রণেশ মৈত্র


চারিদিকে বছরের পর বছর ধরে শিক্ষক নিগ্রহ, নারী ধর্ষণ, যৌতুকের দাবী পূরণে ব্যর্থতায় স্বামী-শ্বাশুড়ী মিলে স্ত্রী নির্যাতন ও পরিশেষে হত্যা, ঘুষ-দুর্নীতির প্রসারে ইতিহাস রচনা ও অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম, আইন ব্যবহার না করা ও আইনের অপব্যবহার, বৃদ্ধ পিতামাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে ছেলে কতৃর্ক পৈতৃক বাড়ী দখল ও রাজার হালে সস্ত্রীক ও পরিবার-পরিজন সহ বাস, শিক্ষক কতৃর্ক শিক্ষার্থীদেরকে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণী কক্ষে পাঠদানে অনীহা ও ছুটি শেষে সেই ক্লাসরুমেই বা পার্শ্ববর্তী কোথাও কোচিং সেন্টার পরিচালনা, পরকীয়ার ব্যাপক প্রসার ও তজ্জণিত হত্যাকান্ড যা সন্তানদের সম্মুখেই সচরাচার ঘটানো হয়ে থাকে-এবম্বিধ হাজারো অনাকাংখিত ঘটনা সমাজের সর্বত্র অবাধে ঘটে গেলেও উপযুক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ না করা যেন নৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। এগুলি এতই বেশি পরিমাণে ঘটছে যে সবই যেন গা.সহা হয়ে গেছে।

কিন্তু বড় ধরনের এ জাতীয় ঘটনা যখন ঘটে, তখন সংবাদপত্রে তার বিরুদ্ধে বিবৃতি,টিভি চ্যানেল সমূহে টক-শো, ঢাকায় বা সারা দেশে কয়েকদিন মানববন্ধন, সমাবেশ, প্রতিবাদ-মিছিল, পুলিশের কিছু তৎপরতা চোখে পড়ে কিন্তু অল্প কিছুদিন পরেই সব কিছু থিতিয়ে পড়তেই পুনরায় উল্লেখিত বিষয় সমূহের কোন না কোনটার নতুন করে ঘটা যেন প্রথায় পরিণত হয়েছে। ঢাকার রাজপথে আত্মহত্যা-পরে অভিযুক্তদের গ্রেফতার।

সদ্য যে ভয়াবহ ঘটনা ঢাকার রাজপথে, জাতীয় প্রেসক্লাবের সম্মুখভাগে এবং প্রশাসনের সর্ব্বোচ্চ পীঠস্থান সচিবালয়ের সামনে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও ঠিকাদার আনিস মাত্র কয়েকদিন আগে নিজ দেহে অগ্নিসংযোগ করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করলেন। কারণ তিনি হেনোলাকস গ্রুপের মালিক নূরুল আমিন ও তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনকে আনিসের মৃত্যুও তাড়াহুড়ো করে গ্রেফতার করা হয়েছে কিন্তু আত্মাহুতির আগের যে লম্বা ইতিহাস-তা যদি পুলিশ-র‌্যাব উপেক্ষা না করতো-তবে তো আনিসের এই আত্মাহুতির প্রয়োজন পড়তো না-বরং ন্যায়ানুগ ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দৃশ্যই দেখা যেত।

একটু দেখে নেওয়া যাক ঘটনাটা কি?

ফেসবুক স্ট্যাটাসে নিজেকে একজন ব্যবসায়ী বলে দাবী করে আত্মাহুতি দেওয়া প্রয়াত গাজী আনিস লিখেছেন,আমার রোজগারের বড় অংশ স্থানীয় স্কুল, মাদ্রাসা মসজিদ এবং অসহায় দুস্থ মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছি, সেই সঙ্গে নিজেও সুখী স্বাচ্ছন্দ্যময় এবং সৎ জীবন যাপন করেছি।

হেনোলাকসের মালিকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ও সম্পর্ক গভীর হওয়ার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তিনি লিখেছেন, ‘২০১৬ সালে হেনোলাকস গ্রুপের কর্ণধার মো.নূরুল আমিন এবং তাঁর স্ত্রী ফাতেমা আমিনের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। ধীরে ধীরে তাদের সাথে আমার সখ্যতা ও আন্তরিকতা গড়ে ওঠে। আমি কুষ্টিয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেছি এবং তখন তাদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হতো এবং উপহার বিনিময় ও ভাল রেস্তোঁরায় আমরা এক সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করতাম এবং বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যেতাম। আমি নিজের খরচায় মোঃ নূরুল আমিন ও ফাতেমা আমিনের সঙ্গে দেশের বাইরেও একাধিকবার বেড়াতে গিয়েছি।

