গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : 'আর নয় বি-বাড়ীয়া, এখন থেকে সর্বত্র লিখতে হবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া। লেখায় এবং বলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রশ্নে কোন ধরণের ছাড় দেয়া হবে না। আর এখন থেকে যেখানে যেখানে 'বি-বাড়ীয়া' লেখা আছে, সেসব জায়গা থেকে বি-বাড়ীয়া শব্দটি তুলে দিয়ে সেখানে 'ব্রাহ্মণবাড়িয়া' শব্দটি লিখতে হবে। এ বিষয়ে কোন ধরণের আপোষ করা হবে না।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একরামুল ছিদ্দিক কঠোর ভাষায় দৃঢ়তার সাথে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।

গতকাল সোমবার রাতে নবীনগর থেকে প্রচারিত দর্শকনন্দিত জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল নবীনগরের কথার ১৪৮-তম পর্বে 'বি-বাড়ীয়া নাকি ব্রাহ্মণবাড়িয়া? এ বিতর্কের শেষ কোথায়? - শীর্ষক ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠিত একটি প্রাণবন্ত লাইভ টকশোতে অংশ নিয়ে ইউএনও একরামুল ছিদ্দিক এসব কথা বলেন।

ইউএনও আরও বলেন, সারাদেশে সাংস্কৃতিক রাজধানী খ্যাত বিশ্বখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ, মহর্ষি মনোমোহন দত্ত, দানবীর মহেশ ভট্টাচার্যসহ অসংখ্য জ্ঞানী গুণীর পূণ্যভূমি হলো এই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা। আর সেই ঐতিহ্যবাহী জেলার নাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে 'ব্রাহ্মণ' শব্দটি বাদ দিতেই একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থলে বি-বাড়ীয়া লিখে ও বলে নানা ধরণের অপপ্রচার চালাচ্ছে।

তিনি দুঃখ করে বলেন, কিছুদিন আগে আমাকে একজন হুজুর একটি বই উপহার দেন। কিন্তু বইয়ে তিনি প্রেরকের ঠিকানায় তাঁর নামের শেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাম 'শহীদবাড়িয়া' লিখেন। তখন আমি তাকে (হুজুর) কঠোর ভাষায় জেলার নাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থলে কেন শহীদ বাড়িয়া লিখলেন, সেটি জানতে চাইলে ওই হুজুর তার স্বভাব সুলভ ভঙ্গিতে বললেন, 'স্যার, এটি আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নতুন প্রস্তাবিত নাম। তাই শহীদবাড়িয়া লিখেছি।'
হুজুরের কথা শুনে আমি স্তম্ভিত হয়ে যাই। তাই এসব সাম্প্রদায়িকতা আমাদেরকে এখন থেকেই কঠোরভাবে দমন করতে হবে। সেজন্য আমি সকলের সার্বিক সহযোগীতা চাই।

দৈনিক বাংলা ৭১ এর বিশেষ প্রতিনিধি ও নবীনগরের কথার সম্পাদক গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপুর পরিকল্পনা ও উপস্থাপনায় প্রায় দুইঘন্টা ধরে চলা ভার্চ্যুয়ালি ওই লাইভ টকশোতে অন্যান্যের মধ্যে অংশ নেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামীলীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ও নবীনগর পৌরসভার মেয়র এডভোকেট শিব শংকর দাস, নবীনগর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ও নবীনগর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কান্তি কুমার ভট্টাচার্য, নবীনগর প্রেসক্লাবের সভাপতি জালাল উদ্দিন মনির ও নবীনগর অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের (নোয়াফ) সহ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম খান।

'বি-বাড়ীয়া নাকি ব্রাহ্মণবাড়িয়া' শীর্ষক ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠিত এই টকশোতে অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, প্রায় দুই দশক ধরে স্বয়ং নবীনগর উপজেলা পরিষদ গেইটে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থলে 'বি-বাড়ীয়া' শব্দটি প্রকাশ্যে শোভা পাচ্ছিলো। স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দসহ নানা পেশার মানুষ এতদিন শব্দটি পরিবর্তনের জন্য বিভিন্ন সময় জোর দাবী করে আসলেও, রহস্যজনক কারণে উপজেলা গেইট থেকে 'বি-বাড়ীয়া' নামটি পরিবর্তন করা হয়নি।

অবশেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. শাহগীর আলমের কঠোর নির্দেশে নবীনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একরামুল ছিদ্দিক উপজেলা গেইট থেকে 'বি-বাড়ীয়া' শব্দটিকে ফেলে দিয়ে সেইস্থলে নতুন করে 'ব্রাহ্মণবাড়িয়া' শব্দটি সংযোজন করেন। সেজন্য জেলা প্রশাসক ও নবীনগরের ইউএনও মহোদয়কে আমরা অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

বক্তারা আলোচনার এক পর্যায়ে ইউএনও একরামুল ছিদ্দিকের সোমবার (৩০ মে) জন্মদিন থাকায়, তাঁর জন্মদিনে 'বি-বাড়ীয়া' শব্দটিকে তুলে দিয়ে সেখানে 'ব্রাহ্মণবাড়িয়া' শব্দটি সংযোজন করায়, সেটি নবীনগরবাসির জন্য জন্মদিনের একটি 'সেরা উপহার' প্রদান বলেও মন্তব্য করেন।

দু'ঘন্টার প্রাণবন্ত এই লাইভ টকশোতে অসংখ্য দর্শক নবীনগরের বেশ কিছু বার্ণিং সমস্যাও তুলে ধরেন। যারমধ্যে নবীনগর বাজারের রাস্তাঘাটে যানজন ও ভয়ানক দূর্ভোগ, কাঁচাবাজারের দু:খজনক উদ্ভুত পরিস্থিতি, উপজেলা পরিষদ সড়কের গণ পাঠাগারটি দ্রুত চালু করা, প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের সামনে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন, সীতারামপুর মনতলা ঘাটে পুনরায় ফেরি চালু করা, মনতলা খেয়াঘাটে যাত্রী হয়রাণী বন্ধ করা, পৌর এলাকায় মশক নিধন করা সহ অনেকগুলো সমস্যার দ্রুত সমাধান করা হবে বলেও দর্শকদেরকে আশ্বস্থ করেন নবীনগরের মেয়র শিব শংকর দাস ও ইউএনও একরামুল ছিদ্দিক। এসময় আলোচকদের অন্যতম নোয়াফ সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলম খান উপজেলার কৃষ্ণনগরে থাকা অসহায় ও ভূমিহীন জন্মান্ধ নুরুল ইসলামের জন্য মুজিববর্ষের একটি সরকারি ঘর বরাদ্দের দাবী করলে, ইউএনও একরামুল ছিদ্দিক তাৎক্ষণিকভাবে জন্মান্ধ ওই অসহায় ব্যক্তিকে একটি ঘর দ্রুত দেয়া হবে বলে ঘোষণা দেন।

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ৪ জুলাই তৎকালীন জেলা প্রশাসক জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলার সর্বত্র কোথাও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থলে 'বি-বাড়ীয়া' লিখা যাবে না মর্মে একটি সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করেছিলেন। কিন্তু ওই সরকারি প্রজ্ঞাপনের পর প্রায় এক যুগ ধরে নবীনগর উপজেলা গেইটে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থলে 'বি-বাড়ীয়া' নামটি লেখা থাকলেও, রহস্যজনক কারণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নামটি এতদিন সংশোধন করা হয়নি।

(জিডিএ/এসপি/মে ৩১, ২০২২)