স্টাফ রিপোর্টার : ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন পদত্যাগ করেছেন।

মঙ্গলবার (১৪ জুন) তিনি অর্থমন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন। মন্ত্রণালয় তার পদত্যাগপত্র গ্রহণও করেছে।

বুধবার (১৫ জুন) যেকোন সময় আইডিআরএ চেয়ারম্যানের পদ থেকে এম মোশাররফ হোসেনের পদত্যাগ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হবে। সেই সঙ্গে আইডিআরএ’র নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে গতকাল মঙ্গলবার আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান পদ থেকে ড. এম মোশাররফ হোসেন পদত্যাগ করেছেন। আজ বুধবার তার পদ শূন্য ঘোষণা করে নির্দেশনা জারি করা হবে।

সূত্র আরও জানায়, আজই আইডিআরএ’র নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হবে। নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন সাবেক সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারী। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে আজই নতুন চেয়ারম্যানের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

ড. এম মোশাররফ হোসেন ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল আইডিআরএ’র সদস্য (লাইফ) হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর ২০২০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তাকে তিন বছরের জন্য সংস্থাটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সে হিসেবে ২০২৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার এক বছর আগেই তিনি পদত্যাগ করলেন।

আইডিআরএ’র চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার পর এম মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। চেয়ারম্যানের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পেয়েই ক্ষমতার অপব্যবহার করে অযোগ্য বক্তিকে একটি বিমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিএই) হিসেবে নিয়োগ দেন মোশাররফ হোসেন।

এছাড়া চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েই ডেল্টা লাইফ নিয়ে বিতর্কে জড়ান তিনি। ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর ডেল্টা লাইফের পক্ষ থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ করা হয়, আইডিআরএ চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেন ৫০ লাখ টাকা ঘুস দাবি করেছে। দুদকে অভিযোগ করার পর ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করেও একই অভিযোগ করা হয়। এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ডেল্টা লাইফের সাবেক সিইও আদিবা রহমান।

ডেল্টা লাইফ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ করার এক সপ্তাহের মাথায় ১১ ফেব্রুয়ারি কোম্পানিটিতে প্রশাসক নিয়োগ দেয় আইডিআরএ। আইডিআরের সাবেক সদস্য সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লাকে প্রথম প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। চার মাস না যেতেই গত বছরের জুনে তার নিয়োগ বাতিল করে নতুন প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। দ্বিতীয় প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয় সরকারের সাবেক যুগ্ম সচিব মো. রফিকুল ইসলামকে।

তবে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে গত বছরের ১০ অক্টোবর প্রশাসক পদ থকে পদত্যাগ করেন মো. রফিকুল ইসলাম। এরপর অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে জীবন বিমায় তৃতীয় প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। এ দফায় প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পান আইডিআরএ’র আরেক সাবেক সদস্য মো. কুদ্দুস খান।

ডেল্টা লাইফে এ প্রশাসক নিয়োগ নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সম্প্রতি বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এম মোশাররফের বিরুদ্ধে ৪০ কোটি টাকার বেশি দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে বলে আদালতে জমা দেওয়া প্রতিবেদন উল্লেখ করেছে।

দুদকেও এই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ জুন দুদক থেকে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আইডিআরএ চেয়ারম্যানের কাছে সম্পদের হিসাব চাওয়া হয়েছে। নোটিশ পাওয়ার ২১ কার্যদিবসের মধ্যে তাকে দুদকের কাছে সম্পদ বিবরণী জমা দিতে বলা হয়েছে।

এম মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে শেয়ার ব্যবসা করার অভিযোগও রয়েছে। একদিকে তিনি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) কোটা সুবিধা নিয়ে শেয়ার কেনেন, অন্যদিকে তিনি বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান হয়েও বিভিন্ন বিমা কোম্পানির শেয়ার কিনেছেন। এমন কিছু কোম্পানির শেয়ারে তার বিনিয়োগ ছিল, যেগুলোর দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ে।

(ওএস/এসপি/জুন ১৫, ২০২২)