকে। কাউন্সিল যখন ভাইবোনের সম্পর্ককে অবৈধ করাটা অমানবিক মনে করছে তখন অদূর ভবিষ্যতে জার্মানিতে বিষয়টি বৈধ হওয়াটা হয়ত শুধু সময়ের ব্যাপার।

(ওএস/অ/সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৪)