নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁ সদর উপজেলার কাঁকনসী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নীতিমালা লঙ্ঘন করে ম্যানেজিং কমিটি গঠনসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক আব্দুল গফুরের বিরুদ্ধে। শিক্ষকতার পাশাপাশি প্রভাবশালী ঠিকাদার হওয়ায় ক্ষমতার দাপটে বিদ্যালয়ে প্রায়ই অনুপস্থিত থাকেন তিনি। রুটিনে থাকা ক্লাস গুলো তার পরিবর্তে অনভিজ্ঞ বেকার যুবকদের দিয়ে করানো হয়। এতে নষ্ট হতে বসেছে বিদ্যালয়টির শিক্ষার পরিবেশ। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলেও এখনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের মাধ্যমে বিদ্যালয়টির শিক্ষার পরিবেশ দ্রুত ফিরিয়ে আনার দাবী জানিয়েছেন স্থায়ীরা।

জানা গেছে, নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁসাইগাড়ী ইউনিয়নের কাঁকনসী গ্রামে কাঁকনসী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৭২ সালে। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করায় কাঁকনসী, ভীমপুর, চকমহাদেব, চকগোপালসহ আশেপাশের ৫ থেকে ৬টি গ্রামের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক শিক্ষার আওতায় আসতে পেড়েছে। ১৯৮৯ সালের ১ এপ্রিল বিদ্যালয়টিতে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন সদর উপজেলার দুবলহাটি ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল গফুরকে। যোগদানের ২৪ বছর পর ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি পান তিনি।

নীতিমালা অনুযায়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত কোন শিক্ষকের ঠিকাদারী কাজে সম্পৃক্ত থাকার নিয়ম নেই। তবে এই নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন আব্দুল গফুর। সুকৌশলে স্ত্রীর নামে করিয়েছেন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) সরকার নিবন্ধিত ঠিকাদারি লাইসেন্স। কয়েক বছরের মধ্যেই হয়েছেন বিএমডিএ’র প্রভাবশালী ঠিকাদার। শহরের বেশিরভাগ ব্যবসায়ী তাকে শিক্ষক হিসেবে নয়, চেনেন ঠিকাদার গফুর হিসেবেই। ব্যবসায়িক কাজে ব্যস্ততার কারনে নিয়মিত বিদ্যালয়ে যান না তিনি। কখনো বিদ্যালয়ে গেলেও সময়মতো পৌঁছানোর রেকর্ড খুবই কম। নিয়মিত বিদ্যালয়ে যেতে না পারায় তার রুটিনে থাকা ক্লাসগুলো বাহিরের এসএসসি ও এইএচএসসি পাশ করা বিভিন্ন বেকার অনভিজ্ঞ ছেলেদের দিয়ে করানো হয়।

প্রভাবশালী ঠিকাদার হওয়ায়ই কেউ তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেও কর্ণপাত করেন না। প্রতি বছর বিদ্যালয়ের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে সরকারীভাবে আসা বরাদ্দকৃত অর্থ সুকৌশলে আত্মসাত করেন তিনি। নিজের ইচ্ছেমতো বিদ্যালয় পরিচালনায় যাতে কেউ বাঁধা হয়ে না দাঁড়াতে পারে, সেজন্য বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্যদের না জানিয়ে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করেছেন তিনি। আব্দুল হান্নানকে সভাপতি দেখিয়ে বিভিন্ন রেজুলেশন তৈরী করে বিদ্যালয় সংস্কারে চাহিদাপত্র পাঠিয়ে বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাত করছেন প্রধান শিক্ষক। দীর্ঘদিন যাবত বিদ্যালয়টি এভাবে চলতে থাকায় বাকী ৩ জন সহকারী শিক্ষকও এখন সময়মতো বিদ্যালয়ে আসেন না। শিক্ষার্থীরা স্কুলে এসে সময়মতো শিক্ষকদের না পাওয়ায় পড়ালেখার আগ্রহ হারাতে বসেছে। এতে প্রতি বছর ঝড়ে পড়ছে অসংখ্য শিক্ষার্থী। তাই এর প্রতিকার চেয়ে গত ১৮ জুলাই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই এলাকাবাসী।

সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ইতিয়ারা পারভীন গনমাধ্যমকে বলেন, বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনা অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করে দেখতে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তদন্তে যেটা সঠিক সেটাই তুলে ধরা হবে বলে জানান তিনি।
নওগাঁ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দীক মোহাম্মদ ইউসুফ রেজা মিডিয়াকে বলেন, সরকারী দপ্তরে কর্মরত কোন কর্মচারী কখনোই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি হতে পারেন না। এটা সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত। কাঁকনসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠনে এমনটি হয়েছে মর্মে ওই এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি।

এছাড়ও বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছে। একজন প্রধান শিক্ষক কখনোই ঠিকাদারীর সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পারবেন না। বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সভাপতিকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পাশাপাশি অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(বিএস/এসপি/আগস্ট ১২, ২০২২)