টাফ রিপোর্টার : ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বৈদেশিক মুদ্রা সুরক্ষায় বিলাসবহুল পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে কিছু পণ্যের ওপর যোগ হয়েছে শুল্ক ও কর। ফলে সেসব পণ্যের দাম বাড়ছে।

বৃহস্পতিবার (৯ জুন) জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনায় এ তথ্য জানান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এটি বর্তমান সরকারের ২৩তম, বাংলাদেশের ৫১তম ও বর্তমান অর্থমন্ত্রীর চতুর্থ বাজেট।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে মূল লক্ষ্য সক্ষমতার উন্নয়ন। বৈশ্বিক ঝুঁকি কাটিয়ে অর্থনীতির স্থিতিশীলতার সঙ্গে জনজীবনে স্বস্তি ফেরানো অন্যতম উদ্দেশ্য। আসছে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের সম্ভাব্য আকার ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।

যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে
আমদানিকরা বিলাসী পণ্য যেমন-বডি স্প্রে, প্রসাধনী পণ্য, জুস, প্যাকেটজাত খাদ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে আমদানিতে নতুন করে শুল্ক আরোপ হতে পারে। যদিও ইতোমধ্যে গত ২৩ মে এক প্রজ্ঞাপনে বিদেশি ফল, বিদেশি ফুল, ফার্নিচার ও কসমেটিকসজাতীয় প্রায় ১৩৫টি এইচএস কোডভুক্ত পণ্যের ওপর আমদানি পর্যায়ে বিদ্যমান ৩ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করা হয়। প্রস্তাবিত বাজেটে ওই তালিকা আরও দীর্ঘ হতে পারে।

তামাকজাত পণ্য
অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কারণে এবার বৃদ্ধি পাচ্ছে তামাকজাত পণ্যের মূল্য। স্ল্যাব অনুসারে শুল্ক আরোপ হয়েছে।

স্মার্টফোন
দেশীয় পণ্য সুরক্ষায় শুল্ক আরোপে আমদানি করা স্মার্ট মোবাইল ফোনের দাম আরেক দফায় বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে সুবিধা পাবে দেশীয় কোম্পানিগুলো।

রেলের টিকিট
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত/তাপানুকুল সার্ভিসের পাশাপাশি প্রথম শ্রেণির রেলওয়ে সেবার ওপর ১৫ শতাংশ মূসক আরোপের প্রস্তাব করায় রেল ভ্রমণে লাগবে বাড়তি খরচ। তবে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক উড়োজাহাজ আমদানির ক্ষেত্রে আগাম কর অব্যাহতি প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সোলার প্যানেল
বর্তমানে সোলার প্যানেল আমদানিতে শূন্য শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রযোজ্য রয়েছে। দেশীয় সোলার সেক্টরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমদানি করা সোলার প্যানেলের ওপর বিদ্যমান আমদানি শুল্ক শূন্য শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ১ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিদেশি কফি
বাড়ছে বিদেশ থেকে আমদানি করা কফির দামও।

বিলাসবহুল গাড়ি
মূল্যবৃদ্ধি তালিকায় যুক্ত হচ্ছে বিলাসবহুল গাড়ি। ৪০০০ সিসির ওপর বিলাসবহুল রিকন্ডিশন গাড়িতে সম্পূরক শুল্ক, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ও আগাম কর এবং ভ্যাট মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৮০০ শতাংশে করহার প্রস্তাব করা হয়েছে।

রেফ্রিজারেটর
রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার উৎপাদনের ক্ষেত্রে স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে অব্যাহতি প্রত্যাহার করে ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এতে ফ্রিজের দাম বাড়তে পারে।

অবশ্য ফ্রিজ তৈরির উপকরণ ও যন্ত্রাংশ আমদানি এবং স্থানীয় ক্রয়ের ক্ষেত্রে কর ছাড় সুবিধা রয়েছে। তা ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

বাটার ও চিজ
বাটার ও চিজ বা পনির পণ্য দুটি সমজাতীয় উল্লেখ করে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বাটার আমদানিতে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বিদ্যমান থাকলেও চিজ আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক আরোপিত নেই। তাই বাটারের মতো চিজ আমদানিতে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

মুঠোফোনের বিদেশি চার্জারে
দেশে উৎপাদিত মুঠোফোন উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানকে আরও বিকশিত করার লক্ষ্যে বিদেশি চার্জারের আমদানি শুল্ক ১৫ শতাংশ হতে বৃদ্ধি করে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে।

গ্যাস লাইটার
বর্তমানে দেশে গ্যাস লাইটার বা দেশলাই উৎপাদিত হচ্ছে। তাই দেশীয় শিল্পের সুরক্ষার জন্য পণ্যটি আমদানির ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। একই বিবেচনায় লাইটারের যন্ত্রাংশের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ হতে বৃদ্ধি করে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

ওয়াটার পিউরিফায়ার
বাসাবাড়িতে পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য ব্যবহৃত ওয়াটার পিউরিফায়ারের আমদানি শুল্ক ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে।

ক্যাশ রেজিস্ট্রার
ব্যবসার ক্যাশ রেজিস্ট্রার আমদানি শুল্ক শূন্য শতাংশ। অপরদিকে টিকিট ক্যালকুলেটিং যন্ত্রের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ। মেশিন দুটি প্রায় একই ধরনের হওয়ায় শুল্কহার সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া প্রয়োজন। তাই ক্যাশ রেজিস্ট্রারের ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।

বিদেশি পাখি
বর্তমানে দেশে বিলাসবহুল পাখি আমদানি হচ্ছে। উক্ত পণ্যের ওপর ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রযোজ্য রয়েছে। পাখিগুলো বিলাসবহুল বিধায় আলোচ্য ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ হতে বৃদ্ধি করে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

করোনাভাইরাসের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের আকার হচ্ছে ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এবারের বাজেটের আকার যেমন বড়, তেমনি এ বাজেটে ঘাটতিও ধরা হয়েছে বড়।

অনুদান বাদে এই বাজেটের ঘাটতি দুই লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির সাড়ে ৫ শতাংশের সমান। অনুদানসহ বাজেট ঘাটতির পরিমাণ দুই লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ৪০ শতাংশের সমান।

এটি বর্তমান সরকারের ২৩তম এবং বাংলাদেশের ৫১তম ও বর্তমান অর্থমন্ত্রীর চতুর্থ বাজেট। বাজেটে সঙ্গত কারণেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কৃষিখাত, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ, কর্মসংস্থান ও শিক্ষাসহ বেশকিছু খাতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

(ওএস/এএস/জুন ১০, ২০২২)