রণেশ মৈত্র


জঙ্গি দমনে দায়িত্ব প্রাপ্ত যাঁরা, ভাব দেখে মনে হয়,তাঁরা আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুলে বলে চলেছেন, বাংলাদেশ রেকর্ড সৃষ্টি করেছে জঙ্গী দমনে রেকর্ড সাফল্য অর্জন করেছে। সঙ্গে ধুয়ো তুলেছেন এদেশে আসা মার্কিন রাষ্ট্রদূত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তো তাঁর বিশাল সাফল্য দেখছেন জঙ্গি দমনে। কারণ তাঁর নেতৃত্বাধীন বাহিনীসমূহের তৎপরবতার ফলে হলি আর্টিজান এ ভয়াবহ জঙ্গী আক্রমণের পর বিগত ছয়টি বছরে নতুন করে উল্লেখ করার মত কোন জঙ্গী হামলার শিকার বাংলাদেশকে হতে হয় নি।

এঁদের এই আত্মতৃপ্তির ঢেকুর কি এদেশের সচেতন জনগোষ্ঠীকে সমান্যতম আশ্বস্ত করতে পারবে? কারণজঙ্গি আক্রমণ দৃশ্যতঃ দেখা না গেলেওজঙ্গি উৎপাদনকারী ধর্মব্যবসায়ীরা কিন্তু দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রকাশ্যেই। তাদের আক্রমণের ধারা কখনও সশস্ত্র-কখনও নিরস্ত্র। কখনও বা মাইকে প্রচারিত ওয়াজের মাধ্যমে প্রকাশ পায়-সম্পূর্ণ নির্বিঘ্নভাবে এবং নিরাপদে।

ইদানীং দেখা গেল-শিক্ষক ও শিক্ষাঙ্গণে তাদের প্রকাশ্য বিস্তার লাভ। কিন্তু সঙ্গোপনে,জনচক্ষুর অন্তরালে যে জঙ্গিবাদের বিচরণ অবাধ ও নিঃসংকোচ-তার খবর কি ওই তৃপ্তির ঢেকুর যাঁরা তুলছেন তাঁরা কি রাখেন? রাখলে কতটুকু রাখেন?
তাঁরা ভাবেন, মাঝে মধ্যে যেজঙ্গি দেশের অন্দর কন্দর থেকে পুলিশ বা র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ছে-তাদেরকে আদালতে সোপদ করলেই তো ল্যাঠা চুকে গেল। তার পরের দায়িত্ব তো নেহায়েতই বিচার বিভাগের উপর বর্তায়। কিন্তু মামলার এজাহার, তদন্ত প্রভৃতি ঠিক মত হয়েছিল কি না-সঠিক ধারায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছিল-এই ব্যাপারগুলি সমধিক গুরুত্বপূর্ণ হলেও সেগুলি ঠিকমত ঘেঁটে দেখার সময় ওই কেউ কেটাদের নেই।

কিন্তু ধরা যাক, হাতে গোনা যে কিছু সংখ্যকজঙ্গি ধরা পড়লো-তারা বিচারে কঠোর শাস্তি পেল-তাতেই কি জঙ্গিরা ঘাবড়ে যাবে? মুখ-হাত ধুয়ে দিব্যি আরাম কেদারায় আমরা নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারব? দেখা যাক, সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যাবলি কি বলে?

পহেলা জুলাই প্রকাশিত ‘সমকাল’ এর বিশাল প্রতিবেদনে বলা হয়ঃ

“৮৩% জঙ্গি উত্তর বঙ্গেরঃ প্রায় অর্ধেকেই নিম্নবিত্ত” শিরোনামে প্রকাশিত খবরটি জানায়, দেশে গত দুই দশকেজঙ্গি তৎপরবতায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের প্রায় ৮৩ ভাগই উত্তরাঞ্চলের-অর্থাৎ রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের। আর সবচেয়ে কম বরিশাল বিভাগের। বয়সের ভিত্তিতে দেখলে ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের মধ্যে উগ্রবাদে জড়ানোর প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। আর জঙ্গি কর্মকাণ্ডে যুক্ত ব্যক্তিদের ৬৯ ভাগই সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত। মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত ১৭ শতাংশ। স্বশিক্ষিত ও নিরক্ষর ১৪ শতাংশ।

জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে পুলিশের বিশেষায়িত সংস্থা এণ্টি টেররিজম ইউনিটের পরিসংখ্যান ও গবেষণায় জানা যায় গ্রেফতারকৃত জঙ্গিদের ৫৮ ভাগই জামা’তুল মুজাহেদিন-বাঙলাদেশের (জে এম বি) সদস্য। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় যে পুরোনো জঙ্গীদের মাধ্যমে সবচেয়ে মানুষ উগ্রবাদের পথে গেছে। এদের অধিকাংশ আহলে হাদিসের অনুসারী। জঙ্গীবাদ সবচেয়ে বেশী জড়িয়েছে নিম্নবিত্ত পরিবারের সদস্যরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজশাহী-রংপুর বিভাগে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ভাল কাজ হয় নি। এ সব এলাকায় জঙ্গিবিরোধী কর্মকাণ্ড বাড়াতে হবে।

নমুনা হিসেবে ১২৭০ জঙ্গীর মধ্যে জে এম বির ৭১০, হরকাতুল জিহাদ, বাংলাদেশের ৪৫, আনসার আল আল ইসলামের ৯, আনসারুল্লাহ্ বাংলা টিমের ৯৪, আল্লাহ্র দলের ৯৩, নব্য জে এম বির ১২৫,হিযবুত তাহযিবের ৯০ এবং অন্যান্য সংগঠণের ৫২ সদস্য রয়েছে।

দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান আফগান ফেরত মুজাহেদিনের মাধ্যমে হলেও প্রকৃতপক্ষে জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ এবং পরে জে এম বির মাধ্যমেই উগ্রবাদের বিকাশ ঘটে। ২০০৫ সালে সারা দেশে সিরিজ বোমা হামলা এবং তার আগে সিনেমা হল ও আদালতে বিচারকদের ওপর বোমা হামলার মাধ্যমে আলোচনায় আসে জে এম বি। একই সালে আল্লাহ্র দলের কার্যক্রম শুরু হয়। পরে ২০০৯ সালে তুলনামূলক শিক্ষিতদের সম্পৃক্ততায় হিযবুত তাহযিবের উত্থান হয়। ২০১৪ সালে জে এম বি আবার সংগঠিত হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। তাদের একটা অংশ আলাদা হয়ে নব্য জে এম বি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে গণজাগরণ মঞ্চ তৈরী হলে এবং বিভিন্ন ব্লগে কথিত ধর্মীয় অবমাননা সংক্রান্ত লেখালেখির প্রতিবাদে ব্লগার হত্যা ও নাশকতার সূচনা করে আনসারুল্লাহ্ বাংলা টিম। পরে এরা নাম বদলে হয় আনসার আল ইসলাম।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর(অব) আবদুর রশিদ বলেন, যে বয়সে মানুষের উত্তেজনা বেশী থাকে, সেই বয়সীদের মধ্যেই জঙ্গী বেশী পাওয়ার কথা। কারণ ওই সময়ে তারা সবচেয়ে বেশী পথভ্রষ্ট এবং উগ্রতায় অনুপ্রাণিত হয় বেশি। যারা শুরুর থেকেই জঙ্গিবাদের পথে চলে যাওয়া স্বাভাবিক। যারা শুরুর দিকে জঙ্গিবাদে দীক্ষিত হয়েছে এবং পরে সুযোগ সুবিধা পেয়ে বর্ধিষ্ণু হয়েছে ওই বয়সে তাদের জঙ্গীবাদের পথে চলে যাওয়া স্বাভাবিক। অল্প বয়সে জঙ্গীবাদে অনুপ্রাণিত হলেও বিকশিত হতে সময় লাগে। বিকশিত হওয়ার সময়টা হলো ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়স।

দেশে জঙ্গিবাদের দমনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পুরিশের মহাপরিদর্শক(আই জি পি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এ কে এম শহীদুল হক। তিনি বলেন,জঙ্গি নেতা শায়েখ আবদুর রহমান ও বাংলা ডাই রাজশাহী অঞ্চলে প্রথম কার্যক্রম চালিয়েছে। যে কারণে উত্তরবঙ্গে তাদের অনুসারী তৈরী হয়েছে বেশী। এই দুইজঙ্গি নেতার ফাঁসি হওয়ার পর তাদের অনুসারীরা কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখলেও আদর্শচ্যূত হয় নি। পরে ২০১৩ সালেজঙ্গি তামিম চৌধুরী দেশে ফিরে সেই জে এম বি কে আবার সংগঠিত করে, প্রশিক্ষণ দেয়। ফলে নতুন করে একই অঞ্চলে এবং ঢাকা ও সন্নিকটস্থ কোন কোন এলাকায় উগ্রবাদ ছড়িয়ে পড়ে।

