সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : ১৩ বছরের সৎ মেয়েকে গণধর্ষনের চেষ্টার মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে তিন ভাইরা ভাইসহ ৬ জনকে ফাঁসাতে মামলা করার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাদীর ফুফু শ্বাশুরী, শালিকা, বিবাদী ও বিবাদীদের আত্মীয় স্বজন। ২ জুলাই শনিবার বিকালে কুলিয়ারচর উপজেলার কামালিয়াকান্দি গ্রামে বাদী রাসেল মিয়ার শ্বশুর বাড়িতে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বাদীর ফুফু শ্বাশুরী অনুফা বেগম (৬০) বলেন, তার বড় ভাই সাহু পাগলার মেয়ে কুলসুম আক্তার ওরুফে মোছা. সাথী আক্তার ও কুলসুমের স্বামী মো. রাসেল মিয়া উপজেলার বাজরা তারাকান্দি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বসবাস করে ইয়াবা ট্যাবলেটসহ মাদক বিক্রয় করার ফলে এলাকার যুবসমাজ নষ্টের দিকে ধাবিত হয়।

মাদক বিক্রয়ের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলাও হয়। এর ফলে এলাকাবাসী ও রাসেল মিয়ার দায়েরকৃত মিথ্যা মামলায় উল্লেখিত বিবাদীগণসহ তাদের আত্মীয় স্বজন ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ইয়াছির মিয়া, স্থানীয় ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য মো. লায়েছ মিয়া এবং বাজরা তারাকান্দি বাসস্ট্যান্ড বাজার ব্যবসায়ী পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবু তাহের মিয়া মিলে মাদক সম্রাজ্ঞী হিসেবে পরিচিত কুলসুম ও তার স্বামী রাসেলকে এলাকা ছাড়া করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হয়রানী করার উদ্দেশ্যে রাসেল মিয়া তার তিন ভাইরা ভাইসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে চলতি ২০২২ সনের ২২ ফেব্রুয়ারি ২০০০ সনের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধনী ২০০৩) এর ৯(৪)(খ)/৩০ তৎ সহ দঃ বিঃ ৩২৩/৩২৫/৩০৭/৫০৬ (।।) ধারায় কিশোরগঞ্জের বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল নং-২ আদালতে মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে একটি পিটিশন দাখিল করে।

পিটিশন মামলা নং- ১৭/২০২২ (বর্তমানে নারী শিশু মোকদ্দমা নং- ১০৮/২২)। বিজ্ঞ আদালতের বিচারক ঘটনাটি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য পার্শ্ববর্তী কটিয়াদী উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে নির্দেশ দেন। কটিয়াদী উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মোহাম্মদ মইনুর রহমান মনির ঘটনাস্থলে না আসিয়া মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে কোন প্রকার তদন্ত ছাড়াই একজন স্বাক্ষীর জবানবন্দির ভিত্তিতে ভিকটিমের মেডিক্যাল রিপোর্ট সংগ্রহ না করে ভূয়া ইপিআই টিকাদান কার্ড (শিশু) মূলে ভিকটিমের বয়স নির্ধারণ করে মনগড়া মতে মামলার এজাহারে বর্ণিত ঘটনা ও বিবরণের সত্যতা আছে মর্মে বিবাদীদের বিরুদ্ধে গত ৪ এপ্রিল কিশোরগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিজ্ঞ বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) বরাবর একটি মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করেন। সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিলের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ঘটনার পূনঃতদন্তের দাবী জানান তিনি।

বাদীর শালিকা শিকা আক্তার (২৪) সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কিশোরগঞ্জ জেলা বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়েরের আগে তার দুলাভাই মো. রাসেল মিয়া তার নাবালিকা সৎ মেয়েকে গণধর্ষণের চেষ্টার মিথ্যা অভিযোগ এনে বিজ্ঞ আদালতে দাখিলকৃত এজাহারে উল্লেখিত বিবাদীদের বিরুদ্ধে চলতি ২০২২ সনের ২ ফেব্রুয়ারি কুলিয়ারচর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। এ ঘটনায় একটি জাতীয় দৈনিক ও একটি স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় “তিন ভাইরা ভাইসহ প্রতিপক্ষদের ফাঁসাতে মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টার মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে থানায় অভিযোগ করেছে সৎ বাবা” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

