শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : উত্তরের শষ্য ভাণ্ডার এবং অধিক ধান উৎপাদনের জেলা দিনাজপুরে হঠাৎ করেই বেড়েছে চালের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি দেড়শ' থেকে দুইশ' টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন, নিম্ন আয়ের মানুষ।

মিল মালিকরা চালের দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় বাজারে বেশি দামে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তবে,মিল মালিকরা বলছেন, ডলারের দাম ও বাজারে ধানের দাম বেড়ে যাওয়ার বেড়েছে চালের দাম।

দিনাজপুরের পাইকারি বাজার বাহাদুর বাজারের এনএ মার্কেটের পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায়,গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৫০ কেজি ওজনের গুটি স্বর্ণা ২০০০ টাকা থেকে ২২০০ টাকা,সুমন স্বর্ণা ২৩৫০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা, বিআর- ২৯ ২৩৫০ টাকা থেকে ২৬৫০ টাকা, বিআর- ২৮ ২৬৫০ টাকা থেকে ২৮০০ টাকা, মিনিকেট- ৩১০০ টাকা থেকে ৩২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

খুচরা বাজারে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে চালের দাম। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চালের দাম ৪'টাকা থেকে ৬ টাকা বেড়েছে।

হঠাৎ চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন আয়ের ক্রেতারা পড়েছেন বিপাকে। চাল ক্রয় করতে আসা খায়রুল ইসলাম জানালেন, 'গত জুনের শুরুতে একবার চালের দাম বেড়েছে। আবার আগষ্টে বাড়ল। প্রতিমাসে এভাবে চালের দাম বৃদ্ধি পেলে সমস্যা হবে আমাদের।'

চাল ক্রয় করতে আসা রহিমা বেগম জানালেন, 'গত সপ্তাহে মিনিকেট চাল ছিল ৫৫ টাকা কেজি, আর আজ ৬০ টাকা কেজি। এক কেজি চালে দাম বেড়েছে ৫ টাকা। এর আগেও বেড়েছিল ৩ টাকা। এক মাসে এক কেজিতে ৮ টাকা বেশি, এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। অন্তত নিম্ন আয়ের মানুষের কথা ভেবে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনিক পদক্ষেপ থাকা প্রয়োজন।'

এরোমা রাইস চালের দোকানের স্বত্ত্বাধিকারি মেরাজ বলেন, 'আমরা সাধারণত মিল থেকে যে দামে চাল কিনি, তা কিছুটা লাভ রেখে বিক্রি করি। এখানে আমাদের করার কিছু নেই। বেশি দামে চাল কেনার ফলে বেশি দামে চাল বিক্রি করতে হয়।'

বাহাদুরবাজার এনএ মার্কেটের চাল ব্যবসায়ী এরশাদ হোসেন বলেন, 'আসলে আমাদের করার কিছু থাকে না, মিল মালিকদের কাছ থেকে যে দামে চাল ক্রয় করা হয়, সেই অনুযায়ী বিক্রি করতে হয়। চালের বাজারমূল্য নির্ভর করে সম্পূর্ণ মিল মালিকদের ওপর।'

চাল ব্যবসায়ী মোশাররফ বলেন, 'কিছু মিল মালিক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চালের বাজার অস্থিতিশীল করে রেখেছেন। আমন লাগানো মৌসুম চলছে। এখন চালের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কোনো কারণ নেই। এখন কৃষকের ঘরে বোরো ধান নেই, তবে মিল মালিকরা পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুদ করেছেন। কৃষকরা তো দাম বাড়াননি, মিল মালিকরা দাম বাড়িয়েছেন। এটি সরকারকে বেকায়দায় ফেলার একটি চক্রান্ত বলে মনে করি।

এ বিষয়ে চালকল মালিকরা বলছেন, ডলারের মুল্য বৃদ্ধি এবং বিশ্ববাজারে ধানের দাম বাড়ার কারণে চালের দাম বেড়েছে। পাইকারি আর খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পর্যাপ্ত চাল মজুত থাকার পরও মিলারদের কারসাজির কারণে বেড়েছে দাম। দিনাজপুরের বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ৩ টাকা থেকে ৬ টাকা টাকা বেড়েছে।

হঠাৎ করেই চালের এই মূল্য বৃদ্ধিতে স্বল্প ও নিম্ন আয়ের ক্রেতারা ক্ষুব্ধ। একজন ক্রেতা বলেন, বাজারে চালের দাম বাড়ায় কিনে খেতে আমরা অক্ষম হয়ে যাচ্ছি। অপর একজন বলেন, সরকারের তো চালের দাম যাতে না বাড়ে সেজন্য নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। নাইলে গরীবরা তো মারা যাবে।

এই চালের মূল্য বৃদ্ধির জন্য ধানের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি চালকল মালিকদের কিছুটা কারসাজিও রয়েছে বলে মনে করেন পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা। চালের মূল্য বৃদ্ধির কথা স্বীকার করে দিনাজপুর চেম্বারের সভাপতি এবং মিল মালিক রেজা হুমাউন ফারুক শামীম চৌধুরী বলেন,যদিও চাল আমাদানি হচ্ছে,কিন্তু ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় চাল বেশি দামে আমাদানি করতে হচ্ছে। ভারতসহ বিশ্ব বাজারেও অনেক বেড়েছে চালের দাম। আমাদের দেশে এখনো সহনশীল চালের বাজার।

চালের দাম হঠাৎ বৃদ্ধিতে সমাজের সচেতন মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, দেশের বাজারে বাড়তে থাকা চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারি উদ্যোগ কাজে আসছে না। খোলাসা করে বলতে গেলে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান, আমদানির অনুমতি, শুল্ক হ্রাসসহ সরকার নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও কার্যত নিয়ন্ত্রণহীন চালের বাজার।

এদিকে চাল আমদানির অনুমতি থাকলেও ডলার সংকট ও দাম বেশির কারণে আমদানিতে গতি নেই, দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে চাল আমদানি।

হিলি স্থল বন্দরের চাল আমাদানি কারক শাহিন হীসেন জানান,ব্যবসায়ীরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না বাড়তি দামে বড় চালানে চাল আমদানিতে। যে কারণে দেশের বাজারে চালের দামও বেড়েছে।

(এসএএস/এএস/আগস্ট ০৫, ২০২২)