নাটোর প্রতিনিধি : নাটোরে এবার ২শ’ কোটি টাকার কোরবানীর গরু বিক্রির টার্গেট করা হয়েছে। প্রতিবারের মত এবারও কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে স্থানীয় খামারিরা গরু মোটাতাজা করন প্রক্রিয়ায় গরু লালন পালন করেছে। তবে দেশের অন্যান্য এলাকায় ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ করে গরু মোটা তাজা করলেও নাটোরে সাধারন খাবার খাইয়ে (ষ্টেরয়েড খাবার) ও পরিচর্যা করে গরুকে হৃষ্টপুষ্ট করা হয়েছে বলে স্থানীয় প্রাণি সম্পদ বিভাগ দাবি করেছে।

নাটোরের প্রানি সম্পদ বিভাগ সুত্রে জানা যায়, ঈদকে সামনে রেখে নাটোরে এবার খামার ও পারিবারিকভাবে ২৭ হাজার ৭৮০টি গরু মোটাতাজাকরণ বা হৃষ্টপুষ্ট করা হয়েছে। এরমধ্যে ১২১৭ জন খামারির মাধ্যমে ৬ হাজার ৭৫ টি এবং পারিবারিকভাবে ২১ হাজার ৭০৫টি গরু মোটাতাজা করা হয়। এসব খামার ও পারিবারিকভাবে গরুর পরিচর্যা কাজে সরাসরি ১৩ হাজার ৮৯০ জন দিনমজুরের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে এবার গরু মোটাতাজা করন প্রক্রিয়া নিয়ে দেশব্যাপী মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়ায় নাটোরে এসব দেশী জিরো ফিগার গরুর কদর বেড়েছে। গত বছর কোরবানির ঈদে গরু মোটাতাজা করে পুঁজি হারিয়েছেন নাটোর জেলার অনেক খামারি।

নলডাঙ্গা উপজেলার ঠাকুর লক্ষ্মীপুর গ্রামের মোবারক আলী জানান, গতবার তিনি চারটি গরু অল্প টাকায় কিনে এক হাতুড়ে পশু চিকিৎসকের প্ররোচনায় হরমোন ইনজেকশন এবং রাসায়নিক ওষুধ প্রয়োগ করে সেগুলো মোটাতাজা করেন। মোটা করার জন্য অবাধে ব্যবহার করেন পাম ট্যাবলেট, ষ্টেরয়েড ও ডেক্সামেথাসনের মতো ভয়ানক ক্ষতিকারক ওষুধ। তবে ব্যবহারের সময় এর ভয়াবহতা টের না পেলেও পরে এর কুফল বুঝতে পারেন । এবার তিনি সবজি ব্যবসা করছেন।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানাযায়, জেলার ৬ টি উপজেলায় স্থানীয় প্রাণি সম্পদ বিভাগের তত্বাবধান ও পরামর্শে বেশ কয়েক বছর ধরে দেশীয় খাবার খাইয়ে গরু মোটাতাজা করার কাজ চলছে। এর মধ্যে গুরুদাসপুর উপজেলার কালাকান্দার, চাঁচকৈড় হাট, বামন গাড়া গ্রামে অধিকাংশ গরুর খামার রয়েছে। গুরুদাসপুর উপজেলার আলীনগর গ্রামের গরু খামারী আকবর আলী ও কালাকান্দার গ্রামের শেখ আলমগীর হোসেন জানান, কোরবানী ঈদের অনেক আগে বিভিন্ন স্থান থেকে বাজার অনুযায়ী দামে দেশী গরু কিনে আনেন তারা।

এ সব গরুকে খৈল, ভুসি, খুদের ভাত, খড় ও সবুজ ঘাস সহ সাধারণ খাবার খাইয়ে এবং পরিচর্যা করে মোটা তাজা করে তোলেন। তবে মানব দেহের জন্য ক্ষতিকারক কোন ওষুধ তারা গরুকে খাওয়ান না। কারণ তাতে গরুর জন্য ঝুঁকি হতে পারে। যে কোন মুহূর্তে গরু মারা যেতে পারে। গরু মোটাতাজা করার পর ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজার সহ দেশের বিভিন্ন হাটে নিয়ে গিয়ে গরুগুলো বিক্রি করেন। এ ছাড়া অনেকের খামারে ক্রেতা বা পাইকাররা এসে গরু কিনে নিয়ে যায়। এতে তারা বেশ লাভবান হন। আর তাদের এ কাজের জন্য জেলায় প্রায় ১৪ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা হয়। এবার নাটোর থেকে প্রায় ২শ’ কোটি টাকার কোরবানীর গরু বিক্রি করার আশা করছে তারা। তবে স্থানীয় প্রাণি সম্পদ বিভাগ ১৬০থেকে ১৬৭ কোটি টাকা আয় হবে বলে ধারনা করছে।

জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন জানান, জেলায় কোরবানী ঈদকে সামনে রেখে ছ’টি উপজেলাতেই প্রতিবছর খামারিরা প্রচুর গরু মোটা তাজা করণ করে থাকে। এতে প্রায় ১৪ হাজার নারী পুরুষের কর্মসংস্থান হয়। প্রাণি সম্পদ বিভাগের তদারকি ও পরামর্শে জেলার খামারিরা তাদের গরুকে মোটাতাজা করতে স্বাভাবিক খাবার (ষ্টেরয়েড খাবার) খাওয়ায়। কোন রকম ক্ষতিকারক ওষুধ খাওয়ায় না। এছাড়া জেলার পশু খাদ্যের দোকানগুলোকে রাসায়নিক খাবার বা পাম্প বড়ি (ট্যাবলেট) বিক্রি হয়না।

এসব দোকানে মাঝে মধ্যে অভিযান চালানো হয়। একারনে নাটোরে কোরবানীর গরুর কদর বেশী। এছাড়া ভারতীয় গরুর আধিখ্যও কম। এবার জেলায় দেশীয় খাবার খাইয়ে ২৭ হাজার ৭৮০ টি গরু মোটা তাজা করন করা হয়েছে। জেলার হাটগুলোতে এসব গরুর ডাক্তারি পরীক্ষা করা হচ্ছে। নাটোরে এবার এই সব গরু বিক্রি করে ১৬৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা আয় হওয়ার আশা করা হচ্ছে এবার ।

(এমআর/এএস/অক্টোবর ০২, ২০১৪)