নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর রাণীনগরে শিহাব হোসেন (২২) নামে এক যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে। তবে মৃত্যুর আগ মুহুর্তে এক ভিডিও বার্তায় ওই যুবক দাবি করেন আমাকে জোর করে মেরে ফেলানোর জন্য গ্যাসের ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়েছে এমন ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর থানা পুলিশ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

জানা গেছে, উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের কুজাইল দক্ষিন পাড়া গ্রামের শেখ আমজাদ হোসেনের ছেলে শিহাব হোসেন প্রতিবেশি মোজাম্মেল হক মূসার স্কুল পড়–য়া কন্যা মোন্তাহার রিয়ার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। এরই এক পর্যায়ে ২০১৯সালে রিয়াকে নিয়ে উধাও হয় শিহাব। বিষয়টি মেয়ে পক্ষ মেনে না নেয়ায় সেই সময় শিহাবসহ তার পরিবারের ৫জনকে আসামী করে থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলায় আসামীরা সবাই জামিনে আছেন। কিন্তু এই বিষয়টি শিহাব ও রিয়ার সম্পর্কে কোন প্রভাব বিস্তার না করায় তাদের সম্পর্ক অটুট থাকে। এরই এক পর্যায়ে রিয়া গত বুধবার সকালে শিহাবের বাড়িতে যায়। বিষয়টি জানতে পেরে রিয়ার মা, খালা ও চাচা শিহাবের বাড়ি থেকে রিয়াকে ওই দিন নিয়ে আসে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে শিহাবের বাড়ির পার্শ্বে বাঁশ ঝাড়ে বিদ্যুত লাইনে কাজ করা এক মিস্ত্রী তাকে দেখতে পেয়ে তার স্বজনদের জানালে ঘটনাস্থল থেকে শিহাবকে উদ্ধার করে প্রথমে রাণীনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য নওগাঁ সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত আনুমানিক ৩টায় শিহাব মারা যায়। এঘটনায় একই গ্রামের মোজাম্মেলের কন্যা মোন্তাহার রিয়া, তার বাবা মোজাম্মেল, এবং মা খইমালাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শুক্রবার বিকেলে থানায় নেয়া হয়।

শিহাবের বাবা শেখ আমজাদ হোসেন জানান, আমার ছেলের সাথে মোজাম্মেলের মেয়ে রিয়ার সাথে সম্পর্ক ছিলো। সেই সুবাদে আমার ছেলে রিয়াকে বিয়ে করে। বিয়েটি তারা মেনে না নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে ২০১৯সালে অপহরণ মামলা করে। যা এখনো চলমান। আমার ছেলে মারা যাওয়ার আগে ভিডিওতে বলেছে, রিয়ার বাবা মোজাম্মেল এবং খালু সিদ্দিক মিলে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে জোর করে গ্যাসের ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়েছে। যার কারণে আমার ছেলে মারা গেছে। আমি এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

রিয়ার বাবা মোজাম্মেল বলেন, আমার মেয়েকে দীর্ঘদিন ধরে নানা ভাবে বিরক্ত করতো, এমনকি স্কুলে যাতায়াত করতে পারত না। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৯সালে আমার মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এব্যাপারে আদালতে মামলা চলমান আছে। গত বুধবার সকালে আমার মেয়েকে আবারো জোর করে শিহাব নিয়ে যায়। আমরা জানতে পেরে মেয়েকে আমার বাড়িতে নিয়ে আসি। শিহাব কিভাবে মারা গেলো তা আমার জানা নেই।

থানার ওসি (তদন্ত) সেলিম রেজা বলেন, শিহাবের মৃত্যুর আগে তার বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সিনিয়র অফিসারদের নির্দেশে রিয়া ও তার বাবা-মাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে শিহাবের পরিবারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোন লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(বিএস/এসপি/জুন ২৫, ২০২২)