মোহাম্মদ ইলিয়াস


মানুষ তার নিজস্ব ভাষার মাধ্যমে জ্ঞানের রাজ্যে বিচরণ করে কল্যাণময় বিষয়গুলো আহরণ করে যে চেতনার উন্মেষ ঘটায় তা-ই তার সংস্কৃতি। সংস্কৃতি একটি জীবন চেতনা। নিজেকে সভ্য ও সুন্দর করে বহির্প্রকাশ ঘটানোই হচ্ছে সংস্কৃতি। এটা মানুষের এমন একটা আনন্দের বাহন, যার মূল আশ্রয় সৌন্দর্য ও প্রেম । তরুণরা কতটা সংস্কৃতিমনা সেটি তার আচরণে, পোশাকেই ফুটে ওঠে। অন্যদিকে আপন সংস্কৃতিবোধসম্পন্ন মানুষ সঠিক আচরণ জানে। সংস্কৃতির আশ্রয় থেকে বিচ্যুত হলেই সংস্কৃতির অপমৃত্যু ঘটে। তখন সংস্কৃতি বোধসম্পন্ন ব্যক্তি নিজের সংস্কৃতিকে পদদলিত করে। অন্যের সংস্কৃতি হৃদয়ে ধারণ করে। মানবিক মূল্যবোধ, সুন্দরের পথ, কল্যাণ্যের পথ তার ভাল লাগবে না। সংস্কৃতি আমাদের সুস্থ ও হাসি-খুশি রাখে। তবে সংস্কৃতির বিকৃত রূপই হচ্ছে অপসংস্কৃতি। সংস্কৃতি হচ্ছে দীর্ঘদিনের লালিত সাধনার ফসল। সেখান থেকে বিচ্যুত হলেই অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটে। তরুণরা তখন জঙ্গী, গ্যাংস্টার, মস্তান, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী হয়ে যায়। এটা তখন বিবেককে ধ্বংস করে দেয় এবং মূল্যবোধের মৃত্যু ঘটায়। এসব কিছু আমাদের তরুণদের মধ্যে থেকে বর্জন করতে হবে। সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা করতে হবে। এ জন্য পাড়া-মহল্লায় পাঠাগার স্থাপন করা যেতে পারে। সেখানে দেশ-বিদেশের ভাল মানের বই, ম্যাগাজিন সংগ্রহ করতে হবে। জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে হবে। অলস মস্তিষ্কটাকে সুস্থ রাখতে হবে ভাল কাজের মধ্যে। এ জন্য পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে পাঠাগারে রচনা প্রতিযোগিতা, বইপাঠ প্রতিযোগিতা, সুন্দর হাতের লেখা প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে হবে। বিশেষ দিবসে কবিতা আবৃত্তি, দেশাত্মকবোধক গান, কৌতুক, গল্প লেখা প্রতিযোগিতা দিয়ে উৎসাহ দিতে হবে। এসব আয়োজন করলে নিশ্চয় তরুণরা এসবের মধ্যে ডুবে থাকবে। অপকর্ম করার সুযোগ থাকবে না। সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা ও অপসংস্কৃতি বর্জন করতে হবে। এ জন্য শুধু প্রশাসন নয়, সমাজ ও রাষ্ট্রের অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে। সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। মনের ভেতরের বাজে চিন্তা দূর করে মানবিক বোধের জাগরণ করতে হবে। আর এই মানবিকবোধ দ্বারাই আমরা সব অশুভকে নাশ করে শুভ শক্তির উদ্ভব ঘটাতে পারব। এর ফলে সমাজ ও রাষ্ট্রের কালো আর্বজনা দূর হবে। আমাদের আগামী দিনের দেশ পরিচালনাকারীরা সুন্দর ও সুস্থ থাকবে। দেশ ও দশের সেবায় নিয়োজিত থাকবে। সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার আলোয় সাদা হোক সকল কালো। সুস্থ সংস্কৃতি তরুণ প্রজন্মের অহঙ্কার।

