বুলবুল হাসান : বর্তমান বিশ্বে যদি কোন নেতা বা নেত্রী সব থেকে বেশি জীবনের ঝুকির মধ্যে থেকে থাকেন তিনি আর কেউ নন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছায়া যেমন মানুষের সঙ্গে থাকে ঠিক তেমনি মৃত্যুও যেন ছায়া হয়ে তাকে অনুসরণ করে, এটা তিনিও খুব করে ভাল জানেন কিন্তু কেন যেন বিশ্বাস করেন না। যেমন করেননি বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধুর অন্তরে যেটা বদ্ধমূল ধারনা ছিল তাহলো যে বাঙ্গালীর জন্য তিনি এতোটা করেছেন আর যাই করুক না কেন সে বাঙ্গালী তার বুকে কখনো ছুরি চালাতে পারেনা, তার সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতা করতে পারেনা।

পাহাড়সম হৃদয়ের এহেন সরল বিশ্বাসের চড়া মূল্যই একসময় বঙ্গবন্ধু দিয়েছেন সপরিবারে শাহাদত বরণ করার মধ্য দিয়ে। অবশেষে বঙ্গবন্ধুকে আমরা ধরে রাখতে পারলাম না। আসলে গণমানুষের ভালবাসায় যাদের মন পড়ে থাকে মৃত্যু ভয় কখনোই তাদের ভীত করতে পারেনা। কিছু মানুষের এ নশ্বর পৃথিবিতে জন্মই হয়েছে নিজে ধুপের মতো জ্বলে অন্যকে শান্তি দেবার জন্য। মন প্রান উজাড় করে অন্যকে ভালবাসার জন্য। বঙ্গবন্ধুর বিষয়টা ছিলো ঠিক তাই, আজ জননেত্রী শেখ হাসিনার ব্যাপারটিও ঠিক যেন সেরকমই।

জীবনের ঝুকিঁকে থোড়াই কেয়ার করে কেবল মানুষের ভালবাসা অর্জনই যেন তার মুল কাজ। কোন ভয়ভীতি কারো হুমকি ধামকি কখনো তাকে আচ্ছন্ন করতে পারেনা। কিন্ত প্রশ্ন হচ্ছে যে, কতোক্ষন একজন মানুষের পক্ষে সবকিছু উপেক্ষা করে চলা সম্ভব? কতক্ষনই বা এভাবে একজন মানুষের পক্ষে সম্ভব টিকে থাকা?

যিনি জনগনের নেত্রী, মানুষের কল্যাণই যার জীবনের ব্রত, তিনি তো আর বুলেট প্রুফ কাচের ঘরে বসে দেশ শাসন করতে পারেন না। চারপাশে জীবনের ঝুঁকি থাকলেও সে ঝুঁকিকে উপেক্ষা করেই তাকে পথ চলতে হয়, মানুষের সেবা করতে হয়, শত্রুর ভয়ে চুপচাপ হাত পা গুটিয়ে বসে থাকলে তার চলেনা। আমরা যে বিষয়টি খুব উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করি সেটা হচ্ছে শক্রর শানিত চাপাতি গর্দান স্পর্শিত জেনেও, ঘাতকের উত্তপ্ত বুলেট সদা তার দিকে ধাবমান বুঝেও প্রাণপ্রিয় নেত্রীর কোন ভাবান্তর নেই। কাজ করেনা কোন বাড়তি চিন্তা। কিন্ত কেন?

আমাদের নেত্রী এবং পাশাপাশি দেশবাসীকে যে বিষয়টি ‍বুঝতে হবে তাহলো ব্যক্তি শেখ হাসিনা বলে কথা নয় আল্লাহ না করুন যদি তার কিছু হয়ে যায় তাহলে এদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ কি হবে? কাদের নেতৃত্বে দেশ চলবে? কার হাতে রক্ষা পাবে আমাদের সার্বভৌমত্ব গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা ?

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে বড়ো অসময়ে হারিয়ে জাতি হিসেবে আমরা পিছিয়েছি অন্তত ১০০ বছর। জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হারিয়ে আবারও অনিশ্চিত সময়ের কোন বৃত্তে বন্দী হতে পারিনা।

আজকে যারা হালুয়া রুটির ভাগাভাগিতে ব্যস্ত এবং দলের তথকথিত নীতি নির্ধারক তারা কি বুঝতে পারেন নেত্রীর অবর্তমানে তাদের দশাটা কি হবে ? স্বাধীনতার পক্ষ শক্তির মানুষদেরই বা কি পরিনতি হবে ? তারা কেবল নিজেদের বিত্ত আর বৈভবের পাহাড় গড়া নিয়েই বেশি ব্যস্ত। এগুলো কখনো তাদের ভাবনার অংশ না, অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় নেত্রীর নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে উনারা বিন্দুমাত্র উদ্বিগ্ন বা বিচলিত না। তানা হলে এ বিষয়ে সরকার বা দলের পক্ষ থেকে বিশেষ কোন উদ্যোগ আমরা দেখছি কই ? এ বিষয়ে দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপই তো আমরা দেখছিনা।

আমরা যে কথাটি বলতে চাই, অবিলম্বে নেত্রীর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যা যা করতে হয় সেটাই করুন কারণ আমরা যে যেভাবে চিন্তা করিনা কেন শেখ হাসিনা বেঁচে থাকলেই কেবল বাংলাদেশ বাঁচবে। এদেশের গণতন্ত্র বাঁচবে। শেখ হাসিনা বিহীন একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বা অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জীবিত বাংলাদেশ আমরা স্বপ্নেও কখনো কল্পনা করতে পরিনা।

অন্য আর কেউ নয় এদেশের মাটি মানুষের প্রতি যদি কারো সত্যিকারের মমত্ববোধ থেকে থাকে তবে সেটা শেখ হাসিনার আছে, শেখ হাসিনাই এদেশের বুভুক্ষু ভুখা নাঙ্গা অসহায় মানুষের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল, গণতন্ত্রের সর্বশেষ ঠিকানা।

লেখক : রাজনৈতিক কর্মী।