স্টাফ রিপোর্টার : শ্রমনির্ভর এবং অনেক নারী শ্রমিকের কাজের সুযোগ রয়েছে খেলনা সেক্টরে। চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে এ সেক্টরের পরিধি। এক সময় ৯০ শতাংশ খেলনাই আমদানি নির্ভর ছিল, বর্তমানে ১০ শতাংশ। চাহিদার ৯০ শতাংশই তৈরি হচ্ছে দেশে। বিশ্ব বাজারেও রয়েছে বাংলাদেশি খেলনার চাহিদা। সরকারি সহযোগিতা পেলে পোশাক শিল্পের মতোই রপ্তানিতে বড় ভূমিকা রাখবে এ শিল্প।

মঙ্গলবার (৭ জুন) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘প্লাস্টিক টয় ইন্ডাস্ট্রিজ অব বাংলাদেশ এ পটেনশিয়াল সেক্টর ফর এক্সপোর্ট ডাইভারসিফিকেশন’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা জানান খেলনা শিল্প সেক্টরের উদ্যোক্তারা। যৌথ উদ্যোগে এ সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএমইএ), বিশ্বব্যাংকের প্রজেক্ট ইসিফোরজে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

মূলপ্রবন্ধে বিল্ডের (বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট) সিইও মিসেস ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, বর্তমানে দেশে ৫ হাজার ৩০টি প্লাস্টিক শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে ৯৮ শতাংশ এসএমই প্রতিষ্ঠান। প্রায় ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন লোকবল এ খাতের সঙ্গে যুক্ত।২০২০-২১ সালে প্লাস্টিক খাতের রপ্তানি ১৫ শতাংশ বেড়েছে। বর্তমানে এ সেক্টরে রপ্তানির পরিমাণ ১ বিলিয়ন ইউএস ডলার। ২০২১-২২ সালে (জুলাই-এপ্রিল) মোট প্লাস্টিক রপ্তানি ইউএস ডলার ১২৮ দশমিক ৭৭ মিলিয়ন এবং খেলনা রপ্তানি ইউএস ডলার ৩৭ দশমিক ১০ মিলিয়ন বা মোট প্লাস্টিক রপ্তানির প্রায় ২৯ শতাংশ ছিল।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, প্লাস্টিক খেলনা শিল্প দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে এবং একই সঙ্গে দেশে এর বিনিয়োগ বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান নতুন শিল্পের জন্য কর্মসংস্থানও বাড়ছে।

এ খাতকে রপ্তানির চালিকা শক্তিতে সমৃদ্ধ করতে সরকার থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, কমপ্লায়েন্স ইস্যু এখন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কমপ্লায়েন্স ইস্যু না মানলে বাণিজ্যে সমস্যা হয়। তাই শিল্পগুলোকে আধুনিকায়ন করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের উপযোগী করে তোলা দরকার। অন্যদিকে, খেলনা রপ্তানি করতে হলে পণ্যের মান অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে।

অতিরিক্ত সচিব ও ইসিফোরজে প্রকল্প পরিচালক মো. মনছুরুল আলম বলেন, খেলনার বাজার এক শতাব্দীরও বেশি হয়ে গেলেও বাংলাদেশে এখনো কোনো উল্লেখযোগ্য ব্র্যান্ডের খেলনা উৎপাদন শুরু হয়নি। এখনো নন-ব্র্যান্ড খেলনা রপ্তানিতে সীমাবদ্ধ। বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডের খেলনার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে চাইলে বিশ্বমানের মানসম্পন্ন পণ্য তৈরি করতে হবে। এ লক্ষ্যে সরকারকে অবকাঠামোগত সহযোগিতা, আনুষঙ্গিক আমদানিতে শুল্ক কমানোর মতো বেশ কিছু নীতিগত উদ্যোগ নিতে হবে।

