জে.জাহেদ, চট্টগ্রাম : টানা তিন দফায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় নব্য আওয়ামী লীগার, হাইব্রিড, অনুপ্রবেশকারী ও সুবিধাবাদীদের দাপটে চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে দলের অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। এ নিয়ে সঙ্গত কারণে নীতিনির্ধারকরা চিন্তিত। অনেকেই আবার আতঙ্কিত। কেনোনা আগামী রাজনীতি উপজেলায় কোন দিকে আগাচ্ছে, হিসাব কষেও মিলাতে পারছেন না।

সূত্র বলছে, এসব অনুপ্রবেশকারীরা শুধু তৃণমূলেই নয়, উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও মুল দলের ভ্রাতৃপ্রতিম ও সহযোগী সংগঠনেও ঢুকে পড়ছে। ২০১০ সালে মুলত তাঁদের উত্থান। ২০১৩ সালে অনেকেই দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের পদ বাগিয়ে নেন। ২০১৭ সালে অনেকেই জনপ্রতিনিধি হয়ে চেয়ারে বসেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি হলেও তা নিয়েও রয়েছে নানা কথা। ওই কমিটি জেলা কিংবা কেন্দ্র অনুমোদিত দিয়েছেন বলে কোন সত্যতার খবর গণমাধ্যমে আসেনি। অনুপ্রবেশ নিয়ে দলের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক তোলপাড়। জন্ম দিয়েছে নানা আলোচনা ও সমালোচনার। এতে দলের ভাবমূর্তিও নষ্ট হয়েছে। ফলে অনুপ্রবেশের কারণ চিহ্নিত করে তা ঠেকাতে দল থেকে বারবার তাগিদ দিলেও থামানো যাচ্ছে না এসব অনুপ্রবেশ।

বিভিন্ন সূত্র জানায়, কর্ণফুলীতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কমিটি থাকলেও সাংগঠনিক কোন কর্মকান্ড নেই। নেতাদের মাঝে রয়েছে নানা চাপা দ্বন্ধ। কোন কর্মসুচিতেও তাঁদের এক সাথে দেখা যায় না। সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ ও বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনেরও দীর্ঘদিনের সম্মেলন ও নতুন কোন কমিটি নেই। সভাপতি-সম্পাদক ছাড়া কেউ কাউকে চিনেও না। এ ছাড়া মহিলা আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগের সাংগঠনিক অবস্থাও দুর্বল।

অভিযোগ রয়েছে-বিএনপি জামায়াতের একাধিক নেতাকর্মী, জাপার ছাত্রসমাজ ও কলেজ ছাত্রদলের সভাপতির ও ঠাঁয় হয়েছে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের কমিটিতে। জায়গা হয়েছে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের পুনার্ঙ্গ কমিটিতে ছাত্রদল নেতার, বিএনপি করা পাঁচ নাশকতা মামলার আসামির ভাইও পেয়েছে সম্পাদকীয় পদ। এক বিএনপি নেতার তিন ভাই নিয়েও নানা সমালোচনা। একজন জেলা নগর বিএনপি এর সক্রিয় নেতা। আরেকজন সিলেট মহানগর এর দুর্র্ধষ শিবির ক্যাডার। আরেকজনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা। তাঁরাও একটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নতুন সদস্য হিসেবে ফরম নিয়েছেন।

এ ছাড়া এক নব্য আওয়ামী লীগ নেতার আরেক শালা জামায়াতের ক্যাডার ও সাথী। দক্ষিণ জেলা এক বিএনপি নেতার ভাগ্নে জামাই। ২০১৩ সালের নির্বাচনে বিপক্ষীয় দলের এক এমপি প্রার্থী’র প্রস্তাবকারী ছিলেন। এরাও বর্তমানে বোল পাল্টিয়ে দলের ছত্রছায়ায়। এসব ঘটনা তৃণমুল নেতাকর্মীকে ব্যতিত করলেও কারো মুখ খোলার সাহস নেই। কারণ নিয়ন্ত্রণ এখন অনুপ্রবেশকারীদের দখলে বলে স্থানীয় নেতারা চাপা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সদস্য বলেন, ‘দলে কাউকে কোন পদ ইচ্ছা করেই দিয়ে দিতে পারে না। যারা প্রবেশ করেছে তারা দলের কোনো না কোন নেতার মাধ্যমে আসে। ফলে আমরা অনেক সময় কিছু বলতে চাইলেও বলতে পারি না। তবে যদি কোনো ধান্ধাবাজ, সুবিধাভোগী দলে অনুপ্রবেশ করে, তাদের বিরুদ্ধে সতর্ক এবং দল থেকে বহিষ্কার করা জরুরী। কিন্তু এ পদক্ষেপ নেবে কে?

দক্ষিণ জেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময় উপলব্ধি করে বলেছেন-৭৫ পরবর্তী ৯৬ ও ২০০১ থেকে ২০০৭ সালে দলের দুঃসময়ে যারা পাশে ছিলেন তারাই মূলত প্রকৃত আওয়ামী লীগার ও ত্যাগি। বর্তমানে নব্য আওয়ামী লীগার ও দুর্নীতিবাজদের দাপটের সময়ে এসব ত্যাগি কর্মীদের মূল্যায়ন করা সময়ের দাবি।’

জানতে চাইলে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ‘অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। এদের কোনোভাবেই দলীয় কোনো পদে রাখা যাবে না। আর যাদের হাত ধরে দলে আসবে, তাদের বিরুদ্ধেও কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নেবেন।’

(জেজে/এসপি/জুন ২০, ২০২২)