রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার উপকূলীয় সুন্দরবন এলাকায় নিম্ন চাপের কারণে বৃষ্টি হচ্ছে এদিকে নদীর প্রবল জোয়ার। নাজুক বেড়ি বাঁধ উপছে পানি লোকালয়ে ডুকছে এ নিয়ে চিন্তায় আছে উপকূলের মানুষ।প্রতিনিয়ত প্রকৃতিক দূর্যোগ ও নদী ভাঙনের সাথে যুদ্ধ করে চলতে হয়। কিন্তু বিভিন্ন আন্দোলন করে কোন ফল পায়নি তারা। নদীর পানি পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে প্রতি বছর নষ্ট হয় কোটি কোটি টাকার সম্পদ। এ সম্পদ পোষায়ে উঠার আগে আবারও পড়েছে নদী ভাঙনের কবলে।

বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকুল এলাকার মানুষ সব সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগে কারণে তাদের সসম্বল হারিয়ে নিস্ব হয়ে যায়। প্রতিবছর এক এক সময় এক এক রকম দুর্যোগের সম্মুখীন হতে হয় উপকূলের মানুষদের। কখনো ঝড় আবার কখনো নদীর বেড়ী বাঁধ ভেঙে পানিতে প্লাবিত হয়ে। কখনো বন্যায় প্লাবিত হয়ে থাকে। সম্প্রতি সব চেয়ে বড় দুর্যোগ বলে মনে করেন নদী ভাঙ্গন। এ নদী ভাঙ্গন যেন উপকূলের মানুষের পিছু ছাড়ছে না।

তবে নদী ভাঙ্গন কে সরকারি অবস্থাপনাকে দায়ি করেন উপকূলের মানুষ। গত বছর আম্পান ঝড়ের পরে উপকূলের মানুষের যে পরিমান ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে সে গুলো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। তার আবার বড় ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসার পূবাভাস শোনা যাচ্ছে। যদি এ জোয়ারে সময় নাজুক বেড়িবাঁধের দিকে নজর না রাখলে বাঁধ ভেঙে উপকূলের মানুষের চরম দুর্ভোগ নেমে আসবে। উপকূলের মানুষের এধরনের দুর্যোগ থেকে পরিত্রান পাওয়ার উপায় হল টেকসই বেড়ী বাঁধ নিমাণ করা।

ইয়াসের পরে কিছু ঝুঁকি পূর্ণ পয়েন্টে কাজ করলেও শুভংকরের ফাঁকি দিয়েছে সংশিলষ্ট ঠিকাদারা কিন্তু ইয়াসের পরে উপকূলের ১৪৯ কিলোমিটার এলাকায় বেড়ী বাঁধের ২৯ টি ঝুঁকি পূণ স্থান রয়েছে। ইয়াসের আগে বুলবুল ঝড়ের পরে ৪৩ টা ঝুঁকি পূর্ণ স্থান ছিলো। ইয়াসের পরে ১৪ টা পয়েন্টের কাজ হলেও এখনো ভালো ভাবে কাজ শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। খুব দ্রুত যদি ঝুঁকিপূণ স্থান গুলো কাজ না করা যায় তাহলে অতিরিক্ত নদীর জোয়ারের পানিতে উপকূলের মানুষ তাদের সর্বস্ব হারাবে।

ঝুঁকি পূণ স্থানের মধ্যে মুন্সীগঞ্জ ৩টি, বুড়িগোয়ালিনী ৫, গাবুরায় ৭ টি,পদ্মপুকুর ৮টি, কাশিমাড়ী ১টি আটুলিয়ায় ১টি পয়েন্ট খুব ঝুঁকিপূণ। মুন্সীগঞ্জ বড় ভেটখালী গ্রামের সাইফুল ও রবি সরদার বলেন, আম্পানের সময় বড় ভেটখালির গোড়া ভাঙ্গন দেখা দেয়। তারপরে সেটা ঠিক করা হয়নি। সামনে যে ঝড় আসতেছে সে ঝড়ের আগে যদি এভাঙ্গনে কাজ করা না হয় তাহলে বাঁধ ভেঙ্গে যাবে। ক্ষতি এলাকার হাজার হাজার বিঘার জমির মৎস্য সম্পদ।

হরিনগর সিংহড়তলী গ্রামের বিশ্বজিত রায় বলেন, ইয়াসের পরে সিংহড়তলীর ভাঙ্গন দেখা দেয় পানি উন্নয় বোডের্র লোকদের বলার পরেও কাজ করেনি। সে ভয়ে আতঙ্কে আছি যাদি ভেঙে যায় তাহলে আমারদের সব ধংস্ব হয়ে যাবে। বুড়িগোয়ালীনির দূগাবাটি গ্রামের দিনেশ মন্ডল ও রীতা রাণী বলেন, ইয়াসের সময় বাঁধ ভেঙে ঘর বাড়ি সব পানি উঠে গাছ পালা নষ্ট হয়ে গেছে এখনো লাগাতে পারিনি।আবার শুনছি নতুন করে ঝড় আসবে। আমাদের ওবদার রাস্তা গুলো ঠিক করে দিলে আর পানিতে ভাসতাম না।এবার যদি পানি ঢোকে তাহলে কোথায় যাব।

মুন্সীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান অসীম মৃধা বলেন, মুন্সীগঞ্জে ৩টি পয়েন্ট খুব ঝুঁকিপূর্ণ আমি বার পান্নি উন্নয়ন বোডের্র বলার পরেও তারা কাজ করছে না। অতিরিক্ত জোয়ার আর বৃষ্টির কারণে নাজুক বাঁধ ভাঙার সম্ভবনা আছে। সাবেক জেলা পরিষদের সদস্য ডালিম কুমার ঘরামী বলেন, উপকূলীয় এলাকা নদী বেষ্ঠিত এলাকা। এখানে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়ী বাঁধের কারণে প্রতিনিয়ত দুর্যোগের সম্মূখিন হতে হয়। সরকারি মহল থেকে বার বার আশ্বাস প্রদান করলেও তা বাস্তবায়ন করতে দেখা যায় না। যে কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসলে আতঙ্কিত থাকে এলাকাবাসী।

বুড়িগোয়ালীনি ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, আমার ইউনিয়ানে ৫টি ঝুঁকি পূর্ণ পয়েন্ট আছে।পদ্মপুকুর ইউনিয়ানের চেয়ারম্যান মো: আমজাদুল ইসলাম বলেন, আমাদের ইউনিয়নটা দ্বীপ ইউনিয়ন ২৮ কিলোমিটারের মধ্যে ৮ টি পয়েন্ট খুব ঝুঁকি পূর্ণ তাড়াতাড়ি কাজ না করলে আবার ভেঙে প্লাবিত হবে। এছাড়া আমাদের বড় সমস্যা হল বেড়িবাধের অংশ আশাশুনির মধ্যে যে কারণে আমাদের দাবি পূরণ হয় না।

এ বিষয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের শ্যামনগর উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী মাসুদ রানা বলেন, অতিরিক্ত জোয়ারের কারণে নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে সে জন্যে সম্পর্ণ প্রস্তুত রয়েছি পর্যপ্ত জিআইও ব্যাগ সহ প্রয়োজনীয় জিনিষ পত্র রেডি আছে। অনেক জায়গায় ঝুঁকি পূর্ণ স্থানে কাজ চলমান রয়েছে এবং অনেক কাজ হয়ে গেছে।

(আরকে/এএস/আগস্ট ১৪, ২০২২)