বিপিজিএমইএর সভাপতি শামীম আহমেদ বলেন, আজ থেকে প্রায় ২৪ বছর আগে ১৯৯৮ সাল থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৯৮ সালে মাত্র সাতটি খেলনা পণ্য পেটেন্ট রেজিস্ট্রেশন করা হয়। হিসাব মতে— ১৯৯৯ সালে ১৫৫টি, ২০০০ সালে ৫৯টি, ২০০১ সালে ১২২টি পেটেন্ট রেজিস্ট্রেশন হয়। তেমনি ২০১৮ সালে ২৯৭টি, ২০১৯ সালে ২৩৪টি, ২০২০ সালে ১০৯টি, ২০২১ সালে ১৫৫টি এবং ২০২২ সালে অদ্যাবধি ৭১টি, সর্বমোট ২৫৫৮টি পেটেন্ট রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। খেলনা ও ক্রোকারিজ আইটেমের রেজিস্ট্রেশন বাবদ অদ্যাবধি সরকারি কোষাগারে ২ কোটি ২৭ লাখ ৪ হাজার ৩২৮ টাকা রাজস্ব হিসেবে দেওয়া হয়েছে।

খেলনা শিল্পের উন্নয়নের জন্য সরকারের একান্ত সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, খেলনা সেক্টরের বিকাশের জন্য সরকারের সব রকমের পলিসি সাপোর্ট দিতে হবে। খেলনা সেক্টর একটি শ্রম নির্ভর। প্রচুর পরিমাণে নারী শ্রমিকের কাজের সুযোগ আছে। রপ্তানিতে বড় ভূমিকা রাখার সম্ভাবনা আছে। আজ থেকে ১ দশক আগেও ৯০ শতাংশ খেলনা আমদানি নির্ভর ছিল। বর্তমানে ১০ শতাংশ আমদানি হয়, ৯০ শতাংশ দেশে তৈরি হয়।

বিপিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মো. ইউসুফ আশরাফ বলেন, প্লাস্টিক সেক্টর নানাভাবে বিকশিত হচ্ছে। প্লাস্টিক খাতের কার্যক্রম বাড়ছে। আগামীতে এ খাতের সম্ভাবনা বিশাল। প্লাস্টিক খেলনা সেক্টর দেশ পেরিয়ে বিশ্ববাজারে পদার্পণ করছে। তিনি দ্রুত প্লাস্টিক শিল্পনগরী স্থাপনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। পুরানো ঢাকার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান যাতে প্লট নিতে পারে সেজন্য মূল্য কমিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন। নকল পণ্য প্রতিরোধসহ বিভিন্ন ইস্যু সমাধানের জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কার্যক্রম পরিচালনার আহ্বান জানান।

এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, খেলনা প্লাস্টিক সেক্টরের একটি সাব-সেক্টর। এ উপখাতের উন্নয়ন দ্রুত হচ্ছে। দেশে খেলনার ব্যবহার বেড়েছে। উন্নতমানের খেলনা তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত খেলনা রপ্তানির উচ্চ বৃদ্ধির হার ছিল। খেলনা রপ্তানির প্রবৃদ্ধি হল ২৪ শতাংশ। ২৪ শতাংশ গড় প্রবৃদ্ধি নিয়ে ২০৩০ সালের জন্য অনুমান করা হচ্ছে খেলনা রপ্তানি প্রায় ৪৬৬ দশমিক ৩১ মিলিয়ন ইউএস ডলার হবে। এ বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে ২৮তম বৃহত্তম খেলনা রপ্তানিকারক দেশে দাঁড়াতে পারে। বিশ্বমানের মানসম্পন্ন পণ্য ত্বরান্বিত করে নতুন বাজারে রপ্তানির চেষ্টা করতে হবে।

জসিম উদ্দিন বলেন, আমরা সবসময় সেক্টরের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। কাচাঁমালের ওপর ডিউটি কমানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। অন্যদিকে, দেশীয় শিল্পরক্ষায় আমদানি করা ফিনিশড পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানোর দাবি করছি। কমপ্লায়েন্স ইস্যু বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বলেন, বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতার স্বার্থে কমপ্লায়েন্স ফ্যাক্টরিতে রূপান্তর করতে হবে। সেক্টরের উন্নয়নের জন্য পণ্য বহুমুখীকরণ ও উন্নত পণ্য উৎপাদনের ওপর তিনি জোর দেন।

(ওএস/এএস/জুন ০৮, ২০২২)