মোঃ সিরাজ আল মাসুদ, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলে সার ও ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির ফলে জেলার ১২টি উপজেলার প্রান্তিক চাষিরা রোপা আমন চাষ নিয়ে অনেকটা বিপাকে পড়েছেন। ভরা মৌসুমে অনাবৃষ্টির কারণে এমনিতেই জমিতে রোপা আমন লাগাতে পারছেন না। অনাবৃষ্টির সাথে এবার সার ও ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি তাদেরকে এক প্রকার অসহায় করে তুলেছে।

টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৮৯ হাজার ৮১৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ৬ টাকার বাড়ানোর রেশ কাটতে না কাটতেই সরকার ডিজেলের মূল্য লিটার প্রতি ৮০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১১৪ টাকা করেছে। ফলে চাষিরা উৎপাদন খরচ বাড়ার বোঝা মাথায় নিয়ে জমিতে রোপা আমন লাগাচ্ছে।

বোরো আবাদের চাইতে রোপা আমন চাষে কৃষকের খরচ কম হলেও বর্ষার ভরা মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়া এবং সার ও ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধিতে কৃষকরা বিপাকে পড়েছে।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার সিলিমপুর, পোড়াবাড়ী, চারাবাড়ী, দেউলি, ঘারিন্দা, গালা, মগড়া, বাঘিল, ধরেরবাড়ি; কালিহাতী উপজেলার বল্লা, কোকডহরা, দুর্গাপুর, হাতিয়া, নাগবাড়ি, রাজাবাড়ি, পালিমা, নারান্দিয়া; গোপালপুর উপজেলার হেমনগর, মির্জাপুর, আলমনগর; ধনবাড়ী উপজেলার মুশুদ্ধি, বানিয়াজান, বলিভদ্র;

মধুপুর উপজেলার আলোকদিয়া, জুড়ামগাছা, ইদিলপুর; দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটি, পাথরাইল, এলাসিন, গড়াসিন, ডুবাইল; নাগরপুর উপজেলার মোকনা, মাহমুদনগর, পাকুটিয়া, ভারই, ভাড়রা, সলিমাবাদ সহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় রোপা আমন চাষের মৌসুম শুরু হয়েছে।

ঘাটাইল উপজেলার কুড়িপাড়া, তালতলা, চকদিয়াবাড়ি, ধলাপাড়া, গালা, জামুরিয়া, চানতারা এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সার ও ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির আগে গোলায় ধান উঠানো পর্যন্ত যেখানে খরচ হত বিঘাপ্রতি সাড়ে ৬ হাজার টাকা। এখন সেই খরচ বেড়ে দাঁড়াবে ৯ হাজার টাকায়।

অপরদিকে বর্ষার ভরা মৌসুমে প্রয়োজনীয় বৃষ্টি না হওয়ায় সেচ দিয়ে জমি প্রস্তুত করতে হচ্ছে। সেখানেও ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি বিদ্যুতের লোডশেডিং কৃষকদের আরও দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। রোপা আমন আবাদে অতিরিক্ত খরচ হিসাবে যোগ হচ্ছে সেচ খরচ।

কৃষকরা জানান, সার ও ডিজেলের দাম বাড়ার ফলে চাষাবাদে খরচও বেড়েছে।

সার ও তেলের দাম বাড়ায় মানুষ এখন চাষাবাদ ছেড়ে দিচ্ছে। কারণ, ফসল উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে।

ডিজেল-কেরোসিন ও সারের দাম বাড়ায় বর্তমানে এক বিঘা জমি চাষে মোট খরচ হচ্ছে ৯ হাজার টাকা। তাতে ধান পাওয়া যাবে ১২ মণ। ধান কাটা মৌসুমে ধানের মূল্য থাকে ৭০০ টাকা মণ। সে হিসাবে ধানের উৎপাদন খরচই উঠবে না। এমন অবস্থা থাকলে চাষিদের পক্ষে চাষাবাদ চালিয়ে যাওয়া দুস্কর হয়ে পড়বে।

খুচরা সার ব্যবসায়ীরা জানান , ইউরিয়া সারের দাম প্রতি বস্তায় ৩০০ টাকা বেড়েছে। এছাড়া ডিএপি, পটাশ ও এমওপি সারের দাম বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়ে গেছে।

সার ও ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধিতে টাঙ্গাইলের সখীপুরে হাজার হাজার কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির ফলে পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষের খরচ বেড়েছে একর প্রতি প্রায় এক হাজার টাকা।

সখীপুর উপজেলার প্রতিমাবঙ্কি গ্রামের কৃষক ফরজ আলী জানান, সব খরচ বাদ দিলে এমনিতেই ধান চাষে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। তার উপর সার ও ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি কৃষকদেরকে মারাত্মক বিপাকে ফেলেছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা জানান, ডিজেলের দাম বাড়ায় কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ক্ষেত্রে কিছুটা বিরূপ প্রভাব ফেলবে। কৃষকের খরচও বেড়ে যাবে। শুধু কৃষি ক্ষেত্রে ভর্তুকি মূল্যে ডিজেল দেওয়া হলে কৃষকরা ধান চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠবে। কৃষকদের চাষাবাদে আগ্রহ ধরে রাখতে উৎপাদন খরচের সাথে ধানের বাজারমূল্য সমন্বয় করা অতীব প্রয়োজন।

টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আহসানুল বাশার জানান, সার ও ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার ১২টি উপজেলার প্রায় তিন লাখ কৃষক হতাশার মধ্যে রয়েছে।

বিগত দিনে ধান চাষ করে গুটি কয়েক কৃষক লাভবান হলেও প্রান্তিক কৃষকরা প্রায়ই ক্ষতির শিকার হয়েছেন। সার ও ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির ফলে কৃষকের উৎপাদন খরচের সাথে ধানের বাজারমূল্য সমন্বয় করা সময়ের দাবিতে পরিনত হয়েছে।

(এসআইএম/এএস/আগস্ট ১২, ২০২২)