রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : চার দিনের ব্যবধানে দু’বার ধর্ষণের শিকার এসএসসি পরীক্ষার্থী মাইমুনা ইয়াসমিন আত্মহনন মামলায় বান্ধবী এসএসসি পরীক্ষার্থী ফারহানা ইয়াসমিন পুতুলকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে সোমবার ফারহানা ইয়াসমিন পুতুল সাতক্ষীরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে বিচারক এমজি আযম তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। 

আসামী ফারহানা ইয়াসমিন পুতুল সাতক্ষীরা শহরতলীর ইটাগাছা বনলতা হাউজিং কমপ্লেক্সের মনিরুজ্জামান সরদার ওরফে লাকীর মেয়ে ও আলিয়া মাদ্রাসার পার্শ্ববর্তী পলিটেকনিক স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী।

মৃত মাইমুনা ইয়াসমিন সাতক্ষীরা শহরের দক্ষিণ কাটিয়া ঈদগাহ এলাকার আজিজুর রহমানের মেয়ে। সে নবারুন বালিকা বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।

ঘটনা ও মামলার বিবরনে জানা যায়, গত ৩ মে সাতক্ষীরা শহরতলীর ইটাগাছার বনলতা হাউজিং কমপ্লেক্স এলাকায় এক সময়কার সহপাঠীর বাড়িতে যেয়ে পূর্ব পরিচিত জেলার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইরুনিয়নের খলিষাবুনিয়া গ্রামের বুলবুল আহম্মেদ এর ছেলে রেদোয়ান হোসেন (২১) চেতনানাশক স্প্রে করে মাইমুনা ইয়াসমিনকে ধর্ষণ করে। একইভাবে গত ৭ মে সন্ধ্যার পর বাড়ির পিছনে সোহরাব হোসেনের স্ত্রী জাহেদার সহযোগিতায় গোয়ালঘরে রেদোয়ান হোসেন তাকে ধর্ষণ করে। চার দিনের ব্যবধানে ওই মেয়ে দুইবার ধর্ষিত হয়েছে এমন অভিযোগে তার বাবা আজিজুর রহমান বাদি হয়ে ৯ মে সাতক্ষীরা সদর থানায় রেদোয়ান হোসেন ও ফারহানা ইয়াসমিন পুতুল ও জাহেদার নাম উল্লেখ করে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২০০০ সালের সংশোধিত ২০০৩ এর ৯(২)/৩০ ধারায় মামলা(২০) দায়ের করেন।

মামলা রেকর্ড করার এক দিন পর ১১ মে ঘটনাস্থলে যেয়ে ও ওই দুই নারীসহ চারজনকে থানায় ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ভিকটিমের বক্তব্যের সাথে মামলায় বণিত অভিযোগ গোলমেলে মনে হওয়ায় তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ১০ মে মেয়েটি সাতক্ষীরার বিচারিক হাকিম ইয়াসমিন নাহারের কাছে ২২ ধারায় জবানবন্দি দেয়। একই দিনে সদর হাসপাতালে তার ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়। মামলার পর থেকে মেয়েটি বিমর্ষ ছিল। ৩১ মে রাত ১০টার দিকে মাইমুনা ইয়াসমিনের লাশ তার বাড়ি সংলগ্ন ঢাকায় অবস্থানকারি চাচা মুনসুর রহমানের ঘর থেকে উদ্ধার করা হয়। মেয়েকে ঘরের মধ্যে তালাবদ্ধ রেখে চাবি তার বাবা আজিজুর রহমান নিয়ে গিয়েছিলেন।

১১ মে কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ পরিদর্শক মিজানুর রহমান পলিটেকনিক স্কুল এণ্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী ফারহানা ইয়াসমিন পুতুল, প্রতিবেশী আব্দুল হাকিমের মেয়ে নবারুন মহিলা কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মুনিয়া ও কাটিয়া ঈদগাহপাড়ার জাহেদা ও মাসুদকে থানায় জিজ্ঞাসাদের জন্য নিয়ে যায়। এদের প্রত্যেককে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে গভীর রাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে মাইমুনা ইয়াসমিন মারা যাওয়ার পর একটি দালাল চক্র পুলিশের নাম করে রেদোয়ানের ফুফু রাশিদার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করে।

সাতক্ষীরা আদালত সূত্রে জানা যায়, গত ৩১ মে ফারহানা ইয়াসমিন পুতুল মহমান্য হাইকোর্ট থেকে চার সপ্তাহের জন্য অন্তবর্তীকালিন জামিন পায়। অঅদালতের নির্দেশ অনুযায়ি সোমবার সে সাতক্ষীরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে হাজির হয় তার আইনজীবী অ্যাড. মিজানুর রহমান পিন্টু ও অ্যাড. শফিউর রহমানের মাধ্যমে জামিন আবেদন করে। বিচারক এমজি আযম রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামীপক্ষের শুনানী শেষে পুতুলকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি অ্যাড. জহুরুল হায়দার বাবু সাংবাদিকদের কাছে পুতুলের জামিন আবেদন বাতিলের আদেশ সম্পর্কে নিশ্চিত করেন।

প্রসঙ্গত, মৃত মাইমুনা ইয়াসমিনের ছোট বোন (বাক প্রতিবন্ধি) এর ২০১৫ সালে শ্লীলতাহানির ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার মঙ্গলবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে রায় এর জন্য দিন ধার্য আছে।

(আরকে/এসপি/জুন ২৮, ২০২২)