রণেশ মৈত্র


গতকাল শুধুমাত্র শিরোনাম দেখেছি ২৮ জুন,কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় পেলাম বিস্তারিত-দুই পৃথক জেলার দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দু’জন সম্মানিত শিক্ষক নিগ্রহের এবং তার ফলে একজনের মর্মান্তিক মৃত্যুর। যাঁর মৃত্যু ঘটেছে তিনি সম্ভবতঃ মরে বেঁচেছেন আর যিনি জীবিত আছেন তাঁকে ঘর-বাড়ী,সহায়-সংসার ছেড়ে দূবাঞ্চলে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। সরকারের পরিপূর্ণ অবগতিতে দ্বিতীয় শিক্ষক অত্যন্ত নোংরা ভাবে লাঞ্ছিত হলেও, সেখানে পুলিশ দাঁড়িয়ে সকল ঘটনা দেখলেও পুলিশ কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নেন নি। তাঁরা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছেন মাত্র। প্রশাসন ও নীরব তবে প্রশাসন ও পুলিশ কর্তৃপক্ষ-দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে তাঁদের তদন্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছেন। আর নির্দোষ ভূক্তভোগী দিব্যি জীবনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা না পেয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন পরিবার-পরিজনকে অসহায়ত্বের মধ্যে ফেলে।

এখন প্রথম ঘটনাটি সংক্ষেপে প্রিয় পাঠক-পাঠিকাদের নজরে আনতে উল্লেখ করতে চাইঃ

সমাজে দীর্ঘকাল যাবত মা-বাবার পরেই শিক্ষকের অবস্থান। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মিশেলে তৈরী শিক্ষক-ছাত্রের সম্পর্ক চিরন্তন। একজন আদর্শ শিক্ষকের স্পর্শে শিক্ষার্থীর জীবনের মোড় বদলে যেতে বাধ্য। যেমন,কল্পিত পরশ পাথরের স্পর্শে পাথর হয় সোনা। আমৃত্যু শিক্ষকের দেখানো স্বপ্ন-লালন করেন অনেক ছাত্র। তাদের কেউ কেউ মেধা,প্রজ্ঞা,যশ ও খ্যাতিতে শিক্ষককেও ছাড়িয়ে যান,যা দেখে ঐ শিক্ষকের চেয়ে আর কেউ বেশী আনন্দিত হন না। কিন্তু এই শিক্ষার্থীকে গড়তে শিক্ষককে কখনও মা-বাবার ¯েœহ,কখনও কঠোর শাসনের ভার নিতে হয়।

এমনই শাসন করতে গিয়ে সাভারের আশুলিয়ায় চিত্র মাইল এলাকায় নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার(৩৫)। প্রকাশ্যে তাঁকে ক্রিকেটের স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে অসুস্থ করে চিত্র মাইল হাজী ইউনুস আলী স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণীর ছাত্র আশরাফুল ইসলাম জিতু(১৬)। গত শনিবার দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। উৎপলকে স্থানীয় নারী ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেওয়া হয়। সেখান থেকে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আই.সি.ইউ তে ভর্তি করা হয়। সেখান চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সোমবার উৎপল মারা যান।

উৎপল সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানার এলংজানি গ্রামের মৃত অজিত সরকারের ছেলে। তিনি আশুলিয়ার চিত্র মাইল এলাকায় হাজী ইউনুস আলী স্কুল এন্ড কলেজের কলেজ শাখার রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক এবং অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ছিলেন। ১০ বছর ধরে তিনি প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষকতা করছিলেন। অন্যদিকে বখাটে জিতু আশুলিয়ার চিত্র মাইল এলাকার উজ্জ্বল হাজীর ছেলে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আচরণ ও ছাত্রীদের উত্যক্ত করার জন্য জিতুকে বেশ কয়েকবার শাসন করেছিলেন উৎপল। এরই জেরে তাঁকে প্রাণ দিতে হলো।

এ ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। তবে এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয় নি।