সংস্কৃতি আসলে একটা দৃষ্টিভঙ্গীর ব্যাপার, একটি জীবনবোধ বিনির্মাণের কলাকৌশল। এটি মানুষের জীবনের একটি শৈল্পিক প্রকাশ, সমাজ জীবনের স্বচ্ছ দর্পণ। এ সংস্কৃতির দর্পণে তাকালে কোন সমাজের মানুষের জীবনাচার, জীবনবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গীর প্রতিচ্ছবি দেখা যায়। অন্য কথায়, সমাজ মানুষের জীবনাচার, দৃষ্টিভঙ্গী আর বোধ-বিবেচনা থেকেই সে সমাজের সংস্কৃতি জন্মলাভ করে। তবে সংস্কৃতি এমন কোন জিনিস নয় যে, এটি একবার ছাচে তৈরি হবে, তার কোন পরিবর্তন করা যাবে না।

বরং সমাজ ও জীবনের পরিবর্তনর এবং সময়ের ধারায় এ সংস্কৃতি পরিআতিত হতে পারে। এমন কি অন্য কোন সংস্কৃতির সংস্পশে এসে পারস্পরিক বিনিময়ের মাধ্যমে নতুন নতুন উপাদান সংগ্রহ করে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারে। এমন কি অন্য কোন সংস্কৃতির সংস্পশে এসে পারস্পরিক বিনিময়ের মাধ্যমে নতুন নতুন উপাদান সংগ্রহ করে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারে। অন্যদিকে ভিনদেশী সংস্কৃতির তোড়ে নিজের সংস্কৃতির অস্তিত্ব হারিয়েও ফেলতে পারে। আর দুভাগা পরিণতি যে সমাজের হয় সে সমাজেই সাংস্কৃতিক বন্ধাত্বের জন্ম হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের সমাজে ঠিক তাই ঘটেছে।

সংস্কৃতি যেমন জীবনকে সুন্দরের পথ দেখায় আর অপসংস্কৃতি মানুষকে অসুন্দরের পথে নিয়ে যায়, অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়। অপসংস্কৃতি জাতীয় মূল্যবোধকে গলাটিপ হত্যা করে, বিবেকের দরজায় কড়া লাগায়। অপসংস্কৃতি মানুষকে তাঁর মা, মাটি ও দেশের প্রতি ভালবাসা থেকে দূরে সরিয়ে নেয়। মা, মাটি ও দেশকে স্বাধীনতা করতে শেখায়। এ অপসংস্কৃতির চকম মরীচিকার মত। এর চমক মানুষকে বিবেক বর্জিত পশুতে পরিণত করে।

তরুনরা আগামী দিনের ভবিষ্যত । দেশ গঠনে তারাই রাখতে পারবে অগ্রনী ভুমিকা। তাই তাদের নৈতিক চরিত্র উন্নত করার জন্য বাবা মা, শিক্ষক, এবং সংস্কৃতি কর্মীদের প্রধান ভূমিকা রাখতে হবে। বাবা মায়েদের উচিত সন্তানকে ভালো লেখা পড়ার পাশাপাশি নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা দেয়া। যারা নাট্যকার, চলচিত্রকার,সাহিত্যিক তারা তাদের উচিত নাটক, চলচিত্র এবং সাহিত্য নির্মানের প্রধান উপজিব্য বিষয়গুলো হওয়া উচিত সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা ও দেশপ্রেম। নারী পুরুষের অবাধ প্রেম ভালবাসাটাকে হাইলাইটস না করে সমাজের যে নানা রকম অসংগতি গুলো আছে সেগুলোকে প্রধান উপজিব্য বিষয় হিসাবে নেয়া এবং কিভাবে বাবা মাকে সম্মান দিতে, বিশ্বের বুকে বাংলাদশ কে অনুকরণীয় ও অনন্য উচ্চতায় উপস্থাপন করা। সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা ; সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক ও বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর।