তারেক হাবিব, হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জ মাতৃমঙ্গল (মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র) হাসপাতাল থেকে সুর্যমূখী জেনারেল হাসপাতালে রোগী পাঠিয়ে প্রতারণা করে টাকা আত্মসাতের ঘটনার অভিযুক্ত ডাক্তার আকলিমা তাহেরী কলি ও পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শীকা নাদিরা বেগমকে তলব করেছেন তদন্ত কমিটি। ভুক্তভোগী ও অভিযোগকারী মোস্তাফিজুর রহমান উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে জানান, আগামীকাল রবিবার সকাল সাড়ে ১১ টায় হবিগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিসে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস নিয়ে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ সময় ডাঃ আকলিমা তাহেরী কলি ও পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শীকা নাদিরা বেগম উপস্থিত থাকবেন। 

হবিগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহ আলম উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে জানান, আগামীকাল ভুক্তভোগী রোগী ও অভিযুক্ত ডাক্তারদের সাক্ষাৎকার নেয়া হবে। একজন রোগী সরকারী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে কিভাবে প্রাইভেট ক্লিনিকে যায় এটা অবশ্যই চিন্তার বিষয়।

এরআগে, হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ নুরুল হকের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি সরেজমিনে সূর্যমূখী জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। এ সময় অভিযোগকারী ভুক্তভোগী মোস্তাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

ভুক্তভোগী উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে জানান, গর্ভবতী স্ত্রীকে নিয়ে হবিগঞ্জ মাতৃমঙ্গল (মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শীকা নাদিরা বেগম ও ডাক্তার আকলিমা তাহেরী কলি ভুক্তভোগীদের নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে হবিগঞ্জ শহরের শায়েস্তানগর এলাকার সূর্যমূখী জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে অদক্ষ ভুয়া ডাক্তারের মাধ্যমে সিজার করিয়ে মোটা অক্ষের টাকা আত্মসাত করেন। পরে সিজারে কন্যা সন্তান জন্ম নিলেও কয়েকদিন পর অপারেশনের জায়গা ফুলে ব্যাথা শুরু হয়। সমস্যাটি তীব্র আকার ধারণ করলে শাকিরা ও তার স্বামী সার্জারী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ একেএম আজাদের দারস্থ হলে সেলাইয়ের ভেতর থেকে সিরিঞ্জের মাধ্যমে বিশাল পরিমাণের জমাট বাধা রক্ত ও পুজঁ বের করেন। রোগীকে বাচাঁতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া দ্যা ল্যাব এইড হাসপাতালে পুনরায় অপারেশন করা হয় ভুক্তভোগী শাকিরাকে। এ ঘটনায় অসহায় অবস্থায় লক্ষাধিক টাকা খরচ করেও জীবন শঙ্কটে আছেন বলেন জানান ভুক্তভোগী।

এদিকে, বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শীকা নাদিরা বেগমের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। কেউ কেউ বলছেন, নাদিরা বেগম দীর্ঘদিন ধরে হবিগঞ্জ মাতৃমঙ্গল (মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র) হাসপাতালে কাজ করার সুবাদে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। কৌশলে প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালে রোগী পাঠিয়ে মোটা অঙ্কের কমিশন হাতিয়ে নিয়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠেছেন। হবিগঞ্জ শহরের বিভিন্ন জায়গায় নামে-বেনামে ক্রয় করেছেন জায়গা-জমি। বার বার বদলী হলেও নানা অযুহাতে একই জায়গায় থাকার চেষ্টা করছেন। সহকর্মী ও সেবা প্রত্যাশীদের অসধাচরণ করায় এর আগে তাকে স্টান্ড রিলিজ করে সুনামগঞ্জ বদলী করা হয়েছে। কিন্তু তিনি সেখানে অফিস না করে ভূয়া তথ্য উপস্থাপন করে বেতন-ভাতা আত্মসাত করেছেন। সর্বশেষ চুনারুঘাট উপজেলায় বদলী হয়েও বোড়তি কমিশন লাভের আশায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন হবিগঞ্জ মাতৃমঙ্গল (মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র) হাসপাতালে। তার অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলেই নেতা ও গুন্ডা দিয়ে শায়েস্তাকরার হুমকি দিয়ে থাকেন তিনি।

(টিএইচ/এসপি/আগস্ট ২৭, ২০২২)