সংবাদ দু’টিতে অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা কুলিয়ারচর থানার এস আই কাউসার আল মাসুদ বক্তব্য দিয়েছেন, অভিযোগে উল্লেখিত ঘটনাস্থলে কোন নাবালিকা মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছে বলে স্বাক্ষীরাসহ আশপাশের লোকজন বলতে পারেনি। এমনকি বাজরা তারাকান্দি এলাকায় অভিযোগকারীর স্ত্রীর কোন বোনের বাড়িও নেই বলে জানান তিনি। অভিযোগ বিষয়ে কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, অভিযোগটি নিয়ে সন্দেহ আছে। তদন্ত না করে কিছুই বলা যাচ্ছেনা।

অবশেষে উক্ত অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় কুলিয়ারচর থানায় মামলা করতে না পেয়ে তার স্বামী মিলন মিয়াসহ ৬ জনের নামে বিজ্ঞ আদালতে এ মিথ্যা মামলাটি দাখিল করে তার দুলাভাই মো. রাসেল মিয়া। শিকা আক্তার আরো বলেন, বাদী রাসেল মিয়ার স্ত্রী আমার বড় বোন কুলসুম আক্তার বলে তাকে ৫ লাখ টাকা দিলে তারা মামলাটি তুলে আনবে। মামলার ১নং বিবাদী তার আর এক দুলাভাই সায়েম বাদী রাসেলের ভয়ে দীর্ঘ দিন যাবৎ এলাকা ছাড়া। তিনি এ মিথ্যা মামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবী করে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিবাদী মো. হুমায়ুন (৪৫) ও বায়েজিদ (৩৫) বলেন, এলাকার একটি কুচক্রী মহল তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার হীন চক্রান্তে লিপ্ত হয়ে মাদক সম্রাজ্ঞী কুলসুম আক্তার ওরুফে মোছা. সাথী আক্তার ও রাসেল মিয়াসহ একাধিক ব্যক্তিকে দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ ও মামলা করিয়ে প্রতিনিয়ত তাদের হয়রানী করে আসছে। তারা এসব ঘটনার সুষ্ঠু প্রতিকার চেয়ে দুষ্কৃতকারীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবী করেন।

এ ব্যাপারে কটিয়াদী উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মোহাম্মদ মইনুর রহমান মনিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে বলেন এ তদন্ত প্রতিবেদন তিনি দেননি। পরে বলেন, ঘটনাস্থলে না গিয়েই স্বাক্ষীদের বক্তব্য নিয়ে এ প্রতিবেদন দিয়েছেন। ডাক্তারী পরীক্ষা ছাড়া কিভাবে এ প্রতিবেদন দাখিল করেছেন জানতে চাইলে তিনি সঠিক কোন উত্তর দিতে পারেননি।

এ ব্যাপারে ভিকটিমের মা ও বাদীর স্ত্রী কুলসুম আক্তার ওরুফে মোছা. সাথী আক্তার বলেন, এক সময় আমরা খারাপ ছিলাম। মাদক ব্যবসাও করতাম। পরে আমরা ভালো হয়ে গেছিলাম। তারপরও তারা (বিবাদীরা) লোকজন নিয়ে আমাদের অনেক ক্ষতি করেছে। আমাদেরকে বাজরা তারাকান্দি বাসস্ট্যান্ড এলাকা ছাড়া করেছে। তাদের কারণে আমরা বাড়িঘর বিক্রি করে এলাকা থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়েছি। তারা আমাদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে আবার এলাকায় আনার ব্যবস্থা করে মামলা তুলার খরচ বহন করলে আমরা মামলা তুলে আনবো।

(এস/এসপি/জুলাই ০২, ২০২২)