বরগুনা প্রতিনিধি : বরগুনার বামনা উপজেলার প্রাণী সম্পদ বিভাগের চিকিৎসক সংকট ও জ্বরাজীর্ণ অবকাঠামোসহ নানা সমস্যায় গবাদি পশুর চিকিৎসা সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। দক্ষ পশু চিকিৎসক  সংকট, ওষুধের অপ্রতুলতা, কর্তব্যরত কর্মকর্তাদের কর্তব্যে অবহেলা,  কর্মকর্তা কর্মচারীদের খামখেয়ালীপনা এবং বিভিন্ন অনিয়ম দূর্নীতীর কারনে এই প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ের চিকিৎসা ব্যাবস্থা চরমভাবে ভেঙ্গে পড়েছে।

পশু চিকিৎসকের পদ দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে শূণ্য থাকার সুযোগে ড্রেসার সেলিম হোসেন হাতুড়ে চিকিৎসা দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ পশু চিকিৎসার অধিকাংশ ঔষধ বাজার থেকে কিনতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে ডাক্তার না থাকায় সঠিক চিকিৎসা থেকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছে এলাকার গবাদি পশুর মালিকরা।

উপজেলা প্রানী সম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, এ দপ্তরে ১১টি পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ৫ জন। উপজেলা পশু সম্পদ কর্মকর্তার পদ দেড় বছর ধরে শুণ্য। এছাড়া ভেটেরেনারী সার্জন ও সহকারী ভেটেরেনারী সার্জনের পদ শূণ্য তিন বছর ধরে। ফলে এ দপ্তরে গবাদি পশুর চিকিৎসাসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে।

বামনা উপজেলা সদরের কয়েকজন কৃষকের অভিযোগ এই প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ে হিমায়িত গরুর বীজের(কৃত্রিম প্রজনন) কার্যকারীতা অনেক কম। অনেক সময়ে একটি গরুকে ৩/৪ বার কৃত্রিম প্রজনন করাতে হয়। সরকার নির্ধারিত প্রজনন ফি ৩০ টাকা ধার্য থাকলেও গরুর মালিকদের কাছ থেকে নেওয়া হয় ৫০-৬০ টাকা। প্রাণঘাতি অনেক রোগের ঔষধ এখানে পাওয়া যায়না বলে তারা অভিযোগ করেছেন। অতিরিক্ত ফি দিয়ে ফিল্ড এ্যাসিসট্যান্ড অথবা ড্রেসারকে নিয়ে যেতে হয় গুরুতর অসুস্থ্য গরু অথবা ছাগলকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য। ফলে কৃষককে বাধ্য হয়ে ওই অনভিজ্ঞ হাতুড়ে চিকিৎসকের মাধ্যমে গবাদি পশুর কোনমতে চিকিৎসা সেবা দিতে হচ্ছে।

পশু সম্পদ দপ্তরের প্রজনন কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন আহম্মেদ জানান, ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা বদলী হয়ে যাবার পর স্থায়ী ভাবে এখানে আর কোনো কর্মকর্তা যোগদান না করায় গবাদী পশু চিকিৎসা নিতে আসা অসংখ্য মানুষকে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া বামনা উপজেলায় পোল্টি শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটলেও পোল্টি মুরগীকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য কোন চিকিৎসক নেই।

বামনা সদরের সিকদার পোলট্রি খামার মালিক মো. সফিকুল ইসলাম লিটন বলেন, হাস ও মুরগীর কোন চিকিৎসক এ হাসপাতালে নেই। চিকিৎসকের অভাবে এখানকার হাজার হাজার পোল্টি মালিককে প্রতিনিয়ত লোকসান গুনতে হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখাগেছে, দীর্ঘ দিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় পশু হাসপাতালের ভবন জ্বরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। মূল অফিস ভবনের ছাদের অধিকাংশ স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই ভবনের ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। আবার ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের অফিস করতে হচ্ছে। প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা সহ অন্যান্য কর্মচারীদের জন্য নির্মিত পাঁচটি আবাসিক ভবনের অবস্থাও নাজুক। বসবাসের অনুপোযোগী হয়ে থাকা এ ভবনগুলোর কোন সংস্কার নেই। ভবনের দরজা-জানালা নেই বললেই চলে।

স্থানীয়রা জানান, প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ে চৌহদ্দি অরক্ষিত থাকায় সন্ধ্যা নামলে আশপাশ জুড়ে চলছে গাজা, মদ ও জুয়ার আসর। এদিকে প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ও ভ্যাটেনারী সার্জন না থাকায় এখানে পশু চিকিৎসার জন্য একমাত্র ভরসা এ দপ্তরে ড্রেসার সেলিম হোসেন। তিনিই চিকিৎসা দিচ্ছেন এখানে চিকিৎসা নিতে আসা গবাদী পশুর। ড্রেসার সেলিমই এই দপ্তরের একমাত্র কর্নধার। তার বিরুদ্ধে রয়েছে চাকরী দেবার নামকরে টাকা আত্মসাৎ, ভুল চিকিৎসায় গরুর মৃত্যু নানা অভিযোগ।

কৃষকরা জানান,সহকারী ভেটেরেনারী সার্জনের চেয়ারে ডাক্তারের ভঙ্গিতে বসে থাকেন ড্রেসার সেলিম। চিকিৎসক না থাকায় তিনিই এখানে হর্তাকর্তা। পশুর মালিকের কাছ থেকে ১০০-২০০ টাকা নিয়ে পশুর সমস্যার কথা শুনে বাংলায় ঔষধের নাম লিখে প্রেসক্রিপশন করেন ড্রেসার সেলিম।

বামনা উপজেলার কালাইয়া গ্রামের মো. রফিক জানান, তিনি তার অসুস্থ গরু নিয়ে হাসপাতালে গেলে সেলিম নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে তার গরু দেখে ১০০ টাকা নিয়েছে অথচ হাসপাতাল থেকে কোন ঔষধ না দিয়ে দোকান থেকে কিনে নেওয়ার পরামর্শ দেন।

এ ব্যাপারে বরগুনা জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা বলেন, বামনা পশু সম্পদ দপ্তরে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক সংকট রয়েছে। এতে চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। ওই দপ্তরের ড্রেসার কোন চিকিৎসক নয়। সে সাধারণ প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে পারে। তবে সে চিকিৎসা কার্যকর কোন চিকিৎসা নয়। চিকৎসকের শূণ্য পদ পূরনের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

(এমএইচ/এটি/এপ্রিল ২৭, ২০১৪)