বেশ লম্বা সময়ের অনুপস্থিতি ঘটেছে লেখালেখির জগতে। এর মধ্যে দেশে অনেক ঘটনা ঘটে গেছে। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর চূড়ান্ত রায় ঘোষিত হয়েছে। মৃত্যুদণ্ডের বদলে আমৃত্যু কারাদণ্ড। গণজাগরণ মঞ্চের বিভক্তি প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সম্প্রতি অব্যাহতিপ্রাপ্ত প্রধান এবং মুক্তিযুদ্ধের উপপ্রধান সেনানায়ক এ কে খন্দকারের একটি প্রকাশিত তথ্য চায়ের কাপে ঝড় তুলেছে।

আদালতের হাজিরা এড়াতে বেগম জিয়ার পক্ষ থেকে কৌশলী হরতাল আহবান, ২০ দলীয় জোটের ভেতরে ভাঙ্গন, জাতীয় পার্টিতে ভাঙ্গনের পদধ্বনি, বেগম জিয়ার পক্ষ থেকে মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ, ব্যাপক অস্ত্রসম্ভার উদ্ধার, বাংলাদেশে জঙ্গি সংগঠন গড়ে তোলার জন্য তালেবান প্রধান জাওয়াহিরির ভিডিও বার্তা, সরকারের সতর্কতা, সরকার উৎখাতের জন্য দেশি-বিদেশি চক্রের ষড়যন্ত্রের চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ-– ইত্যাদি আরও আরও অনেক কিছু ঘটছে। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মী খুন হচ্ছে এবং প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী অন্তর্দ্বন্দ্বই এসব হত্যাকাণ্ডের অন্যতম কারণ।

এত কিছুর পরেও একজন কলাম লেখক হিসেবে আমার কলম কেন বন্ধ ছিল এ প্রশ্ন উঠতেই পারে এবং সেটা সঙ্গত প্রশ্নই হবে। তবে কৈফিয়ৎ হিসেবে বলি কোনটা ছেড়ে কোনটা লিখব। অবস্থাটা এমন-– ‘বাহিরিতে চায়, দেখিতে না পায়/কোথায় কারার দ্বার।’ তাই দর্শকের আসনে বসে নির্নিমেষে অবলোকন করছিলাম রঙ্গমঞ্চের রোমাঞ্চকর দৃশ্যাবলী।

একটা কথা বলে রাখি। বাংলার রঙ্গালয়ে এ ধরনের নাটক অনেক বারই মঞ্চস্থ হয়েছে, অবশ্য ভিন্ন ভিন্ন কুশীলব কিন্তু ফরম্যাট প্রায় একই। কার্ল মার্কস একটি কথা বলেছিলেন। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে বটে, তবে প্রথম পুনরাবৃত্তি অধিকতর মর্মান্তিক এবং নিষ্ঠুর। আর দ্বিতীয় পুনরাবৃত্তি অতিশয় হাস্যকর আর কৌতুকপ্রদ। আমি বোঝার চেষ্টা করছি এটা দ্বিতীয় না তৃতীয়– না চতুর্থ-পঞ্চম-ষষ্ঠ পুনরাবৃত্তি।

এই বিশ্লেষণ একটু দীর্ঘ এবং ইতিহাসনির্ভর হবে। কাজেই এটা পরবর্তী কোনো পর্বের জন্য তোলা থাকুক। এই মুহূর্তে বরং করা যাক বিভিন্ন ঘটনার তাৎক্ষণিক পর্যবেক্ষণ।

।। দুই ।।

যখন যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয় তখন একপক্ষ এই ট্রাইব্যুনালের যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিল। তাদের বক্তব্য ছিল–- কী দরকার এসব তামাদি হয়ে যাওয়া ইস্যু তুলে জাতিকে বিভক্ত করা? এই পক্ষের মানুষরা আমাদের খুব একটা অচেনা নয়। তারা সবার চেনা সেই একাত্তর থেকেই। পঁচাত্তরের আগে পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম ছিল পর্দার অন্তরালে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সরকারের এবং দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর আত্মসন্তুষ্টি ও অবাঞ্ছিত আত্মবিনাশী কর্মকাণ্ড ঐ অন্তরালবর্তী মানুষগুলোর নিভৃত ভূমিকা সম্পাদনের পথ প্রশস্ত করেছিল।
যখন যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয় তখন একপক্ষ এর যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিল

যখন যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয় তখন একপক্ষ এর যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিল

