প্রবীর সিকদার : রাজাকারদের একাত্তরের ইতিবৃত্ত লেখার অপরাধে ২০০১ সালে নৃশংস হামলায় আমি যখন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছিলাম, তখন দেশের একজন বিখ্যাত কবি বলেছিলেন, 'এই দেশে কি আর রাজাকারদের বিচার সম্ভব ! এরা খামাখা এই সব লিখে লিখে আমাদের অস্তিত্বকেই বিপন্ন করে তুলছে । যতো সব পাগলের দল !' মজার বিষয়, এই দেশে রাজাকারদের বিচার হয়েছে, হচ্ছে। ওই বিচার প্রক্রিয়ায় আগাম রসদদাতাদের একজন হিসেবে বোমা হামলায় একটি পা হারানো এই আমাকে কে কতটা মনে রেখেছেন কিংবা আমার প্রতি দায়িত্ব পালন করেছেন, সেই কথা নাই বা তুললাম। রাজাকারদের ইতিবৃত্ত লেখায় আমার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করা সেই কবি ঠিকই সরকারের একটি উচ্চ পদ দখল করে নিয়েছেন। দখল কেনই বা করবেন না ! ঝুঁকির চেয়ে তেলের কার্যকারিতা ঢের বেশি!

চার দলীয় জোট সরকারের দুঃশাসন ও ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী সময়ের নানা প্রসঙ্গ নিয়ে আমার কিছু লেখা কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছিল। ওই সময় আর্মি ব্যাকড তত্বাবধায়ক সরকার বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করলে আমি প্রতিদিন শেখ হাসিনার মুক্তির দাবিতে পোস্টকার্ড ক্যাম্পেইন করেছি। দশ হাজার পোস্টকার্ডের এই ক্যাম্পেইন চলেছে শেখ হাসিনার মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত। এই কাজের জন্য অনেকেই আমাকে পাগল বলেছে। শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে 'আমার বোন শেখ হাসিনা' শিরোনামে একটি বই প্রকাশের উদ্যোগ নেই। বইটি মূলত পত্রিকায় প্রকাশ পাওয়া আমার বেশ কয়েকটি লেখার সংকলন। পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করে আমি ছুটে যাই আওয়ামীলীগ ঘরানার এবং শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন দাবিদার এক বিখ্যাত প্রকাশকের কাছে। আমার একটি বইয়ের প্রকাশক হিসেবেই তিনি আমার পূর্ব পরিচিত। পাণ্ডুলিপির ওপর 'আমার বোন শেখ হাসিনা' লেখা দেখেই উনি বিরক্তি প্রকাশ করে বললেন, 'এই সময়ে এটা কোনও বই হলো ! কোন পাগল এই বই বের করবে ! ' আমি সেদিন পাণ্ডুলিপি নিয়ে ফেরত এসেছিলাম। সঙ্গে এনেছিলাম বই প্রকাশের জেদও। ' আমার বোন শেখ হাসিনা' ঠিকই প্রকাশ করেছিলাম এবং ছড়িয়ে দিয়েছিলাম সারা দেশে। বাংলা একাডেমীর বই মেলায় বেশ ঝুঁকি নিয়েই বইটির মোড়ক উন্মোচন করেছিলেন প্রখ্যাত ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন। সময় গড়িয়েছে অনেক। আমার খোঁজ কে রাখে সেই কথা না হয় থাকুক এখন। তবে সেই বিখ্যাত প্রকাশক আওয়ামী প্রভাব বলয় কাজে লাগিয়ে বেশ দাপটের সাথেই প্রকাশনা ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করে যাচ্ছেন।