নিহতের স্বজন,পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রতি বছরের মত শনিবার শিক্ষার্থীদের ক্রিকেট টুর্নামেণ্টের আয়োজন করা হয়। দুপুরে খেলা চলার সময় জিতু অতর্কিতভাবে শিক্ষক উৎপলের উপর হামলা চালায়। এক পর্যায়ে স্ট্যাম্প দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করে এবং স্ট্যাম্পের সূঁচালো অংশ দিয়ে তাঁর পেটে উৎপর্যপরি আঘাত করে। পরে শিক্ষকরা এ গিয়ে এলে জিতু পালিয়ে যায়।

অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান বলেন,কেউ বুঝে ওঠার আগেই জিতু স্ট্যাম্প দিয়ে শিক্ষক উৎপলকে আঘাত করে। উৎপল শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের আচরণগত সমস্যা সমাধানে কাউন্সেলিং ছাড়াও বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতেন কিন্তু জিতু কেন এমনটা ঘটিয়েছে,তা এখনও বুঝে উঠতে পারছি না।

নিহতের ভাই অসীম কুমার সরকার বলেন, ঘটনার দিন স্কুল সংলগ্ন আমার দোকানে আসার সময় জানতে পারি,জিতু আমার ভাইকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। তাঁর পেট, বুক, পিঠ ও মাথায় স্ট্যাম্প দিয়ে আঘাত করেছে। আমার ভাই শিক্ষার্থীদের নীতি-নৈতিকতার দিক দেখতেন, জিতু ছাত্রীদের উত্যক্তসহ নানা অপকর্মে জড়িত। ভাই অনেক বুঝালেও সে সংশোধন হয় নি।

এদিকে এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে এবং জিতুসহ সকল অপরাধীর আশু গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তি দাবী কওে সারা দেশে মানববন্ধন,সমাবেশ প্রভৃতির আয়োজন চলছে। সর্বত্রই মানুষ প্রতিবাদ মূখর।

নড়াইলে শিক্ষক হেনস্তা

নড়াইলে মীর্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছনার ঘটনায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গতকাল সোমবার গণ্য মান্যদের নিয়ে শান্তি সভা করছে জেলা প্রশাসন।জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে বিভিন্ন মসজিদ ও মাদ্রাসার ইমাম এবং হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের ও রাজনৈতিক দলসমূহের নেতা ও বিশিষ্টজনদের নিয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এ দিকে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছনার প্রতিবাদ জানিয়ে এত জড়িতদের বিচারের দাবী জানিয়েছে “নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ”। এছাড়াও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচী পালিত হয়েছে।

নড়াইলের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়,নড়াইল সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক রবিউল ইসলাম,জেলা আওয়ামী সভাপতি এডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস, পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরা, মীর্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের সভাপতি এডভোকেট শচীন চক্রবর্তী,নড়াইল সাহাবাদ কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন প্রমুখ। সকলেই দাবী জানালেন অধ্যক্ষ হত্যার কঠোর শাস্তি দিতেই হবে।

পুলিশ প্রহরায় অধ্যক্ষ্যের গলায় জুতার মালা! মহানবী হযরত মোহাম্মদ(সা.) কে ফেসবুক কটুক্তিকারী ভারতের বি.জে.পি নেত্রী নূপুর শর্মার ছবি দিয়ে নড়াইলের মীর্জাপুর কলেজের এক ছাত্রের পোস্ট দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্র ও কলেজের অধ্যক্ষকে জুতার মালা পরিয়ে কলেজ থেকে বের করার সময় অধ্যক্ষের দুই পাশে পুলিশ প্রহরা দেখা গেছে।
এ দিকে,সোমবার এ ঘটনায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে বিভিন্ন মসজিদ ও মাদ্রাসার ইমাম, হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও শ্রেণী পেশার মানুষদের নিয়ে এক জরুরী মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন পূর্ব বর্ণিত সরকারী কর্মকর্তাবৃন্দ ও সুধীজন।

সভায় জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার বলেন,ঘটনার দিন আমাদের লক্ষ্য ছিল সহিংসতা এড়াতে সবাইকে নিরাপদে বাঁচিয়ে আনা। আমরা অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালার বিষয়টি দেখি নি। কারণ এ সময় গেটের কাছে ছিলাম।