আর এক পক্ষ ছিল সংশয়বাদী। তারা ভাবত, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়া উচিত কিন্তু আওয়ামী লীগের মধ্যে সেই নৈতিক বা দর্শনগত দৃঢ়তা নেই। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি হল আওয়ামী লীগ যা করবে সেটাই খারাপ এবং দেশ ও জাতির জন্য অহিতকর। আওয়ামী লীগের যে কোনো কাজ-– তা যত জনকল্যাণমূলকই হোক না কেন, তারা তার ভেতরে উদ্দেশ্য এবং স্বার্থপরতা আবিষ্কারে পারঙ্গম। তাদের কাছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যে শক্তিই দাঁড়াক না কেন সে-ই অধিকতর গ্রহণযোগ্য। এই অংশটি কার্যত প্রথম পক্ষের আত্মিক ও দর্শনগত শক্তির যোগানদাতা।

আর এক পক্ষ আছে, তারা ট্রাইব্যুনালের কাঠামোগত দুর্বলতার ব্যাপারে সোচ্চার। তবে যুদ্ধাপরাধী বিচারের প্রশ্নে দ্বিধাহীন। তারা সুনির্দিষ্ট কাঠামোর ভেতর দিয়ে মানসম্পন্ন বিচারকার্য সম্পাদনের পক্ষপাতী ও শাস্তি বিধানের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত রায়প্রত্যাশী। এ ক্ষেত্রে ন্যূনতম ব্যত্যয় তাদের কাছে অগ্রহণযোগ্য এবং যে কোনো আর্থ-সামাজিক জাতীয়-আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি অথবা চাপ অতিশয় তুচ্ছ ও অপ্রয়োজনীয় বিষয়।

আরও এক পক্ষ আছে যাদের রাজনৈতিল দর্শনের একমাত্র কর্তব্য হল অন্ধ করতালি প্রদান এবং সামান্যতম সমালোচনা হিংস্রভাবে ব্যাখ্যা করা। তাদের আনুগত্যের আধিক্য অনেক সময় ভুল সংকেত দেয়।

ঠিক এই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের যাত্রা শুরু। এই বিচার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করার জন্য সর্বব্যাপী চক্রান্ত শুরু হয় এবং সুদীর্ঘকাল ধরে সঞ্চিত বিপুল অর্থভাণ্ডারের মুখ খুলে দিয়ে জামাত একই সঙ্গে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক লবিং শুরু করে এবং জঙ্গি উৎপাদন ও সশস্ত্র পন্থায় ক্ষমতা দখলের উদ্যোগ গ্রহণ করে। জামাতের হিংস্র ভূমিকার নির্ভরযোগ্য সঙ্গী খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি এক ধরনের আত্মবিলোপের পথ অনুসরণ করে এই চক্রান্তের বিশ্বস্ত অংশ হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করে।

এখানে একটি কথা বলে রাখা দরকার যে, জামাত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জানত যে, একদিন তাদের কৃতকর্মের শাস্তি পেতেই হবে। তাই তারা পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য এক মুহূর্তও অপচয় করেনি। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তারা আন্তর্জাতিক সংযোগ প্রতিষ্ঠা করেছে পাকিস্তানের সহযোগিতায় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিভাবকত্বে। ‘ট্রায়াল অব হেনরি কিসিঞ্জার’ গ্রন্থে বিশ্ববরেণ্য সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ক্রিস্টোফার হিচেন্স বিভিন্ন তত্ত্ব এবং তথ্যের মাধ্যমে রিচার্ড নিক্সন ও জেরাল্ড ফোর্ডের সময়কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং পরবর্তীতে শান্তির জন্য নোবেল পুরষ্কারপ্রাপ্ত ড. হেনরি কিসিঞ্জারের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকা, গণহত্যা সংগঠনে পরোক্ষ সমর্থন ও মুজিব সরকার উৎখাতে এবং সপরিবারে হত্যা করার ক্ষেত্রে প্রচ্ছন্ন ভূমিকা তুলে ধরেছেন।

খন্দকার মোশতাকের সংক্ষিপ্ত শাসনামলে জামাত প্রথম পায়ের তলায় মাটি খুঁজে পায়। সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের আমলে তারা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা কিয়দাংশে হস্তগত করে এবং অত্যন্ত নৈপুণ্যের সঙ্গে অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে প্রবেশ করে।

জিয়াউর রহমানের অবদানের মধ্যে রয়েছে ভারসাম্যের রাজনীতির নামে স্বাধীনতাবিরোধীদের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করা, ছদ্মবেশী জামাতিদের ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগের সাইন বোর্ডের আড়ালে সংসদীয় কাঠামোতে প্রতিষ্ঠা করা, বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের পদোন্নতি দিয়ে বিদেশি মিশনগুলো তাদের কব্জায় ছেড়ে দেওয়া এবং আওয়ামী লীগকে কৌশলে বিভক্ত ও অকার্যকর করার চেষ্টা করা।

