শিতাংশু গুহ


হিন্দুদের বলি ‘ভারত আপনাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে না; আওয়ামী লীগ বা সরকার অথবা তথাকথিত প্রগতিশীলরা আপনাদের বাঁচাতে আসবে না। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বাঁচতে শিখুন, বঙ্গবন্ধু’র ভাষায়, ‘ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলুন’। ডারউইন বলেছেন, ‘সারভাইভাল অফ দি ফিটেষ্ট’- বাঁচার জন্যে যা কিছু দরকার তাই করতে হয়, এটি প্রকৃতির নিয়ম। যাঁরা আপনাকে মারতে আসে, তাঁরা জানোয়ার; জানোয়ারের সাথে জানোয়ারের ভাষায় কথা বলতে হয়! বাঁচতে হলে কান্নাকাটিতে কাজ হবেনা, রিলিফ খেয়ে পেট ভরেনা, নিউটনের সূত্রমতে, প্রতিটি ক্রিয়ার একটি সম-পরিমান বিপরীত ক্রিয়া থাকে, হিন্দুদের ক্ষেত্রে নিউটন ফেল! জীবন ও স্ত্রীলোকের সম্ভ্রম বাঁচাতে, সহায়-সম্পত্তি রক্ষায় আর নয় প্রতিবাদ, এবার প্রতিরোধ গড়ুন, লড়াই করে বাঁচতে শিখুন। যৌবনে আমরা শ্লোগান দিতাম, ‘লড়াই লড়াই, লড়াই চাই; লড়াই করে বাঁচতে চাই’। লড়াই করেই বাঁচতে হবে, না পারলে একযোগে ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করুন, ভারত চলে যান। 

স্বাধীনতার পর অনেকেই বলতেন, ‘দ্বিজাতি তত্ত্ব’ মিথ্যা হয়ে গেছে। এখন দেখা যায়, তা তো হয়ই-নি বরং জিন্নাহ’র দ্বিজাতি তত্ত্ব বাংলাদেশে নগ্নভাবে প্রকাশিত। ১৯৪০ সালে মুসলিম লীগ লাহোর প্রস্তাবে মোহাম্মদ আলী জিন্না’র দ্বিজাতীতত্ত্বের ব্যাখ্যায় বলেছিলো, 'হিন্দু মুসলিম একসাথে থাকা সম্ভব নয়'। বাংলাদেশের হিন্দুরা হয়তো এখন ভাবছে, ‘মুসলমানদের সাথে কি আদতেই থাকা যাবে’? যেকোন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে বা মদিনা সনদের দেশে কি আদৌ সংখ্যালঘুরা টিকতে পারে? মদিনা সনদের মদিনায় তো ‘অমুসলিমদের প্রবেশ নিষেধ’, তাইনা? বিশ্বের ৫০+ মুসলিম দেশে সংখ্যালঘুরা কি ভালো আছে? স্বাধীনতার পর সবাই ভেবেছিলো বাঙ্গালী জাতীয়তায় উজ্জ্বীবিত বাঙ্গালী হিন্দু-মুসলমান হয়তো একত্রে থাকতে পারবে? ৯০% মুসলমানের দেশে এখন কি তা মনে হয়? ‘হিন্দু বাংলা ছাড়ো’ এতো সবার মনের কথা! স্বাধীনতার পর এককোটি হিন্দু দেশে ফিরে এসেছে, এটি অনেকে মেনে নিতে পারেননি, যদিও না মেনে তখন উপায় ছিলোনা।

অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী বলেছেন, শুক্রবারটা তাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে। দেশের বুদ্ধিজীবীরা এখনো মোহাবিষ্ট, তন্দ্রাচ্ছন্ন, তোষামোদিতে ব্যস্ত, তাঁরা বুঝতে চাচ্ছেন না যে, শুধু শুক্রবার নয়, পুরো দেশটা তাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে। হিন্দুর কাছে শুক্রবার একটি আতঙ্কের দিন। মিডিয়া লিখছে, নড়াইলের হিন্দুরা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। শুধু নড়াইল নয়, পুরো বাংলাদেশের হিন্দুরা আতঙ্কগ্রস্থ। কেউ জানেনা, শান্তিবাহিনী কখন এসে কার ওপর আক্রমণ চালায়। প্রশাসনের মদত ব্যতীত সাম্প্রদায়িক সংঘাত ঘটে না, গত দশ বছরে একের পর এক সন্ত্রাসী আক্রমণ এবং একটি ঘটনারও বিচার না হওয়া এর প্রমান। এ যাবৎ ঘটে যাওয়া প্রায় প্রতিটি ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী জড়িত, মিডিয়া জানাচ্ছে, নড়াইলের ঘটনা ব্যতিক্রম নয়? হিন্দুদের খেদানোর ব্যাপারে আওয়ামী লীগ-বিএনপি একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ’; কথাটা সর্বাংশে সত্য।

২০০১-র পর বিএনপি আমলে হিন্দুদের ওপর যে আক্রমন হয়েছিলো, গত এক যুগে আওয়ামী লীগের শাসনামলে সেই রেকর্ড ম্লান হয়ে গেছে। বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যেখানে পুলিশ দুর্বৃত্তকে না ধরে ভিকটিমকে ধরে? নড়াইলের ঘটনায় পুলিশ ভিকটিম আকাশ সাহা ও তার বাবাকে সর্বাগ্রে ধরেছে, সন্ত্রাসীরা তাদের ভাই, তাই প্রথমে ধরেনি। মিটিং-মিছিল শুরু হলে পাঁচজনকে ধরে, ‘আইওয়াশ’? দেশে এখন একটি ধর্মান্ধ গোষ্ঠী সুপরিকল্পিত ভাবে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাগুলোতে সন্ত্রাস চালাচ্ছে। লক্ষ্য ভয়ভীতি সৃষ্টি করে এদের দেশত্যাগে বাধ্য করা। এই ‘বিশেষ ধর্মান্ধ গোষ্ঠী’ তৈরির দায় সম্পুর্নভাবে আওয়ামী লীগের। আওয়ামী লীগ জঙ্গীবাদ দমন করেছে, সর্বহারা বা নক্সালীদের নিশ্চিহ্ন করেছে, সরকার চাইলে সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ করা সম্ভব। সরকার তা করছে না; বরং ক্ষমতায় থাকার জন্যে হিন্দুদের জিম্মি করে ‘গিনিপিগ’ হিসাবে ব্যবহার করছে। এটি বুমেরাং হতে বাধ্য।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।