মওলানা ভাষানী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ব-বিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি এ- পুলিশ সায়েন্স বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড.মুহাঃওমর ফারুক বলেন, উত্তরাঞ্চলের অবহেলিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান যতটা নিম্ন, অন্য অঞ্চলে তেমন নয়। তাদের অর্থনৈতিক সমস্যা রয়েছে- আছে সচেতনতার অভাব। তাদের যে আর্থিক সুবিধার দরকার, সেটির সুযোগ নিচ্ছে জঙ্গীরা। শুধু আর্থিক প্রণোদনা নয়, নানা খাতে সুযোগ সুবিধা দেওয়ার আশ্বাস, তরুণ-তরুণীদের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ক্ষেত্রে সহায়তার প্রলোভন দেখিয়ে তারা দলে ভিড়িয়েছে।

তিনি বলেন আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে এমন অনুভূতি প্রধান হয়ে উঠেছে। প্রতিষ্ঠানগুলির যে কাজ তা কেউ যথাযথভাবে করছে না। এতে শিক্ষার্থীরা সচেতনভাবে বা অবচেতনে উগ্রবাদে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ছে। পুলিশ বা আদালতের মাধ্যমে হয়তো জঙ্গীদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে-কিন্তু এভাবে নির্মূল করা যায় না। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা দরকার।

জঙ্গিদের সর্বশেষ তথ্যঃ রেড এলার্ট অপর একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ৩ জুলাই এর খবরে বলা হয়, জামিনে গিয়ে কমপক্ষে তিন শতাধিকজঙ্গি গা-ঢাকা দিয়েছে। বিভিন্ন সময়ে জামিনে গিয়ে পলাতক এ সব জঙ্গির সন্ধানে মাঠে নেমেছে পুলিশের একাধিক ইউনিট। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সূত্রে জানা যায়, পলাতক এ সব জঙ্গীকে ধরতে পুলিশের ইউনিটগুলো রেড এলার্ট জারী করেছে। ইতোমধ্যে পুলিশ সদর দফতর থেকে যে কোন ভাবে তাদের ধরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এমন কি বিশ্বের সর্ব্বোচ্চ পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের মাধ্যমেও ওই সব জঙ্গীকে শনাক্ত করে সতর্কতা জারী করতে অনুরোধ জানানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থা জানায়,পরিচয় গোপন করে তারা দেশের ভেতরেই অবস্থান করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদের বেশীর ভাগ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থেকেজঙ্গি তৎপরতা চালানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। আবার কেউ কেউ দেশের বাইরেও পালিয়ে গেছে বলে পুলিশের সন্দেহ।

পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশেজঙ্গির সংখ্যা ৫,২৮৯ জন। গত ১৭ বছরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৩৪২ টি মামলা হয়েছে। মূলতঃ ওই সব মামলার আসামী থেকে পুলিশ জঙ্গীর সংখ্যা নির্ধারণ করেছে। এদের মধ্যে জামিনে আছে ২,৫১২ ও জেল হাজতে আছে ১,৬৯৬ জন। মোট গ্রেফতার হয়েছিল ৪,৯৯৮ জন। আভিযোগ রয়েছে, জামিনপ্রাপ্ত জঙ্গিদের অনেকেই আবার উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ছে। আবার কেউ কেউ আত্মগোপনে চলে যাচ্ছে। সম্প্রতি জামিন নিয়ে আবারও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগে কিছু সংখ্যক জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জানা যায়, জামিনে থাকা জঙ্গীদের নিয়মিত আদালতে হাজিরা দেওয়ার কথা থাকলেও তারা তা দিচ্ছে না। এ জন্য তাদেরকে ধরতে অনেকটা ইন্টারপোলের মতই রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা পুরোনো জঙ্গিরা প্রায় কয়েক বছর ধরেই লুট,ছিনতাই ও ডাকাতির মাধ্যমে অর্থ জোগাড় করছে। এমন কি খুন ও করছে তারা। তাদের নেটওয়ার্ক ময়মনসিংহ-জামালপুর-উত্তরবঙ্গসহ বেশ কয়েকটি জেলায় বিস্তৃত রয়েছে। করোনা কালেও তারা অনলাইনে সদস্য সংগ্রহ ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমেজঙ্গি সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। তারা সংগঠনকে শক্তিশালী করতে নতুন কর্মী সংগ্রহ, মোটিভেশন ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালাতে অনলাইন পদ্ধতি ব্যবহার করছে। সম্প্রতি বোমা তৈরীর সরঞ্জাম কিনে বান্দরবনের পাহাড়ী অঞ্চলেজঙ্গি ট্রেনিং নিয়েছে কমপক্ষে শতাধিক তরুণ সংগঠনকে বিস্তৃত করতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোও পরিদর্শন করেছে জে এম বি সংগঠণের নেতাকর্মীরা। অর্থাৎ ধীরে হলেও, গোপনে হলেও তারা সদা সক্রিয় এবং ধর্মের বর্ম বিস্ক্রুটিং ও অপারেশন চালানোর জন্য অত্যন্ত সহায়ক।

