সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে জুতার দামদর নিয়ে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় সুজন মিয়া (৫০) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। ৩০ মে সোমবার বিকালে সুজন মিয়ার মৃত্যু হয়। নিহত সুজন মিয়া পৌর এলাকার পূর্ব গাইলকাটা মহল্লার মৃত ইশাদ মিয়ার ছেলে।

কুলিয়ারচর পৌরসভার কাউন্সিলর পূর্ব গাইলকাটা মহল্লার বাসিন্দা মো. সেলিম মিয়া জানান, গত ২৮ মে সন্ধ্যার দিকে কুলিয়ারচর বাজারে পৌর এলাকার তাতাঁরকান্দি গ্রামের মনির হোসেন এর জুতার দোকানে পৌর এলাকার পূর্ব গাইলকাটা গ্রামের লিল মিয়ার ছেলে রবিন মিয়া জুতা কিনতে যায়। এ সময় মনির মিয়া জুতার মূল্য ৬৫০ টাকা দাবী করে। এর বিপরীতে রবিন মিয়া জুতার দাম বলে ৪০০ টাকা। একপর্যায়ে দামদর নিয়ে দু’জনের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওইদিন রাত ৮টার দিকে রবিন ও মনিরের বাড়ির লোকজন দা, বল্লম ও লাঠি নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।

এ ঘটনা সমাধানের জন্য কুলিয়ারচর বাজার ব্যবসায়ী পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মুফতি ইলিয়াস মাহমুদ কাসেমী রাসেল এর আহবানে ও সভাপতিত্বে ২৯ মে রোববার সন্ধ্যায় কুলিয়ারচর মাছের আড়তে একটি সালিশ অনুষ্ঠিত হয়। সালিশে উভয় পক্ষের মধ্যকার বিরোধ কোন রকম মিমাংসা করার সাথে সাথে হঠাৎ করে দু’পক্ষই কথা কাটাকাটি করে উত্তেজিত হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে সংঘর্ষের রূপ নেয়। তাৎক্ষণিক সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর মো. আবু বক্করসহ উভয় পক্ষের ৪/৫ জন আহত হয়। আহতদের বাজিতপুর ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৩০ মে সোমবার বিকেল পর্যন্ত দুই পক্ষের অর্থাৎ তাতাঁরকান্দি ও পূর্ব গাইলকাটা গ্রামবাসীর মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত পুলিশ ও সাংবাদিকসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। এ ছাড়া ৪টি স্বপ্ন বিলাস বাস, পূর্ব গাইলকাটা গ্রামের ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেনের একটি বালু ভর্তি ট্রাক, ১৫টি দোকান ও কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে বলে জানা গেছে। সংঘর্ষের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পুলিশ পাঁচ জনকে আটক করলেও তাদের নাম গোপন রেখেছেন পুলিশ।

কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তুফা বলেন, এক জোড়া জুতা নিয়ে ৩ দিনের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ একাধিকবার ঘটনাস্থলে গিয়েছে এলাকা স্বাভাবিক রাখলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করে শেষ পর্যন্ত ৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়তে বাধ্য হয়েছে। সংঘর্ষের সময় এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। মৃত ব্যক্তির সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়না তদন্তের জন্য মৃতের লাশ কিশোরগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কুলিয়ারচর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আজাহার উদ্দিন লিটন বলেন, একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনায় ঝরে গেল একটি মানুষের জীবন, কে নেবে এর দায়ভার, এলাকার নেতৃত্ব যারা দেন দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখুন, আর যেন কোন পরিবার তার বাবাকে না হারাতে হয়।

(এস/এসপি/মে ৩১, ২০২২)