ইমরান হোসাইন, সিরাজগঞ্জ : গোলপোস্টে দাঁড়িয়ে একের পর এক প্রতিপক্ষের আক্রমণ ঠেকিয়ে দিচ্ছেন পয়ষট্টি বছরের গোলরক্ষক রমজান আলী। অপরপ্রান্তের গোলপোস্ট রক্ষার দায়িত্বে রয়েছেন ৭০ বছর বয়সী বরাত আলী। তারা দুজনেই রিকশা শ্রমিক। এই বয়সেও প্যাডেল ঠেলে সংসারের জীবিকা রক্ষা করে চলছেন,  সে আত্মবিশ্বাস থেকেই গোলপোস্ট রক্ষার দায়িত্বও নিয়েছেন তারা। 

মঙ্গলবার (১২ জুলাই) বিকেলে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার শিয়ালকোল ইউনিয়নের শিবনাথপুর গ্রামবাসী আয়োজিত বঙ্গমাতা প্রীতি ফুটবল ম্যাচটিতে রমজান আর বরাতের মতো ২২ জন খেলোয়াড়ই ছিলেন পঞ্চাশোর্ধ। খেলা শেষে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পুরস্কার বিতরণ করেন ৪নং শিয়ালকোল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ মো: সেলিম রেজা। এর আগে খেলাটির উদ্বোধন করেন বঙ্গমাতা সাংস্কৃতিক জোট সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও বাংলানিউজের সাংবাদিক স্বপন চন্দ্র দাস এবং ৪ নং শিয়ালকোল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আলামিন শেখ।

খেলার মাঠ মাতিয়েছেন ৭০ বছর বয়সী কৃষক আব্দুল হাই, একই বয়সের মুদি দোকানি সোলেমান, শাহেদ আলী, কৃষক আব্দুল মান্নান, কৃষি মজুর আব্দুল কুদ্দুছ, নার্সারীয়ান আব্দুর রহমান, তাঁতশ্রমিক আব্দুল মান্নান, ইসমাইল হোসেনসহ গাঁয়ের খেটে খাওয়া বয়স্ক মানুষগুলো। লাল ও সবুজ দলের ব্যানারে অনুষ্ঠিত এ ম্যাচটিও আয়োজন করা হয় ধান কাটার পর পতিত থাকা জমির উপর। খেলোয়াড়দের পোশাক ছিল লাল ও সবুজের জার্সি এবং লুঙ্গি। ঈদের আনন্দকে বাড়িয়ে তুলতে এ যেন মজার একটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচ।

লাল দলের স্ট্রাইকার ৫৫ বছরের তাঁত শ্রমিক মান্নান গোলপোস্টের কাছাকাছি যেতেই শত শত নারী-পুরুষ দর্শকের উৎসবমুখর চিৎকার মাঠটিকে সরগরম করে তোলে। অপরদিকে সবুজ দলের ষাট বছরের স্ট্রাইকার রইচ উদ্দিনের পায়ে বল গেলেও উৎফুল্ল হয়ে ওঠে দর্শকরা। দর্শকদের করতালির মধ্যে কোন নির্দিষ্ট দলের প্রতি সমর্থন ছিল না। বৃদ্ধদের এই খেলাকে উৎসাহ যুগিয়েছেন সকল শ্রেণির দর্শক।

ঈদ মানেই আনন্দ। আর ঈদের এ আনন্দকে আরও রঙিন করতে ব্যতিক্রমী এই ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করে শিয়ালকোল ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ। পঞ্চাশেরও বেশি বয়সী গাঁয়ের কৃষক-শ্রমিকদের অংশগ্রহণে প্রীতি ফুটবল ম্যাচটি শত শত দর্শকদের আলোড়িত করেছে।

খেলা দেখতে আসা আছাব আলী বলেন, ঈদের ছুটিতে এই খেলাটি ছিল দারুণ উপভোগ্য। খেলা যেমন তেমন প্রাণখুলে হাসতে পেরেছে আমাদের দর্শকরা। সময়টুকো আনন্দেই কাটলো বলে জানালেন গাঁয়ের বয়োজৈষ্ঠ্য মুরুব্বি বাহের আলী, বেলাল হোসেন, মনি বেপারিসহ অনেকেই। তারা বলেন, বয়সের কাছে হার মানেনি ঈদ আনন্দ।

কদভানু, মায়া খাতুন, বিলকিস বেগমসহ শত শত নারী দর্শক মাঠের উভয়পাশে খেলা উপভোগ করেছিলেন। গাঁয়ের এই বধুরা সচরাচর কোন খেলা দেখতে আসেন না। বুড়োদের খেলা এ কারণেই দেখতে এসেছেন তারা।

বঙ্গমাতা সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক স্বপন চন্দ্র দাস বলেন, ঈদের আনন্দকে বাড়তি রঙ দিতে খেলাটির আয়োজন করা হয়। এতে নিজেদের সামর্থ্যের উপর বিশ্বাস জন্মে বয়োজ্যেষ্ঠদের। বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতার নামে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে টুর্নামেন্ট অনেকেই দেখেছেন। কিন্তু বয়োবৃদ্ধদের নিয়ে খেলা এটাই প্রথম। সব মিলিয়ে এ আয়োজনটি ছিল অসাধারণ।

শিয়ালকোল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আলামিন শেখ বলেন, দাদা-চাচাদের নিয়ে এমন খেলার আয়োজন এ এলাকায় ব্যতিক্রমী।

শিয়ালকোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ মো: সেলিম রেজা বলেন, শিবনাথপুর গ্রামের লোকজন সর্বদাই ব্যতিক্রমী আয়োজন করে থাকে। এবারও তারা নতুন ধরনের আয়োজন কর এলাকাবাসীকে অন্য রকম আনন্দ দিয়েছে।

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে স্থানীয় ৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আলম শেখের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বঙ্গমাতা সাংস্কৃতিক জোট সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও বাংলানিউজের সাংবাদিক স্বপন চন্দ্র দাস এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আলামিন শেখ। মো: নজরুল ইসলাম ও সেলিম রেজার সঞ্চালনায় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ১ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি মনিরুল ইসলাম, ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মমিনসহ গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

(আই/এসপি/জুলাই ১৩, ২০২২)