লতিফ নুতন, সিলেট : সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলা ও হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল বন্যায়  প্লাবিত হয়েছে। সরকারের ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। পাহাড়ি ঢলে কুশিয়ারা,সুরমা ও সুনাই নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়াতে নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

বিয়ানীবাজার উপজেলার ১০ ইউনিয়ন ও পৌরসভার অধিকাংশ এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। উপজেলার সুরমা নদীর তীরবর্তী আলীনগর ও চারখাই ইউনিয়ন এবং কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী দুবাগ, শেওলা, কুড়ারবাজার, মাথিউরা এবং সোনাই নদীর তীরবর্তী তিলপাড়া, মোল্লাপুর, লাউতা ও মুড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

কবলিত এলাকার প্রধান সড়কসহ উপজেলা ও গ্রামীন সড়কের ৮০ ভাগ তলিয়ে গেছে। শনিবার রাত থেকে এসব এলাকায় দুই ফুটের কাছাকাছি পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন উপজেলার দুই লাখ মানুষ। বন্যায় কবলিত হওয়ায় উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে।

রবিবার (১৯ জুন) সকাল নয়টায় কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এবং সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কুশিয়ারা নদীর শেওলা ইউনিয়নের কাকরদিয়া ও আলীপুর এলাকার ডাইক ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। নদীর ভাঙ্গা ডাইক মেরামত করছেন দুর্গত এলাকার তরুণরা।

বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে শেওলা সাবস্টেশন এলাকা। তবে পল্লী বিদ্যুৎ স্থানীয় বাসিন্দাদের কথা বিবেচনা করে সাবস্টেশন থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে যে কোন সময় এ সাবস্টেশনটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

এদিকে জেলা প্রশাসন থেকে বন্যার্তদের জন্য ৩৩ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ দেড় লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ত্রাণ সহায়তার মধ্যে ২২ মেট্রিকটন চাল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে বিতরণ করা হচ্ছে। একই সাথে বন্যায় আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা পরিবারকে শোকানো খাবার বিতরণ করবে উপজেলা প্রশাসন।

বিয়ানীবাজার উপজেলার প্রস্তুত রাখা ২৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে রোববার সকাল পর্যন্ত ৮৬টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় আশ্রিত পরিবারের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।

সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণসহ দুর্গত এলাকায় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ত্রাণ সহায়তা পোঁছানো হচ্ছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশিক নূর জানান, কবলিত এলাকায় ত্রাণ সহায়তা পাঠানো হয়েছে। বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র থেকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। একই সাথে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও শিক্ষকসহ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গদের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক থাকার জন্য আহবান করা হয়েছে।
নবীগঞ্জ

এদিকে টানা বৃষ্টিপাত এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে নবীগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শনিবার রাত থেকে রোববার পর্যন্ত প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা। নতুন করে বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে উপজেলার ১নং বড় ভাকৈর পশ্চিম ইউনিয়নের ৮/১০টি গ্রাম। বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ইউনিয়নের বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন।

জানা গেছে, দু’দিন ধরে জগন্নাথপুর বাজার সংলগ্ন পাড় ভেঙ্গে ও আমড়াখাই এলাকায় বিবিয়ানা নদীর পানি দ্রুত বেগে প্রবেশ করছে। সৈয়দপুর-ইনাতগঞ্জ সড়কের প্রায় ১ কিলোমিটার জুড়ে রাস্তার উপর হাঁটু,কোন জায়গায় কোমর পানি রয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন।

বান্দের বাজার টু কসবা সড়কের উপর দিয়ে প্রচন্ড বেগে পানি ঢুকছে। এছাড়া কসবা গ্রামের বেশীর ভাগ মানুষই পানিবন্দি রয়েছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে কলাগাছের ভেলা দিয়ে যাতায়াত করতে দেখা গেছে। তবে কুশিয়ারা নদীর পানি কিছুটা থমকে যাওয়ায় ডাইক এর অবস্থা স্বাভাবিক রয়েছে। শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত রাত জেগে ডাইকের পাড়ের মানুষ পাহারা দিয়েছেন। যদিও নদীর তীরবর্তী বেশ কয়েকটি গ্রামসহ উপজেলার প্রায় কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে নবীগঞ্জে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। কুশিয়ারা নদীর পাড় এলাকায় প্রায় ২/৩ ইঞ্চি পানি কমলেও অন্য এলাকায় দ্রুত বাড়ছে পানি। বন্যার সার্বিক পরিস্থিত ভয়াবহ আকার ধারণ করতে যাচ্ছে।

উপজেলার দীঘলবাক ও ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি গ্রামে পানি ঢুকে প্রবল বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। তলিয়ে গেছে গ্রামীণ জনপদের রাস্তাঘাট। ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের ইনাতগঞ্জ বাজারসহ ৩০/৩৫ গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। তাছাড়া ইনাতগঞ্জ-সৈয়দপুর সড়কের মোস্তফাপুর থেকে পাঠানহাটি পর্যন্ত রাস্তা তলিয়ে গেছে। ঝুঁকি নিয়ে করছে যানবাহন চলাচল করছে। বড় ভাকৈর (পশ্চিম) ইউনিয়নে ইতিমধ্যে জগন্নাথপুর, সোনাপুর, ফতেহপুর, চৌকি, আমড়াখাই ও চরগাঁও গ্রামে কমপক্ষে ৫ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি রয়েছেন।

উপজেলায় সরকারিভাবে ১৩টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। করগাঁও ইউনিয়নে কমপক্ষে ৫/৭টি গ্রাম বন্যায় আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান নির্মলেন্দু দাশ রানা।

তিনি বলেন, ইতিমধ্যে দুর্গাপুর প্রাইমারী স্কুলে ৫টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। শেরপুর অসংখ্য পরিবারকে সরিয়ে আনা হয়েছে। উপজেলার হাইস্কুল ও কলেজ গুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে গালিমপুর ও মাধবপুর স্কুলে আশ্রয় কেন্দ্রে শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। নাদামপুর স্কুল এন্ড কলেজে ৮টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। ইনাতগঞ্জ হাই স্কুল ও প্রাইমারী স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় দু’শতাধিক পরিবার। মোস্তফাপুর মাদ্রাসায় ২৫ পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। মতিউর রহমান হাইস্কুলে ১১টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া জগন্নাথপুর এসএনপি উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ, চৌকি প্রাইমারী স্কুল ও বিবিয়ানা স্কুলে প্রায় শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

জগন্নাথপুর হাইস্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সুনীল পুরকায়স্থ জানান, ১নং ইউনিয়নে ৮/১০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। রাতেই এর পরিমান বাড়তে পারে বলে তিনি জানান।

(এলএন/এসপি/জুন ২০, ২০২২)