রাজন্য রুহানি, জামালপুর : জামালপুরে যমুনা ব্রহ্মপুত্রসহ সব নদনদীতে অব্যাহত পানি বৃদ্ধিতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছে বন্যা। জেলার দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মাদারগঞ্জ, সরিষাবাড়ী ও বকশীগঞ্জে ইতোমধ্যেই পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবার ও গো খাদ্যের সংকট।

বন্যায় প্লাবিত এলাকা ছাড়াও জেলায় ভারী বর্ষণের কারণে নিম্নাঞ্চলে পানি আটকে পড়ায় ১০৩টি প্রাথমিক ও ২২টি মাধ্যমিক স্কুলে পাঠদান সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা শিক্ষা অফিস।

এছাড়া অব্যাহত পানি বৃদ্ধিতে ডুবে গেছে ৩৬০ হেক্টর জমির ফসল।এরমধ্যে পাট ৩২০ হেক্টর, আউশ ১৫ হেক্টর ও শাকসবজি ২৫ হেক্টর। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ.এল.এম. রেজুয়ান জানিয়েছেন এই তথ্য।

জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চুকাইবাড়ী, চিকাজানী, বাহাদুরাবাদ, হাতিভাঙ্গা, পাররাম রামপুর, চর আম খাওয়াসহ ৬টি ইউনিয়নের অন্তত ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা পরিষদে বন্যার পানি প্রবেশ করায় অফিসিয়াল কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটছে। উপজেলা ক্যাম্পাসে পানি হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত উঠেছে।

বন্যার পানি যমুনার ইসলামপুরের বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার ও দেওয়ানগঞ্জের খোলাবাড়ি পয়েন্টে ৬০ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ইসলামপুর-মাহমুদপুর সড়কের আমতলী ড্রাইবেশন, পাথর্শী-আমতলী সড়কের বলিয়াদহ ড্রাইবেশন, পচাবহলা-উলিয়া সড়কের ধর্মকুড়া ড্রাইবেশন তলিয়ে গেছে। ডুবে গেছে দেলিরপার-বামনা সড়ক।

এদিকে বন্যার পানির প্রচন্ড তোড়ে মাদারগঞ্জে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন বাধের ২০০ মিটার ধসে বন্যার পানি প্রচন্ড বেগে লোকালয়ে প্রবেশ করছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুর রাজ্জাক জানান, বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় জেলায় ১০৩টি প্রাথমিক স্কুল সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এরমধ্যে উপদ্রুত এলাকা ছাড়াও ভারি বর্ষণে মাঠ ও কক্ষ নিমজ্জিত হওয়ায় বন্ধ রয়েছে কিছু বিদ্যালয়ও। তবে পানি নেমে গেলে বিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু হবে।

জেলা শিক্ষা অফিসার মনিরা মুস্তারী ইভা জানান, বন্যার পানি ঢুকায় জেলার দেওয়ানগঞ্জ ও ইসলামপুর উপজেলায় সাময়িকভাবে ২২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বিরতি রাখা হয়েছে। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গেই এসব বিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু হবে। এছাড়া উপদ্রুত এলাকার বিদ্যালয়গুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে। ইতোমধ্যেই দুটি বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খুলে দেওয়া হয়েছে এবং কয়েকটি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাঈদ জানান, গত ২৪ ঘন্টায় বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্রসহ জেলার সব নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, প্রতিটি উপজেলায় ৫০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১ লাখ টাকা ও ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

(আরআর/এএস/জুন ২২, ২০২২)