রাজনীতির আর এক সর্বনাশ করলেন জিয়া রাজনীতিতে ক্রয়-বাণিজ্য প্রবর্তন করে। ‘এভরিওয়ান হ্যাজ এ প্রাইস’ অর্থাৎ সকলেই ক্রয়যোগ্য-– এই থিওরি তিনি চালু করলেন রাজনীতিতে। একটি বিশেষ সুবিধা জিয়া ভোগ করতে পেরেছিলেন। তা হল তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেছিলেন, কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেছিলেন, বীরোত্তম সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন। এর ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের একাংশের ওপর তার প্রভাব সৃষ্টি হয়েছিল। এই প্রভাব দিয়ে জিয়া পুরোপুরিভাবে নিজের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার চেষ্টা করে সফল হয়েছিলেন অনেকখানি। যে জন্য এখনও পর্যন্ত বিএনপিতে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার অস্তিত্ব রয়েছে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং ধারাবাহিকতা চূড়ান্তভাবে ধ্বংস করেছিলেন আর এক সামরিক শাসক। তিনি হলেন জেনারেল হোসেন মোহাম্মদ এরশাদ। তিনি রাজনীতিকে পরিপূর্ণভাবে পণ্যে পরিণত করেছিলেন। তিনি বংলাদেশের রাজনীতিতে জামাতের অবস্থান সুদৃঢ় করার ক্ষেত্রে পূর্বসূরীর চাইতে অনেক বেশি কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন। কারণ তার আমলেই ইসলামি ব্যাংক ছাড়পত্র পায়। অর্থনৈতিক অঙ্গনে জামাতের সগর্ব পদচারণা তিনিই নিশ্চিত করেন। তার চেষ্টাতেই আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক মানসিকতার পত্তন ঘটে। সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রধর্মের প্রবর্তন করে তিনি মানবিক মূল্যবোধেও বিভাজন সৃষ্টি করেন। বলা যেতে পারে, বাংলাদেশে প্রকৃতপক্ষে তিনিই ধর্মের রাজনীতি প্রসারে মূখ্য ভূমিকা পালন করেন।

সাঈদীর জনসমক্ষে আবির্ভাব ঘটে এই এরশাদ আমলেই। এই আমলেই জামাত তাদের ক্যাডার বাহিনীর স্তর থেকে সাঈদীকে নেতার কাতারে ঠেলে তোলে। কুৎসিত, অসংস্কৃত, অকর্ষিত এবং অরুচিকর বাক্য ব্যবহার ছিল তার প্রচারণার ব্রক্ষ্মাস্ত্র। আর এটাই তাকে এক শ্রেণির নিম্নমানসম্পন্ন মানুষের মধ্যে পরিচিতি এনে দেয়।

যাই হোক, এই দেলোয়ার হোসেন সাঈদী যে অপরাধগুলোর কারণে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগ করছে, এইসব অপরাধের বিবরণ ‘দৈনিক সমকাল’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় যখন আমি ঐ পত্রিকার সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত ছিলাম। ঐ সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর সাঈদী আমার এবং পত্রিকার প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে মামলা করে। কিন্তু নিম্ন আদালত ও পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের রায় তার বিরুদ্ধে যাওয়ার পর সে চুপ হয়ে যায়।

এবার ব্যাপক তথ্য-প্রমাণ, সাক্ষী-সাবুদের পর সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে তাকে ঘাতক, ধর্ষক, লুণ্ঠনকারী মানবতাবিরোধী অপরাধী হিসেবে প্রমাণ করা হয়েছে। অথচ প্রথম যখন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষিত হল তখন দেশব্যাপী কী ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞই না চালানো হয়েছিল! জামাতের তাণ্ডবের হাত থেকে সাধারণ মানুষ, কর্মচারী, শ্রমিক, রিকশাচালক, কৃষক, পথচারী, শিশু-কিশোর, নারী-বৃদ্ধ-পুলিশ-র‌্যাব-বিজিবি সদস্য কেউই রেহাই পায়নি।

এরপর একটা দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়েছে। আপিল বিভাগের রায় ঘোষণার প্রশ্নে প্রলম্বিত প্রক্রিয়া সাধারণ জনমনে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, শঙ্কা ও সন্দেহ সৃষ্টি করে এবং তা সর্বক্ষেত্রেই সরকারের সদিচ্ছা প্রশ্নবিদ্ধ করে। যে পক্ষ সবসময় আওয়ামী লীগ এবং সরকারের ব্যাপারে সন্দেহকাতর ও সমালোচনামুখর, তাদের ব্যাপক প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভ অনেকাংশে যুদ্ধাপরাধীদের সাজা প্রদানে প্রত্যাশী তরুণ প্রজন্ম ও পক্ষশক্তির বিপুল অংশকে প্রভাবিত ও হতাশা-সংক্ষুব্ধ করে তোলে।