ঘটনাটির প্রকৃত তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ জুবায়ের হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রিয়াজুল ইসলামের নেতৃত্বে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের পর সার্বিক বিষয়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জেলা প্রশাসক জানান।

সভায় অধিকাংশ বক্তারা অভিযুক্ত ছাত্রের দ্রুত বিচার দাবী করেছেন,তবে আইন হাতে তুলে নিয়ে তিন শিক্ষকের মোটর সাইকেল পোড়ানো এবং নিরপরাধ অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালা পরানোর বিষয়টিও শাস্তির আওতায় আনার দাবী তোলেন। অপরদিকে কয়েকজন আলোচক সহিংসতা চলাকালীন মীর্জাপুর কলেজের শিক্ষক আখতার হোসেন টিংকুর বিরুদ্ধে স্লোগান ও উসকে দেওয়ার অভিযোগ আনেন। তবে অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত টিংকু তাঁর বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং বলেন,ঘটনা শুরুর আগেএকটা ক্লাস নেই। পরে অপর ক্লাস নেওয়ার সময় অধ্যক্ষ আমাকে ডাকলে সেখানে যাই এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি। এখানে অধ্যক্ষ হওয়ার কোন ইচ্ছে আামার নেই। যারা এমন কথা প্রচার করে তারা মিথ্যা প্রচার করছে।

এ দিকে রবিবার বিকেলে সরেজমিন সদর উজেলায় সিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়নের হিন্দু অধ্যুষিত বড় কুলা গ্রামের ওই অধ্যক্ষের বাড়েিত গিয়ে দেখা যায়,অধ্যক্ষ বাড়ীতে নেই। বাড়ীতে অধ্যক্ষের মা বনলতা বিশ্বাস এবং তাঁর অনার্স পড়–য়া বড় মেয়ে শ্যামা বিশ্বাস রয়েছেন। শ্যামা বিশ্বাস বলেন,বাবা নড়াইল শহরে কোন এক আত্মীয়ের বাসায় আছেন। শ্যামা আরও বলেন,তাঁর বাবা সম্পূর্ণ নির্দোষ। এর বেশী আর কোন কথা তাঁর বলতে চান নি।

প্রসঙ্গতঃ মীর্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র রাহুল দেব রায় নিজের ফেসবুক আই ডি তে নূপুর শর্মার ছবি দিয়ে(তিনি ভারতের ক্ষমতাসীন বি জে পি দলের একজন বড় মাপের নেতা)“প্রণাম নিও বস নূপুর শর্মা-জয় শ্রীরাম”পোস্ট লিখলে ঘটনার সূত্রপাত হয়। প্রচার করা হয়,ওই ছাত্র রাহুল দেব রায় কর্তৃক ওই পোস্ট দেওয়ার পিছনে অধ্যক্ষের ইন্ধন রয়েছে। ব্যাস,আর কি? কে যাচাই করে প্রকৃতই ইন্ধন ওই অধ্যক্ষ জুগিয়েছেন কি না। পরিয়ে দাও অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালা। অসংখ্য শিক্ষক,ছাত্র,পুলিশ ও দর্শকদের সামনে পরিয়ে দেওয়া হলো অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালা। অধ্যক্ষ হিন্দু ঘরের সন্তান হওয়াতে প্রচারটি মুখাদ্য হিসেবেই তল্লাট জুড়ে বিবেচিত হয়েছিল। এখন ডবল তদন্ত কমিটি তদন্ত করবেন-কিন্তু অধ্যক্ষ মহাদয়ের সম্মানে যে আঘাত হানা হলো,তাঁর সম্মানের যে হানি ঘটানো হলো-তার জন্য দায়ীরা তো চিহ্নিত এবং প্রকাশ্যেই ঘুরছে।

