জে.জাহেদ, চট্টগ্রাম : সারাদেশের মতো চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের লোডশেডিং তীব্র আকার ধারণ করেছে। ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাওয়া-আসা যেন হয়ে পড়েছে নিত্যদিনের ঘটনা। কোন প্রকার ঘোষণা ছাড়াই সারাদিন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া হালকা বাতাস হলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুতের দেখা মেলে না। এভাবে দিনে-রাতে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ বারের বেশি লোডশেডিংয়ের শিকার হচ্ছে কর্ণফুলীবাসী। যদিও এ উপজেলার শিকলবাহা, চরলক্ষ্যা ও চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এর অধীনে। বড়উঠান ও জুলধা পটিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অধীন।

শিকলবাহায় বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকলেও এ যেন প্রদীপের নিচে অন্ধকার। বছরের বেশির ভাগ সময় এরা বিদ্যুৎ পায় না ঠিকমতো। ঘনঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। গত দু'সপ্তাহ ধরে এর মাত্রা বেড়েছে কয়েকগুণ। এতে করে কলকারখানায়ও উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে।

শিকলবাহা দীর্ঘদিন ধরে এমন অব্যবস্থাপনার শিকার হলেও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। বিদ্যুতের এ সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। বিদ্যুৎ না থাকায় তীব্র গরমে মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাচ্ছে মানুষ। পিডিবির বিদ্যুৎ অফিসে কোন অভিযোগ নম্বর না থাকায় কল দিয়েও সেবা পাচ্ছেন না সাধারণ গ্রাহকরা।

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু তাতে কোন ধরনের মাথা ব্যথাই নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুরো উপজেলায় দিনে-রাতে লোডশেডিং যেন রুটিনে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন ১৪ থেকে ১৫ বার বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে। সাধারণ মানুষের এ দুর্ভোগ লাগিয়ে কর্তৃপক্ষ যেন কানে তুলা গুঁজে ঘুমাচ্ছে।

চরলক্ষ্যার ফোরকান আহমদ বলেন, পিডিবির লোকজনকে ফোন করেও কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছি না। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে নষ্ট হচ্ছে ফ্রিজে রাখা খাবার, টিভি, ফ্যানসহ বৈদ্যুতিক বিভিন্ন যন্ত্রাংশ।সৈন্যেরটেকের দোকানদার শাহাজান জানান, বিদ্যুৎ থাকছে না। আমাদের ফ্রিজের কোমল পানীয় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া চা-কফি তো বিক্রি করতেই পারছি না। এছাড়াও ভ্যাপসা গরমে বয়োবৃদ্ধ নারী পুরুষ-শিশুসহ সকলের কষ্ট হচ্ছে।

শিকলবাহার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, গ্রামে বিদ্যুৎ বিপর্যয় এলাকায় দিন ও রাতের বেশি সময় বিদ্যুত থাকে না। অন্য সময়ে লোডশেডিং বেশি থাকে। এটি কি টেকনিক্যাল সমস্যা নাকি বিদ্যুত উৎপাদন সংকট? শিশু, বৃদ্ধা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। কৃষক, পোল্ট্রি খামারি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। চরপাথরঘাটার সাইফুদ্দিন সাইফ বলেন, বিদ্যুৎ এর ভেলকিবাজি আর কতদিন সইতে হবে। বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ জবাব ও দেয় না।

সাধারণ গ্রাহকেরও দাবী, আমরা নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করার পরও কেন বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত লোডশেডিং করছে?

এ ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্ণফুলী জোনাল অফিসের সহকারি জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) মাহবুবুর রহমান বলেন, চাহিদার চেয়ে কম সরবরাহ থাকায় কর্ণফুলীতেও লোডশেডিং হচ্ছে। সাধারণত গ্যাস স্বল্পতার কারণে জাতীয় গ্রীডে সমস্যা হয়েছো। আমরা সার্বক্ষণিক গ্রাহককে পরিপূর্ণ সেবা দিতে চেষ্টা করি।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড পটিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী (বিতরণ বিভাগ) ইসমাইল হোসেন বলেন, জ্বালানি সমস্যার কারণে সারাদেশে বিদ্যুৎ এর সমস্যা দেখা দিয়েছে। এটা শুধু কর্ণফুলী কিংবা পিডিবির ক্ষেত্রে নয়, পল্লী বিদ্যুতেও একই সমস্যা। তবে শিগগিরই এ সমস্যা কাটিয়ে উঠবে।

গত রোববার সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ লিখেন,গ্যাস স্বল্পতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে অনেক জায়গাতেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন পুনরায় স্বাভাবিক হবে। যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির উচ্চমূল্য ও সরবরাহ অন্যান্য সব দেশের মতো আমাদেরকেও সমস্যায় ফেলেছে। এ পরিস্থিতিতে আপনাদের সাময়িক অসুবিধার জন্য আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি।

(জেজে/এসপি/জুলাই ০৫, ২০২২)