রবিউল ইসলাম, গাইবান্ধা : গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে ভূমিহীন ও গৃহহীন বৃদ্ধা রেনুবালা মহন্ত (৮০)কে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ও জমি দেওয়ার কথা বলে ৬ হাজার টাকা ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করেন উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার ইব্রাহিম খলিল। ৮ আগস্ট সোমবার সন্ধ্যায় তার নিজ অফিসে ভুক্তভোগীদের চাপের মুখে স্থানীয় সর্বসাধারণ ও গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে উক্ত ঘুষের ৬ হাজার টাকা ফেরত দেন তিনি। 

ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, পলাশবাড়ী পৌর এলাকার গৃধারীপুর গ্রামের বাসিন্দা মৃত সুনীল চন্দ্র মহন্তের বিধবা স্ত্রী দীর্ঘদিন থেকে কন্যা, ছেলে ও নাতি-নাতনীসহ সুইপার কলোনীতে অন্যের জমিতে ভাঙা ঘরে বসবাস করে আসছেন। বর্তমান সময়ের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় রেনুবালা মহন্তকে ঘর ও জমি কথা বলে ভূমি অফিসের পরিচ্ছন্ন কর্মী শ্যামলের মাধ্যমে রেনুবালা মহন্তের নিকট থেকে ৬ হাজার টাকা ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করেন সার্ভেয়ার ইব্রাহীম খলিল। টাকা দেওয়ার পর কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও বৃদ্ধা রেনুবালা ঘর ও জমি না পেয়ে দিনের পর দিন টাকা ফেরত নিতে সার্ভেয়ার ইব্রাহীম খলিলের কাছে ঘুরতে থাকেন। এরপর টাকা ফেরত চাইলে ইব্রাহিম খলিল নানা ভাবে আজ নয় কাল করে তালবাহানা এবং হুমকি-ধামকি ও নানাভাবে ভয়ভীতি দেখায় বলে ভূক্তভোগীরা জানান। এতে উপায় অন্তর না পেয়ে অবশেষে ভুক্তভোগী বৃদ্ধা রেনু বালা তার ২ ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার ইব্রাহিম খলিলের অফিসে এসে টাকা ফেরত চাইলে ইব্রাহিম খলিল তাদের অফিস থেকে বের করে দেন। এরপর স্থানীয়রা উপস্থিত হলে তারা বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান। এরপর সাংবাদিকরা ভূমি অফিসে উপস্থিত হয়ে বিষয়টির ভুক্তভোগীদের কাছে জানতে চাইলে, তরিঘড়ি করে সাংবাদিকদের সামনে বৃদ্ধা রেনু বালা মহন্তের হাতে ঘুষের টাকা ফেরত দেন ইব্রাহিম খলিল।

ভূমি অফিসের পরিচ্ছন্নকর্মী শ্যামল চন্দ্র সাংবাদিকদের বলেন, সার্ভেয়ার ইব্রাহিম খলিল স্যারের নির্দেশে উক্ত বৃদ্ধার নিকট থেকে ৬ হাজার টাকা নিয়ে এসে তাহাকে দিয়েছি। ঘুষ গ্রহণ ও ফেরতের বিষয়টি সাংবাদিকদের সামনে অস্বীকার করেন সার্ভেয়ার ইব্রাহিম খলিল। এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুজ্জামান নয়ন বলেন, ভুক্তভোগীদের নিকট হতে টাকা গ্রহনের বিষয়ে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

সরেজমিনে জানা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় তৃতীয় পর্যায়ে পলাশবাড়ী উপজেলায় ১৪০ জন সুবিধাভোগী পরিবারকে ঘর ও ২ শতাংশ করে জমি প্রদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এসব ঘর নির্মাণাধীন থাকায় ও বর্তমান সময়ে সুবিধাভোগীদের নাম প্রকাশ হওয়ায় সুবিধা বঞ্চিতরা তাদের প্রদানকৃত টাকা না পেয়ে তারা মুখ খুলছেন।

এসব আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর না পাওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগীরা জানান, প্রত্যেকের নিকট থেকে ৫-৭ হাজার টাকা ঘুষ নেন সার্ভেয়ার ইব্রাহিম খলিল। উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার ইব্রাহিম খলিল সহ অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তাদের টাকা না দিলে ভূমি সংক্রান্ত কোন কাজ হয় না। এসব কাজে তাদের চাহিদা মতো টাকা না দিলে দিনের পর দিন ঘুড়তে হয় নানা অজুহাত দেখায় এমনও অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী একাধিক সাধারণ মানুষ। ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার ইব্রাহিম খলিল সহ অন্যান্যদের অনিয়ম ও দূর্নীতি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান ভুক্তভোগী ও উপজেলার সচেতন মহল।

(আর/এসপি/আগস্ট ১০, ২০২২)