উজ্জ্বল হোসাইন, চাঁদপুর : বর্ষার এই ভর মৌসুমে হাজীগঞ্জের কৃষিজমিতে পানি নেই। পানির অভাবে উপজেলার সর্বত্র পাট নিয়ে কৃষকরা পড়েছেন মহাবিপাকে। মাঠে পানি না থাকার কারণে পাট গাছ পানিতে ভিজানো, পাট পচানো আর আঁশ ছড়ানো নিয়ে কৃষকরা বেকাদায় রয়েছেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সাময়িক সমস্যা থেকে বাঁচতে পাট চাষীদেরকে পাট ভিজাতে বা পচাতে পুরাতন প্রথায় (জাগ) না গিয়ে রিবন (কাঁচা পাটের আঁশ ছড়িয়ে পানিতে ভিজানো) পদ্ধতি অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি বছর উপজেলায় এবার ৪৫০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। প্রথম দিকে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিপাত হওয়ায় উৎপাদন ভালো হয়েছে। কিন্তু পরে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মাঠে ও খাল-বিলে পর্যাপ্ত পানি নেই। তাই পাট পচানো নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। কৃষকরা ভোগান্তিতে পড়েছেন।

সরেজমিনে উপজেলার বাকিলা ও কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের বেশ ক’টি কৃষি জমি ঘুরে দেখা গেছে, জমিতে কোনো পানি নেই। প্রায় জমি থেকে পানি পুরোপুরি নেমে গেছে। মাঠের পানি নেমে গেলে কী হবে, অধিকাংশ পাটের জমিতে পাট এখনো রয়ে গেছে। জমিতে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় বেশিরভাগ জমির পাট গাছ হলদে আকার ধারণ করেছে। পাটের খড়ি অনেকটাই ভঙ্গুর হয়ে যাচ্ছে।
আলাউদ্দিন নামের আরেক কৃষক জানান, পাট গাছ কাটার পর জমিতে পানি না থাকায় সেই পাট গাছ অন্যত্র নিয়ে ভিজানোর কারণে খরচ বেশি পড়ে। আবার পাটের পচন ঠিক মতো না হওয়ায় ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে না। পাটের জমি তৈরি, বীজ বপন করা, জমি নিড়ানো, গাছ বাছা দেয়া, সার দেয়া, পাট কাটা, পানিতে ভিজানো, আঁশ ছড়ানো, ধৌত করা, শুকানো, বাজারে নেয়া পর্যন্ত কৃষকের যে ব্যয় হয় সেই ব্যয়ের সাথে বিক্রি আয়ের তফাৎ প্রায় অর্ধেক কম। যে কারণে আসছে বছরগুলোতে আমরা আর পাট চাষ করবো না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাট লাগানোর পর প্রথম দিকে বৃষ্টি হওয়ায় এবারে অনেকটাই পাটের ভালো ফলন হয়েছে। তাছাড়া গত কয়েক বছর পাটের দাম ভালো পাওয়ায় এ বছর পাটের আবাদও বেড়েছে। এ বছর কাক্সিক্ষত বৃষ্টি না হওয়ায় আর বর্ষার পানি জমি থেকে নেমে যাওয়ার কারণে পাটগাছ কাটা, পাট পচানো নিয়ে কৃষক পড়েছে বেকায়দায়। সাধারণত পাট পচাতে কমপক্ষে ২১ দিন ভালো পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হয়। প্রতি বছর বর্ষার এই সময়ে মাঠে পর্যাপ্ত পানি থাকায় কৃষকরা পাট ভিজিয়ে রাখতে সমস্যা হতো না। কিন্তু এবারে হয়েছে তার উল্টো। পানি না থাকায় পাট পানিতে ভিজাতে না পারার কারণে ভালো আঁশ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই দামও পাচ্ছে না কৃষক।

উপজেলার বাকিলা ইউনিয়নের বোরখাল গ্রামের শাহজাহান নামের পাট চাষী জানান, তিনি এবারে ১২০ শতাংশ জমিতে পাট চাষ করেছেন। প্রতিবছর এই সময় বিলে কোমর সমান পানি থাকতো। কিন্তু এবার বিলে পানি নেই। তাই বিকল্প ব্যবস্থায় পাট পচানোর ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু পর্যাপ্ত পানি না থাকার কারণে পাট ভালো মতো পচানো যাচ্ছে না।

শাহজাহান আরো বলেন, কম পানিতে পাট পচানোর কারণে মানসম্মত পাটের আঁশ পাওয়া যায়নি। যে কারণে এবারের পাট কালচে হয়ে গেছে এবং আঁশ খুব শক্ত। তাই ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা খানম এ প্রতিনিধিকে জানান, আমাদের কৃষকরা এখনো জাগ দেয়ার নিয়মে পাটের আঁশ ছড়ায়। এই নিয়মে পর্যাপ্ত পানির প্রয়োজন। আধুনিক পদ্ধতিতে (রিবন পদ্ধতি) পাটের আঁশ ছড়ানো অনেক সহজ। এ পদ্ধতিতে কাঁচা পাটের আঁশ ছাড়িয়ে সেই আঁশ পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। তখন ঠিক মতো আঁশ পাওয়া যায়।

অপর এক প্রশ্নে এই কর্মকর্তা বলেন, পাটের আঁশ ছড়ানো ও পাট পচানের ক্ষেত্রে রিবন রেটিং পদ্ধতি অনুসরণ করানোর প্রতি জোর দিচ্ছি আমরা। এ পদ্ধতি ব্যবহারে ইতিমধ্যে পাটচাষীদের উদ্ধুদ্ধ করার কাজ শুরু করেছি। এ বছর থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামীতে রিবন রেটিংয়ের প্রতি গুরুত্ব দেয়া হবে বলে তিনি জানান।

(ইউএইচ/এএস/আগস্ট ০৩, ২০২২)