তিনি বলেন, ২০১৮ সালে কলকাতার হোটেল বালাজীতে একসঙ্গে অবস্থানকালে উনারা আমাকে হেনোলাকস গ্রুপে বিনিয়োগের এবং যথেষ্ট লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে বলে জানান। আমি প্রথমে অসম্মতি জ্ঞাপন করলেও পরবর্তীতে রাজী হই এবং প্রাথমিকভাবে এক কোটি টাকা বিনিয়োগ করি। পরবর্তীতে তাদের পীড়াপীড়িতে আরও ছাব্বিশ লাখ টাকা বিনিয়োগ করি (অধিকাংশ টাকা আত্মীয় স্বজন,বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে নেওয়া)এক পর্যায়ে তাঁরা প্রতি মাসে লভ্যাংশ প্রদান করতেন সেটাও বন্ধ করে দেন।

তিনি লিখেছেন, বিনিয়োগ করার সময় পরস্পরের প্রতি সম্মান এবং বিশ্বাসের কারণে এবং তাদের অনুরোধে চূড়ান্তভাবে চুক্তি রেজিস্ট্রি করা হয় নি তবে প্রাথমিক চুক্তি করা হয়েছে। বিনিয়োগকারী হিসেবে চূড়ান্ত চুক্তি রেজিস্ট্রেশনের জন্য চাপ দিলে উনারা গড়িমসি করতে থাকেন।এক পর্যায়ে মাসে তাঁরা যে লভ্যাংশ প্রদান করতেন সেটাও বন্ধ করে দেন এবং তাদের লোকজন দ্বারা আমাকে হেনস্তা ও ব্ল্যাকমেইল করেন এবং করার চেষ্টা করেন। বর্তমানে লভ্যাংশ সহ আমার ন্যায্য পাওনা তিন কোটি টাকার অধিক।

প্রসঙ্গতঃ ওই টাকার জন্য বারবার তাগিদ দিয়েও না পেয়ে হতাশায় গত ৪ জুলাই বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গায়ে আগুন দেন ৫০ বছর বয়সী ব্যবসায়ী গাজী আনিস। অগ্নিদগ্ধ আনিসকে লোকজন হাসপাতালে ভর্তি করেন এবং সেখানেই চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় পরদিন ভোরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আনিস কুষ্টিয়ার আদালতে মামলাও করেছিলেন হেনোলাকস গ্রুপের দুই মালিকের বিরুদ্ধে।

প্রকাশ্যেই আনিস সকলকে তার সাথে প্রতারণার বিষয়টি জানিয়েছেন। পুলিশ দিব্যি তাদের বিরুদ্ধে অগ্রিম ব্যবস্থা নিতে পারতেন। দুর্নীতি দমন কমিশন ও এগিয়ে আসতে পারতো। এগুলি হয় না কারণ আমাদের কর্তাব্যক্তিরা মুক্তিযুদ্ধের বেনিফিসিয়ারী হলেও মুক্তিযুদ্ধ কি-তার তাৎপর্য কি-তা হয় বুঝেন না-নয়তো বুঝেও নানা স্বার্থ চিন্তায় সেগুলি এড়িয়ে চলেন।

ঘুষ-দুর্নীতির মহোৎসব

দেশে ঘুষ দুর্নীতির মহোৎসব চলছে-পত্র পত্রিকা এবং অন্যান্য মিডিয়া পড়লে তা জানা যায়। আবার যতগুলি ঘটনা নানা সূত্রে জানা যায়,প্রকৃতপক্ষে ঘটনার সংখ্যা তার বহুগুণ বেশী।

দুর্নীতি দমনের জন্য একটি স্বায়ত্তশাসিত জাতীয় সংস্থা রয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের নামে। তাদের কার্যকালাপ কি আদৌ দৃশ্যমান। দেশে বছরে কতগুলি দুর্নীতি ঘটেছে, কতগুলি দুর্নীতির মোকদ্দমা দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করেছে। কতগুলি মোকদ্দমা তদন্ত শেষ হয়ে আদালতে চার্জশীট দাখিল হয়েছে, কতগুলি বিচার সম্পন্ন হয়েছে আর কতগুলি মোকদ্দমায় অভিযুক্তরা নির্দেশ প্রমাণিত হওয়ায় খালাস পেয়েছে-তার একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হোক। কারণ এ বিষয়গুলি সমগ্র জাতির কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং জাতি বিস্তারিতভাবে তা জানতে অধিকারী। সাদা চোখে যা দেখা যায়, এবং তা সত্যও বটে, দুর্নীতি করেন সরকারী কর্মকর্তা, সরকারী দলের নানা স্তরের লোকেরা এবং সরকারী-আধা সরকারী নানাসংস্থার কর্মকর্তারা, ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেকে এবং খুব কম সংখ্যকই বিরোধী দলের লোকেরা। তবে যে সব বিরোধী দল এক বা একাধিকবার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল যেমন বি এন পি ও জাতীয় পার্টি-তাদেরও দুর্নীতির রেকর্ড বিশ্বখ্যাত। যখন তারা ক্ষমতায় ছিলেন তখন হিতাহিত জ্ঞান বর্জিত হয়ে দুর্নীতিতে গা ভাসিয়েছিলেন।

