নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁয় দিন দিন আখের চাষ কমলেও জেলা হাট-বাজারে জমে উঠেছে আখের খুরা বাজার। প্রতিদিনই এই বাজার থেকে দেশী জাতের আখ কিনে রাণীনগর ও তার আশেপাশের অঞ্চলগুলোতে বিক্রি করছেন খুচরা ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা। আর রাণীনগর উপজেলায় উৎপাদিত দেশী জাতের (আঁচাফারাম জাত) আখের চাহিদা অনেকটাই বেশি। কারণ এই জাতের আখ শুধুমাত্র রাণীনগর ও তার আশেপাশের অঞ্চলেই চাষ হয়ে থাকে। এই জাতের আখ অন্যান্য আখের চেয়ে বেশি মিষ্টি। এছাড়া বর্তমান সময় আখের মৌসুম হওয়ায় বিভিন্ন স্থানে ফেরি করেও আখ বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া ভ্রাম্যমাণ ভ্যান গাড়িতে মেশিনের মাধ্যমে বের করা আখের রসের চাহিদাতো রয়েছে। গরম মৌসুমে এর চাহিদা বেড়ে যায়। মেশিন দিয়ে বের করা প্রতি গ্লাস আখের রস ১০টাকা করে বিক্রি হয়। 

রানীনগর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১০হেক্টর জমিতে আখের চাষ করা হয়েছে। উপজেলার বাহাদুরপুর, চকমনু, চকাদিন, ত্রিমোহনীসহ বেশ কিছু গ্রাম একসময় আখ চাষের গ্রাম হিসেবে পরিচিত ছিল। বর্তমানে এই গ্রামগুলোতে হাতে গোনা কয়েকজন চাষী আখের আবাদ ধরে রেখেছেন। তবে প্রতি বছরই এর পরিমাণ কমছে। আখের জমিতে বিকল্প আবাদ হিসেবে অধিক লাভজনক ফসলের বাগান তৈরি করা, আখের জমিতে লাভজনক ভুট্টার আবাদের পরিমাণ বেশি হওয়া, মিল থেকে কৃষক আখের দাম যথাসময়ে না পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে জেলায় আখের চাষ কমছে। এছাড়া আখ চাষে খরচ বেশি হওয়ার কারণে বাজারে বেশি দামে আখ বিক্রি করার কারণে ক্রেতার সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। যার কারণে আখের চাষও কমে যাচ্ছে।

রানীনগরের আখ চাষি মুহাম্মদ রবিউল আলম বলেন, এবার আখের ফলন ভালো হয়েছে। আমি ৩বিঘা জমিতে আখের চাষ করেছি। আমি ইতোমধ্যেই ৪০হাজার টাকার আখ বিক্রি করেছি। খেতের সব আখ বিক্রি করে আরও অন্তত ৪০হাজার টাকা পাওয়া যাবে। তবে গত বছর আখে পোকার আক্রমণ বেশি হওয়ার কারণে আমরা আখচাষীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলাম। তিনি আরো বলেন, আমরা ক্ষেত থেকে আখ তুলে উপজেলার রেলগেট সংলগ্ন আখের বাজারে নিয়ে যাই। আবার অনেক সময় খুচরা ব্যবসায়ীরা ক্ষেত থেকেই আকার অনুযায়ী আখ কিনে নিচ্ছেন। তবে কৃষি অফিস থেকে যদি আখ চাষে আরো সহযোগিতা পাওয়া যেতো তাহলে আখ চাষ কমতো না। কারণ এটি অত্যন্ত লাভজনক আবাদ।

কারণ আখের সবকিছুই ব্যবহারযোগ্য। উপজেলার ত্রিমোহনী হাটের খুচরা আখ বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, ক্ষেত থেকে তোলা প্রতিটি আখ অনুমান করে দরদাম করা হয়। এরপর সেই আকারের আখ আলাদা করে গাড়িতে করে বাজারে নেয়া হয়। আখ বিক্রি একটি মৌসুম ভিত্তিক ব্যবসা। ভালো মানের প্রতিটি আখ খুচরা ২৫-৩০টাকা করে বিক্রি করি। এছাড়াও অন্যান্য দামেরও আখ রয়েছে। তবে বর্তমানে বাজারে প্রতিটি পণ্যের দাম বেশি হওয়ার কারণে আখের দামও আগের তুলনায় অনেক বেশি হয়েছে। তারপরও আখ বিক্রি করে লাভ ভালো হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শহীদুল ইসলাম বলেন, আখ চাষ পুরোটাই লাভজনক। আখের পাতা গবাদিপশুর জন্য স্বাস্থ্য সম্মত উন্নত মানের খাদ্য। আখের ছাল/ ছোবা শুকানোর পর জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা যায়। সীমিত পরিমাণ সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। জমিতে আখ চাষ করলে সেই জমির উর্বরতা শক্তিও বৃদ্ধি পায়। এককথায় আখ চাষ অত্যন্ত লাভজনক একটি ফসল। কিন্তু বিগত কয়েক বছর আখে পোকার আক্রমণ বেশি হওয়ায় ও কাঙ্খিত দাম না পাওয়ায় আখের চাষ চলতি মৌসুমে কিছুটা কমেছে। তবে আখ চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি অফিসের কর্মকান্ড অব্যাহত রয়েছে।

(বিএস/এসপি/আগস্ট ০১, ২০২২)