স্টাফ রিপোর্টার : ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা খাতে বরাদ্দ বাড়ছে। এবার এ খাতে প্রস্তাবিত বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। গত বছর অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। সে তুলনায় এ খাতে বরাদ্দ বেড়েছে চার হাজার ১৩২ কোটি টাকা।

বৃহস্পতিবার (৯ জুন) বিকেলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল প্রাক্কলিত ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট উত্থাপন করেন, যা জিডিপির ১৫ দশমিক ২ শতাংশ। এসময় তিনি এসব তথ্য জানান।

বাজেট প্রস্তাবনায় অর্থমন্ত্রী পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট চার লাখ ৩১ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে দুই লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন।

স্বাস্থ্যখাতের জরুরি চাহিদা মেটাতে থোক বরাদ্দ

বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়, বিগত দুটি বাজেটেই কোভিড-১৯ মোকাবিলা ও স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য বিপুল বরাদ্দ রাখা হয়। স্বাস্থ্যখাতের যে কোনো জরুরি চাহিদা মেটানোর জন্য ওই দুই বছরের বাজেটে ১০ হাজার কোটি টাকা করে থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছিল।

যদিও দেশে করোনা সংক্রমণ বর্তমানে অনেকটাই স্তিমিত হয়ে এসেছে, কিন্তু এর সম্ভাব্য পুনরাবির্ভাবের আশঙ্কা এখনও রয়ে গেছে। কারণ বিশ্বের অনেক দেশেই এখনও এ অতিমারির প্রকোপ বিদ্যমান। সুতরাং কোভিড-১৯ মোকাবিলা ও এর ফলে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সংঘটিত ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে আগামী অর্থবছরেও স্বাস্থ্যখাতের জরুরি চাহিদা মেটানোর জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

মৌলিক গবেষণায় ফের ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব

দেশে চিকিৎসা বিজ্ঞানের মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণার অবকাঠামো তৈরি ও গবেষণা কার্যক্রম প্রবর্তন করা, গবেষণালব্ধ জ্ঞান দেশের স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্য শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, অনুজীব বিদ্যা, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদির সার্বিক উন্নয়নে ও স্বাস্থ্য খাতের নতুন উদ্ভাবনের সক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদি লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিগত অর্থবছরে ১০০ কোটি টাকার একটি ‘সমন্বিত স্বাস্থ্য-বিজ্ঞান গবেষণা ও উন্নয়ন তহবিল’গঠন করা হয়।

এ তহবিলকে কার্যকরভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে ‘সমন্বিত স্বাস্থ্য-বিজ্ঞান গবেষণা ও উন্নয়ন তহবিল কার্যক্রম পরিচালনা সম্পর্কিত নীতিমালা-২০২০’ প্রণয়ন করা হয় এবং এ নীতিমালার আলোকে জাতীয় পর্যায়ের গঠিত কমিটি কাজ করছে। চলতি অর্থবছরে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে ২৩টি গবেষক/গবেষণা প্রতিষ্ঠান মৌলিক গবেষণা কার্যক্রম শুরুর জন্য নির্বাচিত হয়েছে।

সরকারি পর্যায়ে টিকা উৎপাদন ইউনিট স্থাপন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুসারে করোনাভাইরাসসহ সব ধরনের টিকা উৎপাদনের জন্য দেশে একটি মানসম্মত প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি গোপালগঞ্জে একটি টিকা উৎপাদন ইউনিট স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। এতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে। টিকার জন্য বিদেশ নির্ভরতা লাঘবে এ প্রতিষ্ঠানে পর্যায়ক্রমে একটি আন্তর্জাতিক মানের টিকা গবেষণা ও উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত করা হবে।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে নানা উদ্যোগ

কোভিড-১৯ হতে জনজীবন সুরক্ষার জন্য দ্রুত পরিকল্পনা গ্রহণ ও বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। করোনা সংক্রমণরোধে প্রধান কার্যক্রমসমূহ হচ্ছে- দেশব্যাপী ৮৭৯টি কোভিড টেস্টিং ল্যাব স্থাপন, সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসায় ৮৯টি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল প্রস্তুত করা, সারাদেশে মোট ১৩ হাজার ১৯৩টি কোভিড আইসোলেশন বেড ও এক হাজার ১৭৪টি কোভিড আইসিইউ বেড প্রস্তুত রাখা, ১১৯টি কেন্দ্রে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপন, তিন ধাপে প্রায় ১০হাজার ডাক্তার নিয়োগ, ৫০ শয্যায় উন্নীত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসমূহে ১০টি করে জুনিয়র কনসালটেন্টের (বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক) পদ সৃষ্টি ইত্যাদি। এছাড়া, দায়িত্ব পালনকালীন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুজনিত কারণে ক্ষতিপূরণ ও করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্মানি প্রদান করা হয়।

কোভিড-১৯ সংক্রমণ হতে সুরক্ষায় ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম

কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ রোধ করে জনজীবন সুরক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী সরকার দেশের সব নাগরিককে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম চলমান আছে। প্রথমে মোট ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা করা হয় এবং পরবর্তীতে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুসারে তা ৭০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। এক্ষেত্রে শুরুতে ঝুঁকিপূর্ণ জনগণকে টিকা দেওয়া হলেও পরবর্তীতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণ ও ভাসমান জনগোষ্ঠীসহ ১২ বছরের ঊর্ধ্বের সব নাগরিক টিকা প্রদান কার্যক্রমের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রদানের সেন্টার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমনরোধে ২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম ডোজের টিকা ও ৮ এপ্রিল দ্বিতীয় ডোজ এবং পরবর্তীতে প্রদেয় বুস্টার ডোজে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত টিকা প্রদান করা হয়। টিকা প্রদানে জেন্ডার সাম্যতা বিধান করা হয়। রাজধানীসহ সারাদেশে এ পর্যন্ত ১২ কোটি ৯ লাখ প্রথম ডোজ, ১১ কোটি ৮ লাখ কোটি ২য় ডোজ এবং এক কোটি ৫ লাখ বুস্টার ডোজ প্রদান করা হয়।

করোনাভাইরাসের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের আকার হচ্ছে ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এবারের বাজেটের আকার যেমন বড়, তেমনি এ বাজেটে ঘাটতিও ধরা হয়েছে বড়।

অনুদান বাদে এই বাজেটের ঘাটতি দুই লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির সাড়ে ৫ শতাংশের সমান। আর অনুদানসহ বাজেট ঘাটতির পরিমাণ দুই লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ৪০ শতাংশের সমান।

এটি বর্তমান সরকারের ২৩তম এবং বাংলাদেশের ৫১তম ও বর্তমান অর্থমন্ত্রীর চতুর্থ বাজেট। বাজেটে সঙ্গত কারণেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কৃষিখাত, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ, কর্মসংস্থান ও শিক্ষাসহ বেশকিছু খাতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

(ওএস/এসপি/জুন ০৯, ২০২২)