কিন্তু ক্ষমতাসীন কেউ কি কদাপি অভিযুক্ত হচ্ছেন, দু একটি ব্যতিক্রম ছাড়া? তাই দলবাজির অভিযোগ যেমন অন্যান্য বহু ক্ষেত্রে বিস্তর-তেমনই দুর্নীতি দমন কমিশনও সে অভিযোগ থেকে মুক্ত নয় এবং সে কারণেই রাঘব বোয়ালেরা দুর্নীতি দমন কমিশনের(দুদক) নজরে কদাপি পড়েন না-তা সে যতই ভয়ংকর রির্পোট তাঁদের বিরুদ্ধে থাকুক না কেন। এই পরিস্থিতি বদলাতে হবে এবং সে জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন ও তার কার্যক্রম সংক্রান্ত আইন-কানুন,বিধি-বিধানের ব্যাপক পরিবর্তন সাধন অত্যন্ত প্রয়োজন। কারণ দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বাধীনতাও প্রশ্নবিদ্ধ।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তো রীতিমত দুর্নীতির ক্ষেত্রে হিরো সেজেছিল যা বিশেষ করে করোনা সংক্রমণের প্রথম যুগে মিডিয়ায় বিশেষ স্থান অধিকার করেছিল। কোথায় গেল ওই মন্ত্রণালয়ের দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে প্রচারিত অভিযোগগুলি।

বে-আইনীভাবে বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের কাহিনী বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে বিশেষ করে সুইস ব্যাংক সংরক্ষিত বিপুল অংকের টাকার মধ্যে বাংলাদেশের আকাশচুম্বি উল্লম্ফন। কিন্তু এত বড় আলোড়ন সৃষ্টিকারী খবর সকলে জানলেও, অবাক ও বিষ্ময়াচ্ছন্ন হলেও আমাদের দুর্নীতি কমিশনের ‘নো নড়ন চড়ন’।

কর ফাঁকির ব্যাপারেও আমরা বিশ্বের প্রথম সারিতে অবস্থান করি। কর আদায়যোগ্য ব্যবসায়ী বা অন্যান্য পেশাজীবীর মোট সংখ্যা বাংলাদেশের কর বিভাগের খাতা খুঁজলে পাওয়া যাবে কি না জানি না। তবে দুদকের তরফ থেকে এ ব্যাপারে কোন উচ্চবাচ্য কদাপি শুনা যায় না। ঘুষের তো সামগ্রিক প্রক্রিয়াই এতদিন গোপনে ঘটতো। এখন না কি, সকল আাদন প্রদান প্রকাশ্যেই ঘটছে। অন্ততঃ সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর তাই বলে।

অপরাপর ক্ষেত্র শিক্ষাঙ্গন

এই ক্ষেত্রটি এই মুহুর্তে সর্বাধিক আলোচিত-হৃদয় বিদারকও বটে। যে শিক্ষক সমাজ-দেশ গড়ার কারিগর হিসেবে পৃথিবীর সর্বত্র স্বীকৃত-যে শিক্ষকদেরকে দেখলে আরও আমরা তাঁদের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম বা কদমবসি করি তাঁরা আজ নিগৃহীত হন তাঁদেরই ছাত্রদের হাতে?

স্বপন, হৃদয়, আমোদিনী, শ্যামল, উৎপল এবং মাত্র পাঁচ ছয় বছরের কথা। ২০১৬ সালে নিগৃহীত হন নারয়ণগঞ্জের শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত, ২০২২ এ এ যাবত পর পর চারটি হৃদয়-বিদারক ঘটনা দেশ-বিদেশের পত্র-পত্রিকায় স্থান পেলো। এ বছরের চারটি ঘটনার একটি হলো আশুলিয়ার হাজী ইউনুস আলী স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক উৎপল সরকারকে প্রকাশ্য দিবালেকে ক্রিকেটের স্ট্যাম্প দিয়ে তাঁরই ছাত্র জিতু পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে; ২০২২ এর ৭ এপ্রিল নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শ্রীমতি আমোদিনী পাল সম্পর্কে অকষ্মাৎ প্রচার চালানো হয় যে ওই শিক্ষিকা ‘হিজাব পরার অপরাধে’ কয়েকজন ছাত্রীকে মারধর করেছেন। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার। এই প্রচারের ওপর ভিত্তি করে গ্রামবাসী জড়ো হয়ে স্কুল অবরোধ করে আমোদিনী পালের অপসারণ দাবী করে। পরিস্থিতি মারাত্বক উত্তেজনাকর হয়ে ওঠায় পুলিশ তা নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে, হিজাব নয়, নির্ধারিত স্কুল ড্রেস না পরার কারণেই কয়েকজন শিক্ষার্থীকে তিনি মারধর করেছিলেন। আমোদিনী পালের মতে পরিকল্পিতভাবে সংখ্যালঘু শিক্ষকদেরই ফাঁসানো হচ্ছে। আমোদিনী ক্ষোভের সাথে বলেন, এই উগ্রপন্থীরা চায় হিন্দুরা এদেশ ছেড়ে চলে যাক। আবার সরকারও সংখ্যালঘু নির্যাতন দেখলেই লুট করে সরে পড়ে। নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়ে আজও শংকিত আমোদিনী পাল। তদুপরি মনে ভীতি। তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় কথাও আজ প্রকাশ্যে বলতে ভয় লাগে। এভাবে ভয়ে ভয়ে কতদিন থাকতে পারবো-প্রশ্ন তাঁর।

