দিলীপ চন্দ, ফরিদপুর : ফরিদপুর জেলা পুলিশের উদ্যোগে প্রেস ব্রিফিং আজ রবিবার ২টায় পুলিশ সুপারের কার্যালয় অনুষ্ঠিত হয়। এতে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ‌ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ শাহজাহান পিপিএম ‌। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল পাশা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন সরকার। প্রেস ব্রিফিং এ ফরিদপুরের বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন ।

প্রেস ব্রিফিং এ জানানো হয়, গত ২৫ আগস্ট বিকেল ৫ ঘটিকায় কানাইপুরের ফরিদপুর- খুলনা মহাসড়কে রামদা, ছোড়া, লাটিসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র-সজ্জিত হয়ে মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়ানো বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রচারিত হলে পুলিশের নজরে আসে এবং নবাগত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাজাহান পিপিএম সেবা এর নির্দেশে পুলিশ তৎক্ষণাৎ এ বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করে। অনুসন্ধানে জানা যায় সাবেক এসপি আলিমুজ্জামান চলে যাওয়ার সাথে সাথে কানাইপুর এলাকায় সন্ত্রাসী খাজা বাহিনীর সশস্ত্র মহড়া শিরোনামে বিভিন্ন পোস্ট ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলেও বিষয়টি ছিল কানাইপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে সৃষ্ট। কানাইপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও থানা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মিলে একটি গ্রুপ ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম আসলাম এবং ছাত্রলীগের কর্মী ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের পদপ্রার্থী সোহাগ মিলে অপর একটি গ্রুপের বিরোধকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ অন্তঃকোন্দল ও শোডাউন। শোডাউনের মাধ্যমে আসলাম ও সোহাগকে ভয় দেখানোর জন্য থানা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সৌরভ স্থানীয় সন্ত্রাসী খাজাগ্রুপের দিদার, শহীদ, সোহেলসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজনকে নিয়ে এসে আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে মহাসড়কে দেশীয় অস্ত্র সজ্জিত হয়ে শোডাউন করে।

এই শোডাউন এর উদ্দেশ্য ছিল কানাইপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ও ওয়ার্ড ছাত্রলীগের পদপ্রার্থী সোহাগকে আক্রমণ করা, তাদের ভয়-ভীতি দেখানো এবং আতঙ্ক সৃষ্টি করা। পুলিশী তদন্ত চলাকালে কানাইপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি এ.এফ.এম আসলাম সন্ত্রাসী খায়রুজ্জামান খাজাসহ মোট এজাহারনামীয় ১৩ জন ও অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জনের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে দলবদ্ধ হইয়ে অবৈধ শক্তির মহড়া প্রদর্শন করা জনমনে ভয়-ভীতি, ত্রাস ও অরাজকতা সৃষ্টি করা তথা মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও বাড়িঘর ভাংচুর করার বিষয়ে কোতোয়ালী থানায় বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। কোতয়ালী থানার মামলা নং- ৭২, তারিখ-২৮/০৮/২০২২ ধারা- আইন-শৃংখলা বিঘ্নকারী আপরাধ (দ্রুত বিচার)আইন, ২০০২ এর ৪/৫ এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মাহাবুব করিম। ওয়ার্ড ছাত্রলীগের কমিটি দেওয়াকে কেন্দ্র করে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও থানা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি গ্রুপের সাথে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ও ছাত্রলীগের পদ প্রত্যাশী সোহাগ গ্রুপের বিরোধ প্রকট আকার ধারণ করে। হুমকি ধামকি এবং গালিগালাজ চরম আকার রূপ নেয় যার ফলশ্রুতিতে শোডাউনের মাধ্যমে অপর গ্রুপকে ভয় দেখানোর জন্য রাস্তায় দেশীয় অস্ত্র সহ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে শোডাউন দেখানোর সিদ্ধান্ত নেয় সাব্বিরের নেতৃত্বাধীন গ্রুপ। চাঞ্চল্যকর বিষয়টির তদন্তে ফেসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজ সমূহ সংগ্রহ করা হয়। ভিডিও ফুটেজ দেখে সুনির্দিষ্ট ভাবে পাঁচ জন আসামিকে সনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়। ভিডিও ফুটেজ দেখে মিছিলের অগ্রভাগে থাকা রামদা বা ছেনদা হাতের ০৩ জন সাগর বেপারী, নাজমুল, রাকিব এবং লোহার রড হাতে থাকা তুষারকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া মিছিলের অন্যতম আয়োজক ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির ও তুষারসহ মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় কালে নবাগত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাজাহান পিপিএম প্রদত্ত সন্ত্রাসের প্রতি জিরো টলারেন্স অবস্থানকে সমুন্নত রেখে এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য কঠোর অভিযান চলমান আছে । ফরিদপুর শহরের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য কাউকে ন্যূনতম প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। ফরিদপুর শহরে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সকল অভিযান চলমান থাকবে এবং আরো বেগবান করা হবে। সন্ত্রাসীদের ফরিদপুরের মাটিতে কোন জায়গা দেয়া হবে না।

(ডিসি/এএস/আগস্ট ২৮, ২০২২)