সালথা প্রতিনিধি : ফরিদপুরের সালথা উপজেলার সদর সালথা বাজারের সরকারি জায়গার ওপর একাধিক দোকান ও স্থাপনা রয়েছে। কয়েক যুগ ধরে নির্মিত এসব দোকান আর স্থাপনায় ব্যবসা-বাণিজ্য করে আসছে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এরমধ্যে শনিবার বিকালে সালথা বাজারের হাইস্কুল সড়কের পাশে থাকা মাত্র একটি দোকান উচ্ছেদ করেন উপজেলা প্রশাসন। উচ্ছেদের পর থেকে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। সমালোচকদের প্রশ্ন- এত স্থাপনের মধ্যে কেন একটি দোকান চিহ্নিত করে উচ্ছেদ করা হলো?।

জানা গেছে, শনিবার বিকাল ৫ টাকা থেকে ৬টা পর্যন্ত সালথা বাজারের হাইস্কুল সড়ক সংলগ্ন ৩৩ নম্বর দরজা-পুরুরা মৌজার হালট শ্রেণীর ২৯ নম্বর দাগে স্থাপিত একটি দোকান উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা: তাছলিমা আকতার। অভিযানচলাকালে সার্ভেয়ার, তহশিলদার ও থানার পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

উচ্ছেদ হওয়া দোকান ঘর মালিক মো. জাফর মুন্সী অভিযোগ করে বলেন, এটা আমার ক্রয়কৃত সম্পত্তি। এখানে কিছু সরকারি কিছু মালিনাকানা সম্পত্তি রয়েছে। আমার দলিল ও পিট দলিল রয়েছে। এই সম্পত্তির মিউটিশনও করা আমার নামে। আমার সারাজীবনের কষ্টে অর্জিত সম্পদ ছিল এই দোকানটি। আমি এ বিষয় মামলা করবো।

এদিকে সালথা বাজারে সরকারি জায়গার উপর থাকা একাধিক স্থাপনার মধ্যে একটি দোকান উচ্ছেদ করায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনা করে স্ট্যাটাস দেন অনেকে।

এ ঘটনায় সমালোচনা করে দৈনিক বাংলা ৭১ পত্রিকার সম্পাদক সিনিয়র সাংবাদিক প্রবির সিকদার তার ফেসবুক পেইজে লিখেন- গদ্য কার্টুন, স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হোক সালথা উপজেলা প্রশাসনকে। ফরিদপুরের সালথায় স্কুল রোডের পাশে সরকারি জায়গায় গড়ে ওঠা বহু অবৈধ দোকান ঘরের মধ্যে অণুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করে জাফর মুন্সীর একটি দোকান ঘর সুনিপুনভাবে আবিস্কার ও চিহ্নিত করে সেটি ভেঙ্গে ফেলার দু:সাহসী কাজ করায় সালথা উপজেলা প্রশাসনকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। আমি দাবী করছি, এমন মহৎ কর্মের জন্য স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হোক সালথা উপজেলা প্রশাসনকে।

উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি ও সালথা বাজারে দোকান মালিক ইমারত হোসেন পিকুল তার ফেসবুকে লিখেন, একটি অবৈধ ঘর উচ্ছেদ করে ব্যক্তিগত বিরোধ প্রমানিত হবে। সকল অবৈধ ঘর উচ্ছেদ হলে সালথাবাসীর প্রশংসা পাবেন। আরেক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, আজ ভাঙলেন অভিনন্দন আপনাকে। তবে পাশের মোল্যা মার্কেট, খান সাহেব রেস্টুরেন্টসহ বাজারের সকল অবৈধ স্থাপনা কি বহাল থাকবেই?।

যুবলীগ নেতা বাকি বিল্লাহ লেখেন, সাংবাদিকরা হলো জাতির বিবেক। আমার প্রশ্ন হলো সালথা বাজারে প্রায় ১'শ উপরে অবৈধ দোকান আছে, এগুলো কি উচ্ছেদ করা হবে?।

সালথা বাজারের ব্যাবসায়ী রাকিবুুল হাসান জুয়েল বলেন, সালথা বাজারে সরকারি জায়গায় অবৈধ স্থাপনার অভাব নেই। তো একটি দোকানে কেন চোখ পড়লো। কেন ভেঙ্গে দেয়া হলো সেটা। ভাঙলে তো সবই ভাঙ্গার কথা। কিছুই বুঝলাম না, কি কারণে এমনটা করলো প্রশাসন।

এ বিষয় ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা: তাছলিমা আকতার সাংবাদিকদের বলেন, ম্যাপ দেখে সার্ভেয়ার দ্বারা পরিমাপ করে দেখা যায় সরকারি হালটের ওপরে ঘর নির্মাণের ফলে বাজার দিয়ে চলাফেরা করতে মানুষের খুব কষ্ট হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে। পর্যায়ক্রমে বেদখল হওয়া সব সরকারি জমি উদ্ধার করা হবে।

(এন/এসপি/আগস্ট ০৭, ২০২২)