আপিল বিভাগের পূর্ণ বেঞ্চের রায় ঘোষণার আগে জামাতের তেমন কোনো দৃশ্যমান তৎপরতা না থাকায় এবং সাঈদীর এক ধরনের আনন্দের ঝিলিক দেওয়া শ্মশ্রুমণ্ডিত মুখমণ্ডল পরিদৃষ্ট হওয়ায় এই সংশয় পালে কিঞ্চিৎ বাতাস পায়।

তবে সাঈদীর মামলার অন্যতম সাক্ষী হিসেবে আমি নিরাশ হলেও এই রায় সশ্রদ্ধভাবেই গ্রহণ করছি। এত জন বিচারপতির সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত এবং বিশ্লেষণ আবেগের ফুৎকারে উড়িয়ে দেওয়া উচিত নয়। তাহলে আমাদের ভরসার নির্ভরযোগ্য জমিটি পায়ের তলা থেকে সরে যায়।
সাঈদীর এক ধরনের আনন্দের ঝিলিক দেওয়া শ্মশ্রুমণ্ডিত মুখমণ্ডল পরিদৃষ্ট হওয়ায় সংশয় পালে কিঞ্চিৎ বাতাস পায়

সাঈদীর এক ধরনের আনন্দের ঝিলিক দেওয়া শ্মশ্রুমণ্ডিত মুখমণ্ডল পরিদৃষ্ট হওয়ায় সংশয় পালে কিঞ্চিৎ বাতাস পায়

।।তিন ।।

আমি সবচাইতে বেশি মর্মাহত হয়েছি গণজাগরণ মঞ্চের বিভক্তিতে। ২০১৩ এর ৫ ফেব্রুয়ারিতে যেদিন শাহবাগ চত্বর তারুণ্যের উদ্দাম পদচারণায় প্রকম্পিত হয়ছিল সেই তখন থেকেই গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে আমার সার্বিক সম্পৃক্তি। তবে নেপথ্যে। প্রথম থেকেই একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, যৌথ নেতৃত্বেই পরিচালিত হবে মঞ্চের কার্যক্রম। প্রাথমিকভাবে মঞ্চের মুখপাত্রের দায়িত্বটি ইমরান এইচ সরকারের ওপর ন্যস্ত হলেও আন্দোলনের কোনো কর্মসূচি ঘোষণা কিংবা প্রচার মাধ্যমে কোনো বক্তব্য দিতে হলে তা নিয়মিত বৈঠকের মাধ্যমে করা হত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই পদ্ধতি মান্য করা হয়নি।

একটা বিশেষ ব্যক্তিগত কারণে ইমরানের প্রতি আমার এবং আমার স্ত্রীর বাৎসল্য আছে। এটা ইমরান বা গণজাগরণ মঞ্চের অনেকেরই জানা। তবে গণজাগরণ মঞ্চের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী সম্পর্কে আমার পর্যবেক্ষণ কিংবা ইমরান সরকার সম্পর্কে আমার বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন তা দ্বারা প্রভাবিত হয় না।

২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় আমি মঞ্চের নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে পরিষ্কারভাবে বলেছি, আন্দোলন তুঙ্গে থাকতে থাকতেই একটা সম্মানজনক পরিসমাপ্তি দরকার। কারণ আইন পুনর্বিন্যাসের ভেতর দিয়ে প্রাথমিক বিজয় অর্জিত হয়েছে-– এরপর প্রতিক্রিয়াশীলরা হিংস্র হামলা চালাতে পারে। কিন্তু আমার সে সময়কার সতর্কবাণী গৃহীত হয়নি। অথচ ফলটা তো তা-ই হয়েছে। বরং আমি যতটুকু ভাবিনি পরিণতি তার চাইতেও বেদনাদায়ক হয়েছে।

গণজাগরণ মঞ্চের অন্দরমহল এবং বহির্মহল থেকে দেখার সুযোগ আমার হয়েছে বলে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। এই লেখাটি তিন পর্বে উপস্থাপন করার বাসনা আছে। বড়জোর আরও একটি পর্ব বাড়তে পারে। তবে পরবর্তী পর্ব প্রধানত গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে হবে সেটা অগ্রিম বলে রাখি।

লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক জাগরণ।

(অ/অক্টোবর ০৩, ২০১৪)