এসকে সুলতান, আশুলিয়া : সাভারের বনগাঁও ইউনিয়নে অবৈধভাবে আবাসিক গ্যাস ব্যবহার করে চলছে অনুমোদনহীন কয়েল তৈরির কারখানা। এতে একদিকে যেমন লাখ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। অপরদিকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব এলাকায় বসবাস করছেন সাধারণ মানুষ। 

তিতাস কর্তৃপক্ষ এসকল অবৈধ কারখানায় মাঝেমধ্যে অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিছিন্ন করলেও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় গ্যাস লাইন পুনরায় সংযোগ নিয়ে দির্ঘদিন ধরে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।

বুধবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাভার উপজেলার বনগাঁও ইউনিয়নের নগরকোন্ডা দাস পাড়া এলাকায় সাদেক আলী নামে এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে ইঙ্গেল ম্যাক্স নামে কয়েল প্রস্তুত ও বিক্রি করে আসছেন। কারখানাটির ভিতরে দেখা যায় পাশের বাড়ি থেকে লাইন টেনে এনে দিনের পর দিন অবৈধভাবে ব্যবহার হচ্ছে তিতাস গ্যাস। এসকল কয়েল তৈরির কারখানাগুলো বাহির থেকে তালা ঝুলিয়ে ভেতরে অপ্রাপ্ত বয়স্ক শ্রমিক ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলছে কার্যক্রম । এসবের বেশিরভাগ কারখানাই ফায়ারইকুপম্যান্ট দেখা যায়নি। একটি দুর্ঘটনায় মারা যেতে পারেন কারখানার সকল শ্রমিক। অপরিচিত কোনো ব্যক্তিকে কারখানার ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ অভিযান চালানোর পর কয়েক মাস ব্যবসা বন্ধ করে কারখানাগুলো অনত্র স্থানান্তর করে পূর্বে ন্যায় এই অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। এই অবৈধ ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগ মালিকেরই পরিবেশের ছাড়পত্রসহ নেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। এক্ষেত্রে বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে প্রতিনিয়তই চলছে তাদের কাজ।

এসবের ছবি তুলতে গেলে কারখানাটির মালিক সাদেক আলী এই প্রতিবেদককে সংবাদ না করতে অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, অনেক জনকে ম্যানেজ করেই দির্ঘদিন ধরে চলে আসছে এ ব্যবসা। আপনারা আসছেন চা নাস্তা খাওয়ার জন্য কিছু দিয়ে চলে যান।

সাদেক আলীর পাশেই শরিফুল ইসলাম নামে আরেক ব্যক্তি বিভিন্ন ব্যান্ডের কয়েল তৈরি ও বিক্রি করে আসছেন। বনগাঁওসহ আশপাশের এলাকায় একাধিক কয়েল কারখানার মালিক তিনি। এ ব্যবসা করে তিনি অবৈধভাবে কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ হলে তিনি বলেন, আপনারা একটু আমার কারখানার সামনে অপেক্ষা করেন আমি ম্যানেজারকে পাঠাচ্ছি আপনাদের সাথে কথা বলতে।

একই এলাকায় প্রায় ৫ বছর ধরে এ ব্যবসা করে আসছেন আব্দুল খালেক। সাংবাদিকদের দেখে প্রথমে উচ্চস্বরে তিতাসের লোকজনকে নিয়ে আসেন বললেও পরে সাংবাদিকদের ম্যানেজ করতে ঘুরেন পেছন পেছন। অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়ে কিভাবে ব্যবসা করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সারা দেশে অবৈধভাবে এ ব্যবসা চলছে, তাই আমরাও করছি। এরমধ্যে প্রশাসন ও সাংবাদিকদের কিছু দিয়ে কোনমতে করতেছি ।

ওই এলাকায় হানিফ নামের আরও একজন করে আসছেন অবৈধভাবে কয়েল তৈরির ব্যবসা। এক এলাকায় এতগুলো কয়েল কারখানা হওয়ায় দিনের পর দিন ভোগান্তি বাড়ছে স্থানীয়দের।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এক এলাকায় একাধিক কলকারখানার কারণে একদিকে যেমন নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। পাশাপাশি অবৈধভাবে এসব কারখানায় গ্যাস পোড়ানোর ফলে বিভিন্ন সময় গ্যাস সংকট দেখা যায় বাসাবাড়িতে।

পাশের এলাকায় সেলফী ম্যাক্স নামে কয়েল তৈরি করছেন মজিবর। একটি দোতলা বিল্ডিংয়ে ভেতরে দীর্ঘদিন যাবত কয়েল তৈরীর কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন তিনি। পাশের বাড়ির আবাসিক সংযোগ থেকে লাইন টেনে এনে অবৈধভাবে কারখানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। আবাসিক এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মজিবর বলেন, এটি অবৈধ না। বৈধ লাইন থেকে আমরা ব্যবহার করছি।

স্থানীয় রঞ্জু মিয়া বলেন, তিতাস গ্যাস অভিযান পরিচালনা করে জেল জরিমানা করে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে যাওয়ার সপ্তাহ খানেক পর পুনরায় গ্যাস সংযোগ দিয়ে ব্যবসা শুরু করে। এদের বিরুদ্ধে এর চেয়েও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সাভার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপক আবু সাদাৎ মো. সায়েম বলেন, অবৈধ তিতাস গ্যাস ব্যবহারকারী সকল কারখানা ও বাসাবাড়িতে আমাদের অভিযান পরিচালনা অব্যাহত আছে। ইতিমধ্যে অনেক জনকে জেল জরিমানা করা হয়েছে। আমাদের এ অভিযান চলবে।

(এসকেএস/এসপি/জুন ১৫, ২০২২)