গৌরীপুর প্রতিনিধি : জাল দিয়ে বিভিন্ন জলাশয়ে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে সেই টাকার একাংশ জমিয়ে আজ হ্যাচারি মালিক হয়েছেন যতীন্দ্র চন্দ্র বর্মণ (৬০)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার সদরের বাগানবাড়ি। 

রামগোপালপুরে জন্মগ্রহণকাীা যতীন্দ্র চন্দ্র বর্মণ কিশোর বয়স থেকে বিভিন্ন জলাশয়ে জাল দিয়ে মাছ ধরে হাটে বিক্রি করতেন। এই মাছ বিক্রির টাকার এক অংশ সংসারে খরচ করে বাকিটা জমাতেন মাটির ব্যাংকে। কয়েক বছর ঘুরতেই ব্যাংকে পাঁচশ টাকা জমা হয়। সেই টাকায় পুকুর ভাড়া নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন। বছর ঘুরতেই দেখেন লাভের মুখ। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। দীর্ঘ বত্রিশ বছর পাড়ি দিয়ে সেই জেলে এখন হ্যাচারি মালিক। ২০০৫ সালে গৌরীপুরের বাহাদুরপুর গ্রামে ২.৩৭ একর জমি ক্রয় করে তিনি নিজ প্রতিষ্ঠা করেছেন বর্মণ মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র।
যতীন্দ্র চন্দ্র বলেন, অভাবের তাড়নায় পড়াশোনা হয়নি। পেটের দায়ে ছোটবেলা থেকেই খাল-বিলে মাছ ধরেতাম। কাজ করেছি অন্যের হ্যাচারিতেও। সেখান থেকেই মাছ চাষের স্বপ্ন দেখা। শুরুটা কঠিন হলেও পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে সফল হয়েছি।

বর্মণ হ্যাচারিতে গিয়ে দেখা যায় বড় একটা পুকুরে মাছের খাবার ছিটাচ্ছেন তিনি। কয়েকজন কর্মচারী মিলে করছেন পুকুর পরিচর্যা। আশেপাশের এলাকার ১৫ জন কর্মচারী তার হ্যাচারিতে কাজ করেন।

ব্যক্তিগত ও ভাড়া মিলিয়ে মোট ২০টি পুকুরে মাছ চাষ করেন তিনি হ্যাচারিতে। এখানে রুই, কাতল, মৃগেল, সরপুঁটি, গ্রাসকার্প, সিলভারকার্প, কালিবাউশ সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা ও রেণু উৎপাদন করা হয়। স্থানীয় পাইকার ও মাছ চাষিদের চাহিদা মিটিয়ে এই হ্যাচারির পোনা ও রেণু সরবরাহ হয় সুনামগঞ্জ ও সিলেটে। তাই বছর শেষে ভাল লাভের মুখ দেখেন তিনি।

সফল মাছচাষি, গুণগত মান সম্পন্ন মাছের পোনা ও রেণু উৎপাদনের জন্য উপজেলায় এবং জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার পেয়েছেন যতীন্দ্র। জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার জন্য উপজেলা মৎস্য বিভাগ থেকে তার নাম পাঠানো হয়েছিল, কিন্ত পুরস্কার পাননি। মাছ চাষের পাশাপাশি সঙ্গীত ও যাত্রাশিল্পী হিসাবে সুনাম কুঁড়িয়েছেন যতীন্দ্র। মাছ চাষে বেকার যুবকদের উদ্বুদ্ধ করতে তিনি গান ও নাটিকা লিখেছেন। মৎস্য বিভাগ এগুলো বিভিন্ন সেমিনারে প্রচার করেছেন। ১৯৭৫ সালে তার গান শোনে মুগ্ধ হয়ে তৎকালীন জমিদার রুহিনী কান্ত লাহিড়ী চৌধুরী তাকে বাগানবাড়িতে একখন্ড জমি উপহার দেন। সেই জমিতে বাড়ি তুলে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন তিনি।

যতীন্দ্র চন্দ্র বলেন, মাছ চাষে সম্মান ও সমৃদ্ধি পেয়েছি। একসময় গ্রামীণ সংস্কৃতিতে মাছ বেচা অসম্মানের কাজ হিসাবে বিবেচনা করা হতো। এখন গ্রামের ধনী মানুষরাও বুক ফুলিয়ে মাছ বেচতে বাজারে কিংবা আড়তে যান।

সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ভাপ্রাপ্ত) মোজাম্মেল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, যতীন্দ্র দা একজন আদর্শ মাছচাষি। পরিশ্রম করলে যে সফল হওয়া যায় সেটা প্রমাণ করেছেন তিনি। উনাকে দেখে বেকার যুবকরা মাছ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

(এস/এসপি/আগস্ট ২২, ২০২২)