মিঠুন গোস্বামী, রাজবাড়ী : জলের উপর বিছানো থালার মতো গোলাকার সবুজ পাতার ফাকে ফাকে লম্বা ডগার উপর লাল সাদা পদ্ম। অসংখ্য পাপড়ির চমৎকার বিন্যাসে সজ্জিত এক একটি পদ্ম যেমন সুগন্ধি ছড়ায়, তেমনি যে কোন মানুষের হ্রদয় কাড়ে সহজেই। তাই হয়তো পদ্ম কাটার যন্ত্রণা ও এর স্পর্শ থেকে আটকে রাখতে পারে না যে কোন বয়সের মানুষ কে। 

পদ্ম ফুল শুধু যে বিশুদ্ধতা, সৌন্দর্য ও পবিত্রতার প্রতীক হিসাবে মানুষের মনোহরণই করে তা নয়, খাদ্য ও ওষুধি গুণ হিসাবে পদ্ম আজ সারা বিশ্বে সমাদৃত। ‘সুগন্ধি’ বা ‘অ্যারোমা’ হিসাবে প্রসাধনী শিল্পে পদ্ম ব্যবহার করা হয়। গবেষকরা প্রমাণ করেছেন, পদ্মের এন্টি অবেসোজেনিক ও এন্টি ডায়াবেটিক ঔষুধি গুণ আছে। এছাড়াও রয়েছে ন্যুসিফেরিন, অ্যাপোরফিন ও আরমেপ্যাভিন জাতীয় অ্যালকালয়েড।

পদ্ম ফুল সাধারণত সাদা, গোলাপি অথবা হালকা গোলাপি রং এর হয়। অনেকেই লাল শাপলা আর পদ্ম ফুলের মধ্যে মিল থাকার কারণে চিনতে ভুল করেন কিন্তু এর বীজপত্র ভালোভাবে দেখলেই পার্থক্য বোঝা যায়। আবার কাশ্মীর আর ইরানে নীল বর্ণের পদ্ম ফুলের দেখা মেলে যাকে নীল পদ্ম বা নীল কমল বলে।

একসময় আমাদের দেশে পুকুর কিংবা বিলে-ঝিলে শোভাবর্ধন করে ফুটে থাকতো মনোহারি পদ্মফুল। কিন্তু প্রকৃতি বৈরিতা আর দূষণে পদ্মফুল এখন আর দেখাই যায় না। আর নগরে পদ্ম ফুল দেখতে পাওয়া দুষ্প্রাপ্যই বটে।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের মটবাড়িয়া পদ্ম বিলে দেখা যায় কয়েক একর পতিত জমিতে লাখ লাখ পদ্ম ফুল ফুটে আছে। দেখতে আসা দর্শনার্থীরা নিজের নিজেদের ইচ্ছা মতো ফুল তুলে নিয়ে যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ সৃতিটুকু ধরে রাখতে ক্যামেরা বন্দি হচ্ছে।

পদ্ম বিলে ঘুরতে আসা জয়নাল আবেদিন বলেন, এখন আর তেম পদ্ম ফুল দেখা যায় না। মানুষের মুখে মুখে শুনতে পেয়ে দেখতে আসছি। তবে পদ্ম ফুলের কাছে যেতে অনেক প্রতিকূলতা পোহাতে হইছে। তবে কাছ থেকে পদ্ম ফুল দেখে খুব ভালো লাগছে। বাড়িতে গিয়ে সবাইকে দেখানোর জন্য কয়েক পদ্ম নিয়ে যাচ্ছি। এখানে কেউ ফুল তুলতে বাঁধা প্রদান করছে না।

স্থানীয় অশোক বিশ্বাস বলেন, কয়েক বছর আগেও এখানে তেমন কেউ আসতো না। গত ২ বছর যাবত প্রচুর নারী পুরুষ এই পদ্ম বিলে ফুল দেখতে আসে।

উদ্ভিদবিদ্যার মতে বেশিরভাগ খাল-বিল জলাশয়ে জল না থাকায় দিনদিন অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে পদ্মের মতো অনেক জলজ উদ্ভিদ।

(এমজি/এসপি/জুলাই ১৪, ২০২২)