স্পোর্টস ডেস্ক : ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় নিজের মাকে হারিয়েছেন। তারপরও নাজমুল হাসান পাপন মনে করেন ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পৈশাচিকতা ও নির্মমতা অনেক বেশি। বিসিবি সভাপতি মনে করেন, ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আর কোনো হত্যাকাণ্ডেরই তুলনা চলে না। নৃশংসার কথাই বলা হোক আর বর্বরতার আলোকেই চিন্তা করা হোক না কেন, ১৫ আগস্ট পৃথিবীর জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড।

১৫ আগস্ট সোমবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সহধর্মিণী বেগম মুজিব, তিন পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল, দুই পুত্র বধু, ভাই শেখ নাসের ও ভাগ্নে শেখ মনিসহ পরিবারের সদস্যদের শাহাদাত তথা জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বিসিবি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সকাল থেকে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে বিসিবি কার্যালয়ে কোরআনখানি, মাদ্রাসা ও এতিমখানার ছাত্র ও দুঃস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ এবং বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।

ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বিসিবি প্রধান বলেন, ‘আসলে আজকের দিনে কথা বলাটা খুব কঠিন। আপানারা জানেন যে, অনেক হত্যাকাণ্ড হয়েছে। ২১ আগস্টের গ্রেনেড ছুঁড়ে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে আমার আম্মাও মারা গেছেন; কিন্তু আসলে ১৫ আগস্টের সাথে কোনো হত্যাকাণ্ডের তুলনা করার প্রশ্নই ওঠে না। ১৫ আগস্ট পৃথিবীর জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড। নৃশংসতার দিক দিয়ে বলেন কিংবা বর্বরতার দিক দিয়ে বলেন, ১৫ আগস্ট সবচেয়ে হৃদয় বিদারক, করুণ, মর্মান্তিক। ছোট রাসেল থেকে শুরু করে যারা নাকি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন- কাউকে তারা বাদ দেয়নি।’

পাপন যোগ করেন, ‘এমন জঘন্যতম ও নৃশংস হত্যাকাণ্ড আমার মনে হয় পৃথিবীতে আর কোথাও হয়নি। এটার সাথে কারো তুলনা হয় না, এটা নিয়ে আর বলার কিছু নেই।’

এটুকু বলার পর বিসিবি সভাপতি মানবাধিকার সংগঠনগুলোরও সমালোচনা করেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের ওপর এমন অমানবিক ও পৈশাচিক নির্যাতন এবং ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের পর মানবাধিকার সংগঠনগুলোর নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কথা উল্লেখ করার পাশাপাশি তাদের নীরবতার কারণও জানতে চান পাপন।

তার কথা, ‘কষ্ট আর দুঃখ একটাই লাগে যখন সারা পৃথিবীতে মানবাধিকার সংগঠনগুলো কত সোচ্চার; কিন্তু ওদেরকে তখন কোনো কিছু করতে দেখি নাই। তারা তখন কোথায় ছিল? সে জন্য ওই সময়টাই তারা কেন এতো নীরব ছিল? সেটারও একটা প্রশ্ন কিন্তু তাদের কাছে থেকে যায়।’

পাপন আরও জানান, ১৫ আগস্টের নৃশংসতার তথ্যচিত্র তিনি দেখতে পারেন না। তাই মুখে এমন কথা, ‘সত্যি কথা বলতে আমি গতকাল রাত থেকে টিভি দেখা বন্ধ করে দিয়েছি। আসলে এগুলো দেখাও যায় না, সহ্যই করা যায় না। যখনই এটা দেখতে যাই মনে হয় যে, এতো নৃশংসতা হতে পারে! কোনো মানুষ এমন হতে পারে!’

৭৫-এর হৃদয়বিদারক ঘটনার পর মানবাধিকার সংগঠনগুলো প্রতিবাদে সোচ্চার হলে হয়তো দৃশ্যপট ভিন্ন হতে পারতো। এমন ইঙ্গিত দিয়ে পাপন বলেন, ‘আমরা অনেক নাটক দেখছি; কিন্তু এসব নাটক আমাদেরকে কষ্টই দেয়, কোনো আশার আলো দেখায় না। একটা জিনিস আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, তখন যদি তারা (ইউরোপ-আমেরিকা) সোচ্চার হতো, বিন্দুমাত্র যদি সোচ্চার হতো তাহলে আজকে অনেক কিছুই হয়তো হতো না। তখন তারা নীরব থাকার জন্যই আজ-কাল অনেক কিছু হচ্ছে।’

‘আমি আশা করি মানুষ এখন বুঝতে শিখেছে, বাংলাদেশের মানুষ এখন বোকা না। এ হত্যার প্রতিবাদ তারা এখন অবশ্যই করবে, বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম।’

পরিশেষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের শহীদ হওয়া সকল সদস্যের আত্মার শান্তি কামনা করে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া কামনাও করেন বিসিবি সভাপতি।

(ওএস/এএস/আগস্ট ১৬, ২০২২)