মুন্সীগঞ্জে সদর উপজেলার বিনোদপুর রাজকুমার উচ্চ বিদ্যালয় ২০২২ এর ২০ মার্চ ১০ম শ্রেণীর ক্লাসে বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক দিয়ে আলোচনা করেন প্রবীণ শিক্ষক হৃদয় মন্ডল। তিনি তাঁর এক ছাত্রের প্রশ্নের জবাবে ধর্মকে একটি বিশ্বাস এবং বিজ্ঞানকে পরিকল্পিতভাবে তার ওই শিক্ষকের আলোচনার ভিডিও রেকর্ড করে ছড়িয়ে দিয়ে প্রচার করে শিক্ষক হৃদয় মন্ডল ধর্মদ্রোহী,আল্লাহ্ মানে না। এরপর তুমুল ঘটনা। তিনি কয়দিন মাত্র আগে বলেছেন,এখনো হুমকি দেওয়া হয়, আতংকে আছি। অপরদিকে শ্যামল কান্তি ভক্ত (নারায়ণগঞ্জ) প্রশ্ন তোলেন,“আর কত নীচে নামবে আমাদের এই সমাজ?”

উল্লেখ্য, মিথ্যা প্রচার চালিয়ে তৎকালীন (২০১৬ সালের ১৩ মে) সংসদ নাসিম ও সমমানের উপস্থিতিতে তাঁরই প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতে নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরে উঠ বস করানো হয়। এই ছবি দেশে বিদেশে ছড়িয়ে পরে-তুমুল প্রতিবাদ ওঠে সর্বত্র। তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত সহ নানা শাস্তি দেয় সাংসদের নেতৃত্বাধীন ম্যানেজিং কমিটি,কিন্তু পরে শিক্ষামন্ত্রী ওই সকল সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেন।

পদার্থ বিজ্ঞানী অরুণ কুমার বশকের স্ত্রী দেবিকা বশাক জীবিত কালে তাঁর বাড়ির জায়গা দখলমুক্ত করে যেতে পারেন নি। রাজশাহী নগরীর সাগরপারা এলাকায় তাঁর নিজ বাড়ীর একাংশ আজও অবৈধ দখলে রয়েছে প্রতিবেশী ইমাম ইয়াহিয়া ফেরদৌসের।

এমন আরও বহু ঘটনায় সমাজ ও দেশ ভারাক্রান্ত। আফসোস করে অনেকেই বলেন-আইনের শাসন নেই,বিচার নেই-স্থান দখল করেছে নৈতিক অবক্ষয় যার ফলে সমাজে তাবৎ দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে।

নৈতিক অবক্ষয় কার? জনগণের না শাসকগোষ্ঠীর, গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে বিচারহীনতা, আইন না মানা, আইন প্রণেতার আইন ভঙ্গ করা, দলবাজি, টেন্ডারবাজি-তাবৎ অশুভ তৎপরবতায় সরকার দলীয় লোকেরা লিপ্ত থাকছে প্রকাশ্যেই। তাদের কোন শাস্তি নেই-বিচার নেই-নেই আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ। স্কুলের ম্যানেজিং কমিটিগুলির ইন্ধনে শিক্ষকরা ছাত্রদের দ্বারা নিগৃহীত হচ্ছে-আর ঐ কমিটিগুলির পরিচালনার দায়িত্বে সরকারী দলের স্থানীয় নেতারা। তা হলে নৈতিক অবক্ষয় বলবো রাষ্ট্রীয় অপশক্তির হীন কার্যকলাপ বলবো-তা সবাই মিলে আজ বিশেষভাবে ভাবার সময় এসেছে।

লেখক : সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ, সাংবাদিকতায় একুশে পদকপ্রাপ্ত।