ওয়াজেদুর রহমান কনক, নীলফামারী : নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক-কর্মচারীদের লাঞ্ছিতের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে জেলা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) নীলফামারী জেলা শাখা এবং জেলা স্বাস্থ্য বিভাগীয় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী সমন্বয় পরিষদ এই কর্মসূচির আয়োজন করে।

ঘণ্টাব্যাপী ওই মানববন্ধনে চিকিৎসক, নার্স, নীলফামারী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও নার্সিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। পরে দ্রুত আসামি গ্রেপ্তারের দাবিতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও পৌর মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদের কাছে স্মারকলিপি দেন আন্দোলনকারীরা।

মানববন্ধন শেষে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএমএর সহসভাপতি মো. মজিবুল হাসান চৌধুরী। সেখানে বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক দিলিপ কুমার রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান হাবিবুর রহমান, নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ ওবায়দা নাসরিন, আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আবদুর রহিম, চিকিৎসা কর্মকর্তা আরিফ হাসনাত, মশিউর রহমান ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সারওয়ার মানিক প্রমুখ।

বক্তারা অভিযোগ করেন, ১ আগস্ট দুপুরে শহরের টুপির মোড় এলাকার এক রোগীকে বুকে ব্যথাসহ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন স্বজনেরা। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শেষে তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। অ্যাম্বুলেন্সে ওঠার সময় ওই রোগীর মৃত্যু হয়। স্বজনেরা লাশ নিয়ে যাওয়ার আগে নীলফামারী পৌরসভার ছয় নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মাহফুজার রহমান শাহ্ চিৎকার করতে করতে ১৫ থেকে ২০ জনকে সঙ্গে নিয়ে জরুরি বিভাগে যান। সেখানে অ্যাম্বুলেন্সের চালক আনোয়ার হোসেনকে চড়থাপ্পড় ও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয়দের ওপর চড়াও হয়ে গালিগালাজসহ শারীরিকভাবে হেনস্তা ও সরকারি কাজে বাধা দেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা করার এক সপ্তাহে পেরিয়ে গেলেও আসামি গ্রেপ্তার হননি।

সমাবেশে স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ ওবায়দা নাসরিন বলেন, ‘অনেকটা কষ্ট পেয়ে আমরা রাস্তায় নেমেছি। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকে আমরা সেবা দিচ্ছি। আমরা সেবা দিতে গিয়ে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছি। জনপ্রতিনিধিরা রোগীর সঙ্গে আসবেন এটা খুব স্বাভাবিক, কিন্তু তিনি আমাদের সঙ্গে এমন আচরণ করবেন, এটা আমাদের কাম্য নয়। আমরা এর বিচার চাই।’

এ বিষয়ে পৌর কাউন্সিলর মো. মাহফুজার রহমান শাহ্ বলেন, ‘ওই রোগী আমার ওয়ার্ডের বাসিন্দা। রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট পার হলেও চিকিৎসক তাঁকে দেখেননি বলে স্বজনেরা ফোন করে জানান। এরই মধ্যে রোগীর মৃত্যু হয়। সেখানে পৌঁছে স্বজনদের মধ্যে উত্তেজনা দেখতে পাই। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি লোকজনকে শান্ত করি। আমার মাধ্যমে চিকিৎসক, নার্স এবং অন্য কোনো কর্মচারী লাঞ্ছিতের ঘটনা ঘটেনি।’ তিনি মামলার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানান।

বিএমএ নীলফামারী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক দিলিপ কুমার রায় বলেন, ‘আসামি গ্রেপ্তার ও সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছি। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে স্মারকলিপি দিয়েছি। এর পরও আসামি গ্রেপ্তার না হলে আমরা বৃহৎ আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।’

নীলফামারী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রউপ বলেন, মামলা দায়েরের পর থেকে আসামি পলাতক থাকায় গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। আসামি গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।

(ওকে/এসপি/আগস্ট ০৮, ২০২২)