স্মরণ করি মুন্সীগঞ্জের হৃদয় মন্ডল কে; ঘটনা দু’তিন মাসের বেশী আগের না। হঠাৎ করেই জানা গেল মুন্সীগঞ্জের একটি হাই স্কুলের প্রবীণ এবং জনপ্রিয় অংকের শিক্ষক হৃদয় মন্ডল কে আমাদের সরকার কুখ্যাত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়েছেন। অপরাধ? অবশ্যই অপরাধটি গুরুতর। হৃদয় মন্ডল একদিন যথারীতি তাঁর ক্লাসে অংক পড়াচ্ছিলেন। হঠাৎ করেই একটি ছাত্র তাঁকে জিজ্ঞেস করলো-ধর্ম ও বিজ্ঞানের সম্পর্ক কি? হৃদয় মন্ডল আকস্মিক এই প্রশ্ন শুনে বিব্রতবোধ করে বললেন,আমাদের পাঠ্য বিষয়ের সাথে এ প্রশ্নের কোন মিল নেই। তাই পাঠ্য বিষয়ে মনোযোগ দাও। কিন্তু ছাত্রটি নাছোড়বান্দা। অবশেষে প্রবীণ শিক্ষক হৃদয় মন্ডল বলে উঠলেন, ধর্ম বিশ্বাসের বস্তু আর বিজ্ঞান যুক্তি তর্কের উপর দাঁড়িয়ে। ব্যস,আর যায় কোথা। শিক্ষক ধর্মকে খাটো করলেন আর বিজ্ঞানকে উচ্চ মর্যাদায় আসীন করলেন।

সুতরাং শিক্ষক হৃদয় মন্ডল ধর্মদ্রোহী, নাস্তিক। আর যায় কোথা? বেড়িয়ে পড়লো বিশাল মিছিল-নাস্তিক হৃদয় মন্ডলের ফাঁসি চাই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার নামে, পুলিশের আগমন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাষ্ট্র ও ধর্মদ্রোহিতার অজুহাতে গ্রেফতার করা হলো সম্মানিত শিক্ষককে। একটাই অপরাধ-হৃদয় মন্ডল হিন্দু-তাই তিনি অবাঞ্চিত। কিন্তু যে ছাত্র তাঁকে ফাঁদে ফেললো তাঁর সরলতার সুযোগে-সে দিব্যি হিরো বনে গেল।

নারায়ণগঞ্জের শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত এই ঘটনা বেশ পুরানো এবং বলা যায়, বিস্মৃতির অতলেই তলিয়ে গেছে।
শ্যামল কান্তি ভক্ত নারায়ণগঞ্জের সন্তান। একটি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক-স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতাও। নারায়ণগঞ্জের এক দাপুটে এম.পির তিনি আবার চক্ষুশূল। এম.পি যখন তখন তাঁর ক্ষমতা তো অসীমই। তিনি তখন স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও এম.পি হওয়ার সুবাদে।

আর একজন শিক্ষকের খায়েস,তিনি হবেন প্রধান শিক্ষক। ষড়যন্ত্র চললো ভক্ত বাবু কে উৎখাতের। পেছনে এম.পি সাহেব।

হঠাৎ একদিন সন্ধ্যায় একটি মসজিদ থেকে মাইক্রোফোন যোগে প্রচার করা হলো প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত ধর্মদ্রোহী ইসলামের দুশমন। আর যায় কোথা? প্রধান শিক্ষকের বাড়ী আক্রান্ত হয় হয়। ছুটে এলন এম.পি। কী হয়েছে তা শুনার ভান করলেন। অবশেষে রায় দিলেন,প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত মারাত্বক অপরাধে অপরাধী। সুতরাং তাঁকে দুই হাত দিয়ে নিজের দুই কান ধরে বহুবার উঠ বোস করতে হবে। তিনি তাই করতে বাধ্য হলেন। ছবি ঐ সময়কার দেশ-বিদেশের সংবাদপত্রে ছাপা হয়। মন্ত্রণালয়ের নজরে আসে। তার আগে প্রধান শিক্ষককে সাসপেন্ড করা হয়। সরকার তদন্ত টিম গঠন করে স্থানীয় প্রশাসন ও আর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে চলে। অবশেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধান শিক্ষককে নির্দোষ বিবেচনায় চাকুরী ফিরিয়ে দেন। কিন্তু শ্যামল বাবুর সম্মান? আইন হাতে তুলে নিলেন এম.পি-তাঁর অপরাধ শাস্তিহীন রয়ে গেল।

লেখক : সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ, সাংবাদিকতায় একুশে পদকপ্রাপ্ত।