স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা : পবিত্র ঈদুল আজহা আজ সোমবার। ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে দেশের প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা উদযাপন করছেন এই ধর্মীয় উৎসব। ঈদ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন নগরীর লাখ লাখ মানুষ শেকড়ের টানে এরই মধ্যে ফিরে গেছেন শৈশবের চেনা জনপদ গ্রাম-গঞ্জে। মুসলমানদের দুটি প্রধান ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে অন্যতম ঈদুল আজহা শুধু পশু কোরবানির আনুষ্ঠানিকতাই নয়, বিশ্বে মুসলমানদের ত্যাগ, আত্মসমর্পণ ও আত্মোপলব্ধির শিক্ষা দেয়।

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারাও এ উপলক্ষে দেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বাণীতে বলেন, “ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা মহান আল্লাহর প্রতি অপরিসীম আনুগত্য ও ভালবাসার এক অনুপম নিদর্শন। পরমতসহিষ্ণুতা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানসহ মানবাধিকার সমুন্নত রাখার মাধ্যমে শান্তি-সম্প্রীতিময় বিশ্বসমাজ গঠন করা সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন জাতিতে জাতিতে ধৈর্য, সহনশীলতা, সহমর্মিতাসহ অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও ভালবাসা। ঈদুল আজহার মর্মবাণী আমাদের সেই শিক্ষা দেয়।”

ত্যাগের মহান আদর্শ ও শিক্ষাকে চিন্তা ও কর্মে প্রতিফলিত করার পরামর্শ দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “পবিত্র ঈদুল আজহা মুসলিম জাতির ঐক্য, সংহতি ও ভ্রাতৃত্ববোধকে আরো সুসংহত করবে বলে আমার বিশ্বাস।”

রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে প্রিয়বস্তুকে উৎসর্গের মাধ্যমে তার সন্তুষ্টি লাভের যে অনুপম দৃষ্টান্ত হযরত ইব্রাহীম (আ.) স্থাপন করে গেছেন, তা বিশ্ববাসীর কাছে চিরকাল অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হয়ে থাকবে।

“এই উৎসবের মধ্য দিয়ে সামর্থ্যবান মুসলমানগণ কোরবানিকৃত পশুর গোশত আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের মধ্যে বিলিয়ে দেন। সমাজে সাম্যের বাণী প্রতিষ্ঠিত করেন।”

সবাইকে ঈদুল আজহার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমুখী কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে বিভেদ ও বৈষম্যহীন সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী ত্যাগের মহিমায় ভাস্কর পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশবাসী ও বিশ্বের সব মুসলিম ভাই-বোনকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক জানান।

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি মহানগরীর প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপগুলো জাতীয় পতাকা ও ঈদ মোবারক খচিত পতাকায় সজ্জিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশজুড়ে যথাযোগ্য মর্যাদা ও আনন্দের মধ্য দিয়ে ঈদ উৎসব উদযাপনের জন্য সরকারি ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বিদেশের বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সড়ক সজ্জিত করা, আলোকসজ্জার ব্যবস্থা ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল, কারাগার, শিশু সদন, ছোটমণি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র, সেফ হোমস, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র ও দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্রে ঈদের দিন উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।
রাজধানী ঢাকায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় ঈদগাহে। ঢাকায় ৫৬৮ স্থানে ঈদুল আযহার নামাজের জামাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা সিটি করপোরেশন (উত্তরের) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিএম এনামুল হক। সকাল সাড়ে ৮টায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এতে ইমামতী করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুল ইমাম মুফতি মাওলানা মো. আব্দুল্লাহ। প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য ও বিচারপতিসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ এখানে নামাজ আদায় করবেন। এ ছাড়া জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে মোট পাঁচটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৭টা থেকে শুরু হয়ে প্রতি ঘণ্টা অন্তর এ জামাত হবে।রাজধানীবাসীর জন্য প্রতিটি এলাকায় ঈদ জামাতের ব্যবস্থা করেছে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন। ঢাকা সিটি করপোরেশন (উত্তরের) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিএম এনামুল হক জানান, এবারের ৫৬৮ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

রাজধানীর লালবাগ শাহী মসজিদে সকাল ৮টায়, কলাবাগান বশিরুদ্দিন রোড জামে মসজিদে সকাল পৌনে ৮টায়, পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারের মিয়া সাহেবের ময়দান খানকা শরিফ জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায়, বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরিফে সকাল ৮টায়, সিদ্ধেশ্বরী হাই স্কুল জামে মসজিদে সকাল ৮টায়, হাজারীবাগ পশ্চিম ভাগলপুর শাহ মস্তান জামে মসজিদে সকাল পৌনে ৮টায়, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন প্লাটফর্মে সকাল ৮টায়, দক্ষিণ বনশ্রী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টা ও সাড়ে ৮টায়, গোপীবাগ ব্রাদার্স ইউনিয়ন খেলার মাঠে সকাল সাড়ে ৭টায়, মোহাম্মদপুর জামে মসজিদ কমপ্লেক্সে সকাল পৌনে ৮টায়, নয়াপল্টন জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায়, শ্যামলীর এসওএস শিশুপল্লীতে সকাল পৌনে ৮টায়, গেণ্ডারিয়া ধুপখোলা মাঠে সকাল পৌনে ৮টায় ও হাজারীবাগ পার্ক মাঠে সকাল সাড়ে ৭টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে বলে বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম : বন্দরনগরী চট্টগ্রামে সকাল পৌনে ৮টায় জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ ময়দানে ঈদুল আযহার প্রথম জামাত হবে। এ ছাড়া সকাল সাড়ে ৮টায় সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে আউটার স্টেডিয়ামে, জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সকাল ৮টায় এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সকাল ৮টায় আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদে ঈদ জামাত হবে। এ ছাড়া লালদিঘি ময়দানে সকাল সাড়ে ৮টায় জামাত হবে। এবারে চট্টগ্রামে ১৯০ টি স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

খুলনা : খুলনায় সকাল ৮টায় সার্কিট হাউজ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এরপর সকাল ৯টায় খুলনা টাউন জামে মসজিদে দ্বিতীয় জামাত হওয়ার কথা। তবে আবহাওয়া খারাপ থাকলে সকাল ৮টা, ৯টা ও ১০টায় টাউন জামে মসজিদে পর পর তিনটি জামাত হবে। এর বাইরে নগরীর বিভিন্ন স্থানে ঈদের জামাত হবে।

(ওএস/অ/অক্টোবর ০৬, ২০১৪)