আদালতের শাস্তি কিজঙ্গি নির্মূলে সহায়ক? যে প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে ভাবা প্রয়োজন, তা হলোজঙ্গি উত্থান কেন কিভাবে ঘটলো এবং কিভাবেই বা তাকে নির্মূল করা যাবে। কোন টোটকা ওষুধ এই সামাজিক-রাজনৈতিক সমস্যাকে দূরীভূত করতে পারবে না। তবে এ কথা ঠিক-পুলিশী ব্যবস্থা আরও জোরদার করা-পুলিশকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমেজঙ্গি ও জঙ্গীবাদ মোকাবিলার যোগ্য করে তোলা এবং পুলিশ ও আইনী তৎপরতা জঙ্গী-নির্মূলে সহায়ক, কিন্তু চূড়ান্ত নয়-প্রধান মাধ্যমও নয়।

স্মরণে আনা যাক পাকিস্তানী আমলের কথা। তখন রাষ্ট্রটাই গঠিত হয়েছিল ধর্মের নামে-সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রেক্ষিতে। ২৩ বছর পাকিস্তান শাসন করলো ধর্মের নামে-সাম্প্রদায়িক চেতনাকে ঊর্ধে তুলে ধরা প্রাণপন চেষ্টা সামনে রেখে। তখন কিন্তু জামায়াতে ইসলামী অন্ততঃ পূর্ব বাংলার মানুষের মধ্যে ঠাঁই পায় নি। অকঃপর একাত্তরে জামায়াত-আল বদর প্রভৃতি মিলে ধর্মের নামে লুট, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ-কী না করেছে। ৩০ লক্ষ বাঙালি পাক-সেনা ও বাঙালি জামায়াতীদের হাতে নিহত হন, শহীদ হন এবং ৪/৫ লক্ষ নারীর সম্ভ্রম হানি ঘটিয়ে উল্লাস করে তারা বলেছিল-খাঁটি পাকিস্তানী পয়দা করতেই না কি তাদের এই ধর্ষণ।

অতঃপর বাহাত্তরের সংবিধানে জামায়াত মুসলিম লীগ ও ধর্মাশ্রয়ী নিষিদ্ধ হলো-বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জিয়া এসে ওই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলো, সংযোজন করলো বিসমিল্লাহ্ । এরশাদ এসে পুনরায় সংবিধান সংশোধন করে “রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম” সংযুক্ত করলেন। এর বেশ কিছুকাল পর সুপ্রিম কোর্ট জিয়া-এরশাদের ওই সংশোধনীগুলি বাতিল করলো। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী বলে দাবী করে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান দল হয়েও ওই সাম্প্রদায়িক সংশোধনীগুলি সুপ্রিম কোর্টের রায় না মেনে পুনরায় সংযোজন করেকার উপকার করলো-গভীরভাবে ভাবা দরকার। আবার পয়দা হলো হেফাজতে ইসলাম। এরা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ ছড়ায়। ফলে আজকে কিন্তু সমাজে পাকিস্তান আমলের চাইতেও সাম্প্রদায়িক আবহ জোরদার হয়ে পড়েছে। একে পরিবর্তন করতে হলে রাজনেতিক-সাংস্কৃতিক কর্মকা- ধর্মনিরপেক্ষতা ও মানবিকতার পক্ষে ধাবিত করে মূলধারায় পরিণত করার বিকল্প নেই।

লেখক : সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ, সাংবাদিকতায় একুশে পদকপ্রাপ্ত।